এই প্রজন্মের সেরা পোলিশ ফুটবলার তিনিই। পোল্যান্ড দলের অধিনায়ক। জাতীয় দলের হয়ে সর্বাধিক গোলের (৫২) রেকর্ড তাঁরই দখলে। বায়ার্ন মিউনিখের সামনের অন্যতম ভরসা রবার্ট লিওয়ানডস্কি। গত ইউরোতে তাঁর নেতৃত্বে শেষ আটে পৌঁছেছিল পোল্যান্ড। এবার রাশিয়াতেও গোলের জন্য কোচ অ্যাডাম নাওয়ালকা তাকিয়ে থাকবেন ২৯ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকারের দিকে। বিশ্বকাপের আগে এক সাক্ষাৎকারে রবার্ট লিওয়ানডস্কি বলেছেন অনেক কথা।
প্রশ্ন:আসন্ন বিশ্বকাপে একাধিক দলের মতো পোল্যান্ডও একজন ফুটবলারের উপর নির্ভরশীল। আপনার কী মত?
রবার্ট লিওয়ানডস্কি: আমি তা মানি না। ফুটবল এগারো বনাম এগারোর খেলা। কোনও একজন ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে গোলের রাস্তা খুলে দিতে পারেন। কিন্তু তা ধরে রাখার দায়িত্ব প্রত্যেকের। বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে গ্রুপ-ই’র শীর্ষে থেকে আমরা রাশিয়ার টিকিট জোগাড় করেছি। আমাদের গ্রুপে ডেনমার্ক ও রোমানিয়ার মতো কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। কোনও একজনের মুখাপেক্ষী হলে দশটির মধ্যে আটটি ম্যাচ জিততে পারত না পোল্যান্ড।
প্রশ্ন: কিন্তু বাছাই পর্বে পোল্যান্ডের ২৮টি গোলের মধ্যে আপনি একাই ১৬টি করেছেন। বাছাই পর্বে সর্বাধিক গোলদাতার নাম রবার্ট লিওয়ানডস্কি। এরপরেও কি বলবেন যে পোল্যান্ড আপনার উপর বিশেষ নির্ভরশীল নয়?
রবার্ট লিওয়ানডস্কি: এটা ঠিক যে বাছাই পর্বে আমি প্রচুর গোল করেছি। কিন্তু তার নেপথ্যে সহ-ফুটবলারদের অবদান রয়েছে। গোলের জন্য তৈরি মুভমেন্টে একাধিক ফুটবলার থাকে। গোলের পাস না পেলে আমি লক্ষ্যভেদ করতে পারতাম না। আমি হয়তো বল গোলে ঠেলেছি, কিন্তু বাকিটা করেছে সহ-ফুটবলাররাই। টিম ওয়ার্ক ছাড়া সফল হওয়া যায় না। বাছাই পর্বের মতো বিশ্বকাপেও আমরা দলগত সংহতির উপর নির্ভরশীল।
প্রশ্ন: ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম দশের মধ্যে থেকে আপনারা বিশ্বকাপ খেলতে নামবেন। তাই কি দেশবাসীর প্রত্যাশা কিছুটা হলেও বেশি থাকবে?
রবার্ট লিওয়ানডস্কি: গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলছে পোল্যান্ড। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম দশের মধ্যে থাকা তারই পুরস্কার। বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে আমরা মাত্র একটি ম্যাচে হেরেছি। এছাড়া গত ইউরোতে শেষ আটে উঠেছিলাম। সেবার চ্যাম্পিয়ন পর্তুগালের কাছে টাই-ব্রেকারে হারতে হয়েছিল আমাদের। তাই বিশ্বকাপে দেশবাসীর প্রত্যাশা তো থাকবেই। আমরাও চাই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে। কোচ অ্যাডাম নাওয়ালকা নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখেই এগিয়ে চলেছেন।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপে গ্রুপ-এইচ’এ পোল্যান্ডের সঙ্গে রয়েছে কলম্বিয়া, সেনেগাল ও জাপান। তাই কি নক-আউট পর্বে ওঠা আপনাদের পক্ষে সহজ হবে?
রবার্ট লিওয়ানডস্কি: ফুটবলপ্রেমীরা এরকমই মনে করছেন। গ্রুপের বাধা সহজে টপকাতে পারলে আমাদেরও ভালো লাগবে। তবে নক-আউট পর্বে ওঠা সহজ নয়। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাকিদের থেকে এগিয়ে থাকা মানেই আমরা গ্রুপের সব ম্যাচ জিতব, এমনটা ভেবে নেওয়া ঠিক নয়। ২০০২ সালে বিশ্বকাপে প্রথম অংশগ্রহণ করে সেনেগাল সবাইকে চমকে দিয়ে শেষ আটে উঠেছিল। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে জাপান অনেক পিছনে থাকলেও ওদের খাটো করে দেখলে ভুল হবে। বিশ্বের যে কোনও দলকে ওরা বিপদে ফেলতে পারে। ফুটবল কাগজে-কলমে হয় না। যে দিন যে দল ভালো খেলবে তারাই জিতবে।
প্রশ্ন: গ্রুপ পর্বে রয়েছে কলম্বিয়া। ওদের প্রধান তারকা হামেস রডরিগেজ আপনার সঙ্গেই বায়ার্ন মিউনিখে খেলেন। এবারের বিশ্বকাপে কলম্বিয়া এবং হামেস সম্পর্কে আপনার কী ধারণা?
রবার্ট লিওয়ানডস্কি: গত বিশ্বকাপেই জাত চিনিয়েছিল হামেস। বড় মঞ্চে ওর মতো দুরন্ত গোল করতে পারলে আমিও গর্বিত হব। মনে আছে নিশ্চয়ই, চার বছর আগে কলম্বিয়া বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠেছিল। সেবার আয়োজক ব্রাজিলে কাছে হার মানে ওরা। এবারও কলম্বিয়া যথেষ্ট কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই ২৪ জুন কাজানে আয়োজিত পোল্যান্ড-কলম্বিয়া ম্যাচ আকর্ষণীয় হবে বলেই মনে হয়। দু’দলের ফুটবলাররা সেরা পারফরম্যান্স উজাড় করে দিতে তৈরি থাকবে। পাশাপাশি দর্শকরাও উত্তেজক একটি ম্যাচ দেখতে পাবেন বলে আশা রাখি।
প্রশ্ন: ২০০৬ সালের পর এবারই পোল্যান্ড বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলছে। তাই কি আপনারা বাড়তি উদ্দীপ্ত?
রবার্ট লিওয়ানডস্কি: গত দু’টি বিশ্বকাপে আমরা প্রতিনিধিত্ব করতে পারিনি। কিন্তু বাছাই পর্বে চেষ্টার কোনও ত্রুটি ছিল না। ফুটবল খেলিয়ে দেশগুলির প্রত্যেকে চায় বিশ্বকাপের মূলপর্বে নিজেদের দেখতে। পোল্যান্ডও এর ব্যতিক্রম নয়। কারণ, বিশ্বকাপের মতো সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার স্বপ্ন নিয়েই আমরা বড় হয়েছি। তাই বারো বছর পর সেই স্বপ্ন সার্থক হওয়ায় আমাদের মধ্যে বাড়তি উদ্দীপনা তো রয়েইছে।
প্রশ্ন: আপনাদের কোচ বলেছেন, শেষ আটে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। আপনিও কি একই কথা বলবেন?
রবার্ট লিওয়ানডস্কি: আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য, গ্রুপ পর্বের চ্যালেঞ্জ টপকে নক-আউট পর্বে উন্নীত হওয়া। তারপর অনেক কিছুই ঘটতে পারে। নক-আউট ম্যাচগুলির ফল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা উচিত নয়। তবে এখন আমরা শুধুমাত্র গ্রুপের তিনটি ম্যাচ নিয়েই ভাবছি।
প্রশ্ন: মৌসুমের শেষ পর্বে বায়ার্ন মিউনিখের জার্সিতে আপনার পারফরম্যান্স আশাপ্রদ ছিল না। তাই সমালোচনার তির সামলাতে হয়েছে। বিশ্বকাপে ফর্মের চূড়ায় থাকতে পারবেন বলে কতটা আত্মবিশ্বাসী?
রবার্ট লিওয়ানডস্কি: এই মৌসুমে ক্লাবের হয়ে আমি ৪০টি’রও বেশি গোল করেছি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে গোল না পাওয়ায় অনেকে অনেক কথা বলছেন। যা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু রিয়ালের বিরুদ্ধে আমরা ভালো খেলেছিলাম। প্রাপ্ত সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ম্যাচের ফল অন্যরকম হতেই পারত। এটাই ফুটবল। অনেক সময় মাঠে সেরাটা মেলে ধরেও তার ফল পাওয়া যায় না। তবে বিশ্বকাপ সম্পূর্ণ আলাদা মঞ্চ। প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ কাজে লাগাতে আমি তৈরি। আত্মবিশ্বাসীও বটে।
