এবার ঈদের জামাত হয়েছে সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জমায়েত গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে  দিনাজপুরের। আয়োজকরা দাবি করছেন, এবারের জামাতে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ অংশ নিয়েছে। দেশের আর কোথাও এত বড় জামাত হয়নি।

বাংলাদেশে বরাবর দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত হয় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ময়দানে। প্রায় ২০০ বছর আগেই সেখানে জামাতে লক্ষাধিক মানুষ অংশ নেয়। এরপর থেকে প্রতি বছর বাড়ছে মুসল্লির সংখ্যা।

শোলাকিয়াকে ছাড়িয়ে যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে দিনাজপুরে এই জামাতের উদ্যোগ নেয়া হয় ২০১৪ সালে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম ২০১৪ সালেই এই ময়দানে পাঁচ লক্ষ মানুষের জামাত আয়োজনের ঘোষণা দেন। আর এবার সেই পাঁচ লক্ষাধিক মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়। এখানে মানুষ যেন অংশ নেয় সে জন্য চালানো হয় ব্যাপক প্রচার।

ঈদের দিন সোমবার সকাল নয়টায় জামাত হয় গোর এ শহীদ ময়দানে। তার আগে থেকেই হাজারো মানুষ দল বেঁধে দিনাজপুরের এই ময়দানটির দিকে আসতে থাকে।

জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা শামসুল হক কাসেমি। নামাজে অংশ নেয় বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম, হুইপ ইকবালুর রহিম, জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম, পুলিশ সুপার হামিদুল আলম। দিনাজপুর জেলা শহর ছাড়াও আশপাশের জেলা ও উপজেলা থেকেও এ ঈদের জামাতে স্বতঃস্ফুতভাবে অংশ নেয় অসংখ্য মুসল্লি।

জামাতের পর দিনাজপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রহমান তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লেখেন, ‘সত্যিই অভিভূত। এত বিশাল জন সাগরের ঢেউ দেখা হয়েছে কিনা জানি না। তবে প্রত্যাশার চাইতে লাখো লাখো জনতার এ বিশাল সমাবেশে রচিত হল নতুন ইতিহাস। শোলাকিয়ার রেকর্ড় ভেঙে দিনাপুরের বহৎ নয় বরং বৃহত্তম জামাত। আয়োজন ছিল পাঁচ লক্ষের। কিন্তু সে সীমানা পেরিয়ে তার চাইতেও অধিক জনতা।’

‘অতীতে দিনাজপুরের মানুষ সাগর দেখেনি, এ জন্য রামসাগরকেই সাগর ভাবত। জানি না আজ তা জনসাগর কিনা। ধন্যবাদ মাননীয় হুইপ জনাব ইকবালুর রহিম মহোদয়কে, যিনি ২০১৪ সালে এই ঈদের জামাতে ঘোষণা দিয়েছিলেন তাঁর এমন অভিব্যক্তি। অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সে সপ্ন আজ সত্যি হল।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরও লেখেন, ‘জেলা প্রশাসনসহ সকল সামরিক ও বেসামরিক দপ্তর সবাই একযোগে তা বাস্তবায়নে তৎপর ছিলেন। বড় মাঠ নামের এই ময়দান এখন বৃহত্তম ময়দান। দিনাজপুরকে দেশ ও বিদেশে চিনবে নতুনভাবে। বড়মাঠ হোক দিনাজপুরের সর্বস্তরের জনগণের ঐক্যের প্রতীক। আসুন আমরা সকলে বিনির্মাণ করি এক নতুন ও সমৃদ্ধ দিনাজপুর।’
দিনাজপুরের বাসিন্দা শাহীন খান এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা। এই ময়দানে জামাতে অংশ নিতে তিনি সেখান থেকে এসেছেন। নামাজ আদায় করে অভিভূত তিনি। বলেন, ‘আমার জীবনে এমন ঈদের জামাত দেখিনি কখনও। আমি দেশে এসে এই বৃহত্তম ঈদ জামাত পড়তে পেরে স্বার্থক।’

বীরগঞ্জ উপজেলা থেকে নামাজ আদায় করতে আসা ৭০ বছরের ইমামুদ্দিন বলেন, ‘শেষ বয়সে শেষ পাওনাটা পেলাম এই ঈদ জামাতে নামাজ পড়ে। এতো মানুষের সাথে এক কাতারে নামাজ পড়তে পারবো কখনো ভাবিনি।’

এই ঈদের জামাত কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করে। ঈদের জামাত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়।

এই জামাত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হওয়ায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এই ঈদগাহ মাঠ তৈরির উদ্যোক্তা হুইপ ইকবালুর রহিম।

সেনাবাহিনীর মালিকাধীন দিনাজপুরের গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানের এই বিশাল মাঠে প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে ঈদগাহ মিনার। দৃষ্টি নন্দন এই মিনারে রয়েছে ৫২টি গম্বুজ। প্রধান গম্বুজের সামনে রয়েছে মেহরাব, ৪৭ ফুট উচ্চতায় ইমাম দাঁড়ানোর স্থান।

এর পাশাপাশি রয়েছে ৫১টি গম্বুজ। এছাড়াও ৫১৬ ফুট দৈর্ঘেও ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক বাতি। রাত হলেই যা ঈদগাহ ময়দানকে আলোকিত করে তোলে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031