ফেনীর পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকারের বিরুদ্ধেও সোনাগাজী থানার দুই উপপরিদর্শককে (এসআই) বরখাস্ত করা হয়েছে ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় । এছাড়া এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
শনিবার পুলিশ সদরদপ্তরের তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এসআই ইউসুফকে খুলনা রেঞ্জে এবং এসআই ইকবাল আহাম্মদকে খাগড়াছড়িতে সংযুক্ত করা হয়েছে।
সন্ধ্যায় পুলিশ সদরদপ্তরের জনসংযোগ গণমাধ্যম শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক মীর সোহেল রানা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নুসরাত হত্যায় তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
‘আর এসআই ইউসুফকে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ে এবং ইকবাল আহাম্মদকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় সংযুক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। সাময়িক বরখাস্ত করে তাদের দূরবর্তী ইউনিটে সংযুক্ত করা হয়েছে। এটা কোনো বদলি নয়, এটি শাস্তির প্রক্রিয়ার অংশ। সংযুক্তকালে তাদের কোনো দায়িত্ব দেওয়া হবে না।’
মীর সোহেল রানা বলেন, ‘তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকারকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে একটি ইউনিটে সংযুক্ত করা হবে। তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন।’
গত ৬ এপ্রিল নুসরাত জাহানকে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করে মাদ্রাসার কয়েকজন ছাত্রছাত্রী। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলে নিতে রাজি না হওয়ায় তারা নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেন। এ ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া এবং মামলা ভিন্ন খাতে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। এমনকি জেলা পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম অভিযুক্ত ওসিকে রক্ষায় ঘটনা সম্পর্কে ভুল তথ্য পাঠান পুলিশ সদর দপ্তরে।
বিষয়গুলো নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিস্তর সমালোচনা হয়। এর মধ্যে নুসরাতের পরিবারের দাবির মুখে প্রথমে সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে বদলি করা হয়। পরে এ ঘটনায় পুলিশের দায়দায়িত্ব খতিয়ে দেখতে ১৩ এপ্রিল পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এস এম রুহুল আমিনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ৩০ এপ্রিল কমিটি তাদের প্রতিবেদন পুলিশের আইজিপির কাছে জমা দেয়।
প্রতিবেদনে সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম ও এসআই ইকবালকে সাময়িক বরখাস্ত এবং তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা ও এসপি জাহাঙ্গীর আলম সরকার ও এসআই আবু ইউসুফের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা ও তাদের নন অপারেশনাল ইউনিটে বদলির সুপারিশ করা হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, অভিযুক্ত দুই এসআইয়ের একজন ইকবালকে ঘটনার পর ফুলগাজী থানায় বদলি করা হয়। অন্য এসআই আবু ইউসুফ এখনো সোনাগাজী থানায় দায়িত্বরত। পুলিশ সুপারও নিজ জেলায় বহাল আছেন।
পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন ও এসআই ইকবাল হোসেন নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে প্রচারের কাজে একে অন্যকে সহযোগিতা করেন। পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম সরকার সকাল ১০টায় নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার খবর পেয়েও ঘটনাস্থলে যাননি। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে রওনা দেন। পরে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির নির্দেশে মাঝপথ থেকে ফিরে আসেন।
