সমাজে আলোকিত, সমাজ সচেতন ও বিবেকমান মানুষের অভাব হলেই ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতা হানা দেয় সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন। আর এতে ক্ষতবিক্ষত হয় আগামী প্রজন্ম। আজকে যারা শিক্ষার্থী, তাদেরকে সমাজ সচেতন হওয়ার পাশাপাশি প্রগতিশীল, বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চন্দনাইশ উপজেলার হাশিমপুর এম এ কে ইউ উচ্চ বিদ্যালয়ের দুদিনব্যাপী সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের সমাপনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক এফ এম দিদারুল আলম। মন্ত্রী বলেন, বর্তমানের শিক্ষার্থীরা তাদের প্রকৃত প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাচ্ছে না। এখন শিক্ষার্থীরা শুধু জিপিএ–৫ এর ওপর জোর দিয়েই তাদের লেখাপড়া এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এতে দেশে শিক্ষিতের হার বাড়লেও সংস্কৃতি, ক্রীড়া, গবেষণাসহ নানা ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে পড়ছে। পিছিয়ে পড়ার কারণে হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছে। যার ফলে শিক্ষার্থীরা মাদক, জঙ্গিবাদসহ বিভিন্ন সামাজিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ছে।

জিপিএ–৫ এর নির্যাতন থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিয়ে তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। সফল ও সৃজনশীল কয়েকজন তরুণ ও প্রবীণের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, তারা কি কখনো জিপিএ–৫ এর পেছনে দৌঁড়েছে। এখন কোনো ছাত্রকে কোথায়, কোন সাবজেক্টে পড়ে জিজ্ঞেস করলে বেশিরভাগই উত্তর দেয় বিবিএ ক্লাসের। ভাবটি এমন যে, পৃথিবীতে যেন বিবিএ ছাড়া পড়ার জন্য আর কোনো বিষয় নেই। এর জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়ী বাবা–মা। তাদের ধারণা, ছেলে লেখাপড়া করলেই একটা চাকরি পেয়ে যাবে আর সংসারের হাল ধরবে।

তিনি বলেন, কঠিন নিয়মের মধ্যে লেখাপড়া করে জিপিএ–৫ পাওয়াটা একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু পুঁথিগত বিদ্যা যে জীবন গঠনের জন্য যথেষ্ট নয়, সেটা অভিভাবকরা যেমন মানতে চান না, তেমনি শিক্ষকরাও মানতে চান না। ফলে সমাজে শিক্ষিতের হার বাড়ছে, কিন্তু জ্ঞানীর সংখ্যা তেমন বাড়ছে না। আমরা সবাই বলি, জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়ে সমাজ গড়ি। সমাজে যদি আলোকিত মানুষ না থাকেন, রুচিবান মানুষ না থাকেন, বিবেকবান মানুষ না থাকেন, তাহলে ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক শক্তি আমাদের সন্তানদের মস্তিস্কে হানা দেবে এবং তারা জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট হবে।

প্রধান আলোচক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আগামী প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের বর্তমান সময়ের উপযোগী মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে কর্মমুখী ও বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই কারণে বর্তমান সরকার শিক্ষাব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতি বছর বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়ে যাচ্ছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কবি, সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়নে আটকে থাকলে চলবে না। দেশের মানব সম্পদের উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার উন্নয়নের কথাও ভাবতে হবে। বর্তমানে গুণাবলী সম্পন্ন মানুষের সবচেয়ে বেশি অভাব রয়েছে। আগেকার দিনের শিক্ষকরা যেমন ছিলেন, এখনকার শিক্ষকরা তেমন নন। আমাদের ভাবা দরকার, আমরা কীভাবে মানুষ হিসেবে আরো উন্নত হব।

তিনি বলেন, একটি স্কুলের বড় কাজ হচ্ছে সেই স্কুলের শিক্ষার্থীদের মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। কিন্তু ঘটনাচক্রে আমরা জোর দিয়ে যাচ্ছি পরীক্ষার ফলাফলের ওপর। বছরজুড়ে নানা রকম কার্যক্রম গ্রহণ করে একটি বিদ্যালয়কে কর্মচঞ্চল রাখা যায়।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন অ্যাডভোকেট এস এম শওকত হোসেন চৌধুরী, প্রধান শিক্ষক এম মোস্তাক আহমদ ফারুকী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পটিয়া সার্কেল) মো. জসিম উদ্দীন খান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী সুপ্রিম কোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাসুদ আলম চৌধুরী।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031