পুলিশ বাহিনীর সার্বিক আধুনিকায়নে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা চাই পুলিশের কাছ থেকে আমাদের জনগণ যথাযথ সেবা পাবে। এজন্য পুলিশকে আধুনিক প্রযুক্তিতে দক্ষ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আজ বুধবার রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির ৩৫তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের শিক্ষানবীশ সহকারী পুলিশ সুপারদের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দায়িত্ব পালনের সময় জনগণের অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। সমাজের নারী, শিশু ও প্রবীণদের প্রতি সংবেদনশীল আচরণ করতে হবে।

 দেশ ও দেশের মানুষ রক্ষায় পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমন করতে পেরেছে। সন্ত্রাস দমনে আপনারা সাফল্য অর্জন করেছেন। বর্তমানে মাদক একটি ব্যাধির মতো দেশ, সমাজ ও পরিবারকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

জঙ্গি দমনের মতো আমার বিশ্বাস মাদক দমনেও আপনারা সফল হবেন।
এক বছরব্যাপী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করায় নবীন কর্মকর্তাদের শুভেচ্ছা, অভিনন্দন ও আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জনগণের সঙ্গে আপনাদের সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। তাদের চাহিদা পূরণ করতে হবে। দেশে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যার ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনী অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা, জননিরাপত্তা বিধান, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, সন্ত্রাস ও অপরাধ দমন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখার পাশাপাশি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখতে পুলিশ সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের পুলিশ জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা মিশনে দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের জন্য বহির্বিশ্বে প্রশংসা অর্জন করেছে। নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রযুক্তির উন্নয়নের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী অপরাধের ধরন দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। বিশেষ করে সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে আরও আধুনিক ও দক্ষ হওয়ার কথা বলেন তিনি।

পুলিশ বাহিনীর উন্নয়নে আওয়ামী লীগের অবদানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। প্রতিটি সেক্টরে আমাদের উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশ উন্নত দেশ হবে সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা ক্ষমতায় আসার পর মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বিশ্বে আমরা মাথা উঁচু করে চলবো। কারণ আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি।

তিনি বলেন, ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পুলিশের বাজেট বৃদ্ধি, স্টাফ কলেজ নির্মাণ, টিফিন ভাতা, ঝুঁকি ভাতা বৃদ্ধি করেছে। পুলিশের জনবল বৃদ্ধি জন্য ৫০ হাজার জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। কারণ আমাদের জনসংখ্যা বেড়েছে। বর্ধিত জনগণকে সেবা দিতে পুলিশের ওপর বেশি চাপ পড়ছিল। জনবল বৃদ্ধির পাশাপাশি যানবাহন ও অন্যান্য সরঞ্জামাদির ব্যবস্থাও করা হয়েছে। কনসটেবল থেকে এসআই পর্যন্ত ঝুঁকি ভাতা দেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে এ ভাতা দেওয়া হবে। এছাড়া নতুন নতুন থানা, পুলিশ ফাঁড়ি করা হয়েছে। পুলিশের বিশেষায়িত শাখা শিল্প পুলিশ,  ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ পুলিশ করা হয়েছে। এছাড়া গার্ড ও প্রোটেকশন পুলিশ করার কথা ভাবা হচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে ট্রাফিক পুলিশে নারী সদস্য নিয়োগ করা হচ্ছে।

পুলিশ সদস্যদের জন্য আবাসন ও চিকিৎসা সুবিধা,  রেশন বৃদ্ধি, উন্নত যানবাহনের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়াও নানা ধরনের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় আইজিপি র‌্যাংক ব্যাজ প্রবর্তন করেছে। আমার আর্মড পুলিশের জন্য ৩০টি ট্রেনিং সেন্টার করে দিয়েছি। এছাড়া আরও চারটি সেন্টার করার কাজ চলছে। পুলিশ বাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির সার্বিক উন্নয়নের ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেয়ার অংশ হিসেবে সারদা একাডেমিকে সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031