ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার কয়েকজন শিক্ষক উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর আগে কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশনা ছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু সে নির্দেশনা না মেনে কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন । সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে প্রচলিত ধরন বদলে নানা কৌশলে বিভিন্ন বাসা/ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে এ কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
এজন্য প্রশাসনের গাফিলতিকে দায়ী করছেন বিশিষ্টজনেরা। তবে প্রশাসন বলছে, চলমান পরীক্ষার সময় কোচিং ব্যবসায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর শিক্ষক ও কোচিং সেন্টার মালিকরা বলছেন, সরকারি কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় তারা কোচিং কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
সোমবার সকাল নয়টার দিকে মুক্তাগাছা উপজেলার সাহেববাজার এলাকার একটিভ কোচিং সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, বাইরে থেকে দরজা বন্ধ। দরজা খুলতেই দেখা যায়, সেখানে ক্লাস নিচ্ছেন এক শিক্ষক। এ প্রতিবেদক ছবি উঠাতে গেলে ওই শিক্ষক ক্লাস থেকে বের হয়ে যান। এ সময় শিক্ষার্থীরা জানায়, স্কুলের চেয়ে কোচিংয়েই বেশি গুরুত্ব দিয়ে ক্লাস করানো হয়। তাই তারা কোচিংয়ে পড়তে আসে।
পরীক্ষা চলাকালে কোচিং সেন্টার চালানোর বিষয়ে কোচিংয়ের পরিচালক মাসুম বিল্লাহ উপজেলা প্রশাসনকে দায়ী করে বলেন, `আমি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নই। এজন্য আমার কোন বাধা নেই। কোচিং বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের কোনো নির্দেশনাও আমরা পাইনি।‘
এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, উপজেলার নামি-দামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও নিয়মবর্হিভুতভাবে এসব কোচিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।
কোচিং করতে যাওয়ার সময় রাম কিশোর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের (আরকে) নবম শ্রেণি এক শিক্ষার্থী বলেছে, `আমি এ ওয়ান কোচিংয়ে আমাদের স্কুলের শিক্ষক মাসুদ স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ি। প্রতিদিন সকাল-বিকাল ৫-৬ ব্যাচে শিক্ষার্থীদের পড়ান তিনি।‘
এ ওয়ান কোচিং সেন্টারে খোঁজ নিতে গেলে দেখা যায়, এক অভিভাবক তার ছেলেকে কোচিংয়ে ক্লাস করাতে নিয়ে এসেছেন। পরে ওইদিন শুক্রবার কোচিং বন্ধ থাকে বিধায় ছেলেকে নিয়ে ফিরে যান।

তবে কোচিংয়ের কথা অস্বীকার করে আরকে সরকারি হাইস্কুলের শিক্ষক মো. ওয়ালীউল্লাহ মাসুদ বলেন, `আমি জানুয়ারি মাস থেকে পড়ানো বাদ দিয়েছি।‘
মুক্তাগাছা উপজেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শাতিল মাহমুদ তারেক বলেন, `সরকার প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে পরীক্ষা চলাকালে কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধের নির্দেশনা জারি করে। প্রশ্নপত্র ফাঁসে বিভিন্ন সময়ে এ কোচিং সেন্টারগুলোর জড়িত থাকার বিষয়ই বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। তবে সরকারের নির্দেশ অনুসারে পরীক্ষা চলাকালে কোচিং সেন্টার বন্ধে প্রশাসনকে জরুরি কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।‘
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবর্ণা সরকার বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুসারে কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকার কথা। এখানে আলাদাভাবে ঘোষণা দেওয়ার কিছুই নেই। যারা আলাদাভাবে ঘোষণার কথা বলে আইনের অপব্যাখ্যা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে অভিযান চালিয়ে সিলগালা করার কথাও জানান তিনি।
