সুন্দরী রোহিঙ্গা যুবতী অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়াগামীদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলো । বিয়ে করে সংসারী হতে দল বেঁধে মালয়েশিয়া যাচ্ছিলেন তারা। এদের কারও সদ্য বিয়ে হয়েছে, কারও বিয়ে হয়েছে বছর দু’য়েক আগে। আবার অনেকে বিয়ে চূড়ান্ত করে যাচ্ছিলেন। তাদের প্রত্যেকের স্বামী মালয়েশিয়াতে অবস্থান করছে। তাই জীবনবাজি রেখে সাগরপাড়ি দিয়ে  প্রিয়জনদের কাছে যাচ্ছিলেন এসব রোহিঙ্গা যুবতী। পাসপোর্ট জটিলতার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ সাগরপথ বেছে নেন বলে জানান উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গা যুবতীরা।

মঙ্গলবার ভোরে মালয়েশিয়াগামী ট্রলারটি ডুবে নিহত ১৫ জনের মধ্যে ১১ জনই নারী।

আবার উদ্ধার হওয়া ৭২ জনের মধ্যেও ৪৬ জন নারী। যাদের বয়স ২০-২২ বছরের মধ্যে। তারা কেউ স্বামীর কাছে যাচ্ছিলেন, আবার কেউ যাচ্ছিলেন রোহিঙ্গা যুবকদের সঙ্গে বিয়ের উদ্দেশ্যে।

টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের খতিজা বেগম, মধুরছরা ক্যাম্পের রোকসানা বেগম, জাদিমুরার হোসনে আরা, লম্বাশিয়ার ইয়াসমিন, কুতুপালংক রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রাজুমা আকতার (১৭) সহ উদ্ধার হওয়া যুবতীরা জানান, তাদের স্বামী মালয়েশিয়ায় থাকেন। স্বামীরাই দালালদের মাধ্যমে মালয়েশিয়া যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। পাসপোর্ট করার কোন সুযোগ না থাকায় এ পথ বেঁচে নেন তারা।

কুতুপালংক রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রাজুমা আকতার জানান, মালয়েশিয়াতে অবস্থানরত এক রোহিঙ্গা যুবকের সঙ্গে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। বিয়ে করে সংসারী হওয়ার জন্য জীবন ঝুঁকি নিয়ে মালয়েশিয়া যাচ্ছিলাম। কিন্তু পথিমধ্যে এমন দুর্ঘটনায় পতিত হবো কখনো ভাবিনি। মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য দালালদের ৩০ হাজার টাকা দেয়ার কথাও জানান ওই যুবতী।

এসব সুন্দরী যুবতীদের সঙ্গে কিছু বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা মহিলাও রয়েছেন। এদের মাঝে নুর বানু ও ছলেমা খাতুন বলেন, স্বাবলম্বী হওয়ার আশায় ট্রলারে মালয়েশিয়া পৌঁছাতে চেষ্টা করেছিলাম। এভাবে মাঝ সাগরে ট্রলার ডুবে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হবে কল্পনাও করিনি।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান জানান, মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত রোহিঙ্গা যুবক, এদেশে অবস্থানরত তাদের বৌ ও প্রেমিকা এবং দালালচক্র- এই তিনের সমন্বয়ে অবৈধপথে মালয়েশিয়া পাড়ি দিচ্ছিলেন শতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু। নিরাপদে মালয়েশিয়া পৌঁছে দেয়ার কথা বলে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রথম দফায় ৩০-৫০ হাজার টাকা নিয়েছে দালাল চক্র।

জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, সাগরে ট্রলারডুবির ঘটনায় নিখোঁজদের উদ্ধারে বিমানবাহিনীর দু’টি হেলিকপ্টার, নৌবাহিনীর ডুবুরি ও কোস্টগার্ডের প্রশিক্ষিত সদস্যরা অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

নৌবাহিনীর সেন্ট মার্টিনস ইনচার্জ লেফট্যানেন্ট জায়েদ জানান, ডুবে যাওয়া ট্রলার থেকে আমরা ৭২ জনকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। তবে মালয়েশিয়াগামী রোহিঙ্গাদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী, যাদের বয়স ২০-২২ এর মধ্যে। তাদের অনেকে মালয়েশিয়াতে তাদের স্বামীর কাছে যাচ্ছেন এবং কেউ মালয়েশিয়াতে থাকা রোহিঙ্গা যুবকদের সঙ্গে বিয়ের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

টেকনাফ নৌ-পুলিশের ইনচার্জ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপের কাছাকাছি রোহিঙ্গাদের বহনকারী ট্রলার ডুবির ঘটনায় ১৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ১৫ জনের মধ্যে ১১ জন নারী ও ৪ শিশু রয়েছে।  নৌবাহিনীর ডুবুরী দল, কোস্ট গার্ডের উদ্ধারকারী টিম, বিজিবি, পুলিশসহ উদ্ধারকর্মীরা জীবিত উদ্ধার করেছে ৭৩ জনকে। এরমধ্যে ৪৬ জন নারী, ২২ পুরুষ ও ৪জন শিশু রয়েছে। এখনো পর্যন্ত ১০ শিশু নিখোঁজ রয়েছে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031