রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির সাত বছর পূর্ণ হয়েছে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল। দিবসটি পালন উপলক্ষে প্রতিবছরে এই দিনে নিহতদের স্মরনে ধসে পড়া ভবনের সামনে নির্মিত অস্থায়ী বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান নিহতদের স্বজনরা, আহত শ্রমিক, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ। তবে এ বছর দেশে করোনার কারনে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির বর্ষপূর্তিতে কোন কর্মসূচি দেয়নি শ্রমিক সংগঠনগুলো। এছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঝুঁকি এড়াতে দিনবাপী পুরো এলাকা লকডাউন ঘোষনা করা হয়। তবে রানা প্লাজা ধসে নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিকদের স্মরনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সকালে ঢাকা জেলা পুলিশ, সাভার মডেল থানা, আশুলিয়া থানা ও শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা। গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দেশ, জাতি ও শ্রমিকদের কল্যাণে রানা প্লাজার সকল কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। করোনা রোধে সামাজিক দূরত্বের বিষয়টিকে গুরুত্বকে দিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আশা করি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকসহ অন্যান্য মাধ্যমে রানা প্লাজা ধসে নিহতদের শ্রদ্ধা জানাবে সবাই। এদিকে রানা প্লাজা ধসের ৭ বছর পুর্তিতে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির ডাকে রানা প্লাজার নিহতদের স্বজন, আহত শ্রমিকসহ বিভিন্ন এলাকার শ্রমিকরা যার যার অবস্থান থেকে ১ মিনিট নীরবতা পালন করেছে। তাদের কারো হাতে ছিলো স্বজনের ছবি, কারো হাতে ‘আমরা তোমাদের ভুলবো না’’ দোষীদের ছাড়বো না’ এমনি প্রতিবাদী বক্তব্য ও দাবি জানান। সেই নীরবতার ও প্রতিবাদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেয়া হয়। এতে অংশ নেন নিহত ফজলে রাব্বীর মা রাহেলা খাতুন, আহত শ্রমিক ইয়ানুর, আহত শ্রমিক রূপালী আক্তার, নিহত সনজিত দাসের মা-বাবা শুন্যবালা দাস এবং সত্যজিত দাস, নিহত সাহিদার বাবা হোসেন মিয়া, নিহত শাওনের বাবা আজিজ মিয়া, নিহত শান্তনার বোন সেলিনা আক্তার নিহত বেবী আক্তারের স্বামী ও কণ্যাসহ অনেকে। শ্রমিকনেতারা বলেন, সাত বছর পার হলেও রানা প্লাজা ধসের পেছনে প্রকৃত দায়ীদের এখনো বিচার হয়নি। আহত শ্রমিকরা নানা শারীরিক জটিলতা নিয়ে করোনা ভাইরাসের এ পরিস্থিতিতে আরো বেশি কষ্টের মধ্যে পড়েছেন। মালিকপক্ষ মুনাফা ছাড়া আর কিছুই বোঝেনা। এজন্যই করোনা ভাইরাসের মতো কঠিন পরিস্থিতিতেও শ্রমিকদেরকে কারখানায় টেনে এনে সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি করেছে। এছাড়া ও ছাঁটাই, লেঅফ এর ঘটনাকে অমানবিক আচরণ হিসেবে চিহ্নিত করে বক্তারা বলেন, করোনায় মালিক এবং শ্রমিক সমান ক্ষতিগ্রস্থ না। ব্যবসার লসের কথা বলে দেশের অর্থনীতির প্রাণ শ্রমিকদের প্রতি দায়িত্ব অবহেলা করলে সেটা শিল্পের জন্যই ক্ষতিকর হবে বলে জানান তারা। অন্যদিকে রানা প্লাজা ধসের ৭ বছর: করোনা ঝুঁকি এবং শ্রমিকের অধিকার শীর্ষক এক আলোচনায় বক্তারা বলেন, রানা প্লাজা যেমন শ্রমিকদের জীবনে বিরাট একটি ধাক্কা ছিলো, তেমনি করোনা ভাইরাসের প্রভাবও শ্রমিকদের জীবনে বড় ধাক্কা হয়ে আসছে। সরকারের উচিৎ দ্রæত সোহেল রানার শাস্তি প্রদান এবং করোনাকালে দুরে না ঠেলে সরকার, মালিক ও বায়ারদের মিলে শ্রমিকদের দায়িত্ব নেয়া। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, মালিকরা কেবল ক্ষয় -ক্ষতির কথা বলে শ্রমিকদের অধিকার আড়াল করে যেতে চায়। শ্রমিকদের তারা তাদের লাভের ভাগ দেয় না বটে কিন্তু তাদের লোকসানের ভাগ চাপিয়ে দিতে চায়। উল্লেখ্য, দেশের পোশাক খাতের ইতিহাসে মর্মান্তিক এক কালো অধ্যায়ের নাম রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি। ২০১৩ সালের এই দিনে সাভারে নয় তলা রানা প্লাজা ভবন ধসে সহস্রাধিক শ্রমিক নিহত হন। আহত হন প্রায় তিন হাজার। এদের মধ্েয অনেকেই পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031