একটি তেলবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে। এতে গতকাল দুপুর ১২টা থেকে সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজীবাজার রেল স্টেশনের কাছে । বিকালে আখাউড়া ও কুলাউড়া থেকে দু’টি উদ্ধারকারী ট্রেন এসে লাইন থেকে বগি সরানোর কাজ শুরু করেছে। লাইন মেরামত করে ট্রেন চালু করতে আরো ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে সিলেটগামী একটি তেলবাহী ট্রেন শাহজীবাজার রেল স্টেশনের কাছে পৌঁছালে এর ৫টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে ট্রেনের স্লিপারসহ মূল লাইনের বড়ধরনের ক্ষতিসাধন হয়। এদিকে তেলবাহী বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় তেল ছড়িয়ে পড়েছে রেললাইনে ও আশেপাশে। পড়ে যাওয়া তেল সংগ্রহে হুমড়ি খেয়ে পড়ে স্থানীয়রা।

নারী-পুরুষ যে যেভাবে সম্ভব বালতি, হাঁড়ি-পাতিলে তেল সংগ্রহ করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ব্যক্তিগতভাবে তেল সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে কিনে বড় বড় ড্রাম ভর্তি করে ট্রাকে করে নিয়ে যান স্থানীয় তেল ব্যবসায়ীরা। প্রায় ৫০ হাজার লিটার তেলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে দুর্ঘটনার কারণে চট্টগ্রামগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস শ্রীমঙ্গল স্টেশনে এবং ঢাকাগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ভানুগাছ স্টেশনে আটকা পড়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামগামী যাত্রীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। শায়েস্তাগঞ্জ রেলস্টেশনেও একই চিত্র। কখন ট্রেন যোগাযোগ স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে হতাশায় রয়েছেন যাত্রীরা। জয়ন্ত্রিকা এক্সপ্রেসে ঢাকা যাওয়ার জন্য রেলস্টেশনে পরিবার নিয়ে এসেছেন মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। তিনি স্টেশনে এসে জানতে পেরেছেন, ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে রেল যোগাযোগ বন্ধ। মিজানুর রহমান চিকিৎসার জন্য ঢাকা যাচ্ছিলেন। কিন্তু এ দুর্ঘটনার কারণে তিনি সময় মতো ঢাকা পৌঁছাতে পারবেন না। কখন ট্রেন ছাড়বে তা-ও জানেন না। এত দীর্ঘসময় পরিবার-পরিজন নিয়ে স্টেশনে কীভাবে সময় কাটাবেন তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি।
শাহজীবাজার স্টেশনের মাস্টার মোফাজ্জল হোসেন জানান, ইঞ্জিনসহ ৫টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। খবর পেয়ে শায়েস্তাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। উদ্ধারকারী ট্রেন বিকালে দুর্ঘটনাস্থলে এসে কাজ শুরু করেছে। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হতে বেশকয়েক ঘণ্টা সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন তিনি। রেললাইন মেরামত কাজের দায়িত্বে থাকা শেখ মো. হাসান জানান, শত শত নারী-পুরুষ তেল সংগ্রহ করছেন। বালতি দিয়ে তেল নিচ্ছিলেন কামাল মিয়া নামের এক যুবক। তিনি বলেন, তেল গাড়ি থেকে পড়ছে তাই নিচ্ছি। না নিলেও তো নষ্ট হবে। তেল সংগ্রহকারী খাদিজা খাতুন জানান, আমি এক কলসি তেল নিয়েছি। তবে এটা কী তেল তা জানি না। সবাই নিতাছে তাই আমিও নিলাম। তাদের মতো শত শত নারী-পুরুষ লাইনচ্যুত বগি থেকে তেল সংগ্রহ করছেন। শায়েস্তাগঞ্জ রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার মুশফিক উদ্দিন বলেন, তেলবাহী ট্রেনের পাঁচটি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার পর সাধারণ মানুষ তেল সংগ্রহ করছেন। তিনি আরো জানান, প্রতি বগিতে ১০ হাজার লিটার ডিজেল ছিল। সে হিসেবে পাঁচটি বগিতে ৫০ হাজার লিটার ডিজেল ছিল। রেলওয়ে সিলেট অঞ্চলের পরিবহন পরিদর্শক তৌফিকুল আজিম মানবজমিনকে জানান, লাইনের সাময়িক ত্রুটির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির রিপোর্টের পর দুর্ঘটনার মূল কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। তিনি বলেন, আমাদের দু’টি উদ্ধারকারী ট্রেন কাজ করছে। তবে আরো বেশ কয়েক ঘণ্টা সময় লাগতে পারে ট্রেন লাইন স্বাভাবিক হতে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031