ঘরবন্দি মানুষ ক্যালেন্ডারের দিকে তাকিয়ে থাকেন এ এক বিষন্ন, বিপন্ন সময়। । দিন যায়, রাত যায়। দুনিয়ার পরাক্রমশালী রাষ্ট্রনায়করা বসে বসে লাশ গুনেন। কালো ব্যাগে করে গাড়ি থেকে নামতে থাকে লাশ। মনখারাপ করে ট্রাম্প জানান, এমন দৃশ্য তিনি জীবনে কোনোদিন দেখেননি। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের আজকের এই পরিস্থিতির জন্য অনেকেই তার হঠকারিতাকে দায়ী করেন।
এই ডায়েরি লেখকের কোনো পাসপোর্ট নেই। যেটা বলতে চাওয়া, বিদেশ ভ্রমণের রেকর্ড নেই।

কিন্তু গত ক’দিনে উহান, রোম, মিলান, নিউ ইয়র্ক, তেহরান, লন্ডনকে নিজের শহর মনে হয়। ভরসা হারানো মানুষগুলোর মুখ দেখতে আর একদম ভালো লাগে না। তাবৎ রাষ্ট্রনেতাদেরই দেখে মনে হচ্ছে, ভরসা হারিয়ে ফেলেছেন। ট্রাম্প বলছেন, মৃত্যুর সংখ্যা ১-২ লাখের মধ্যে রাখতে পারা হবে সফলতা। বরিস জনসন, যিনি নিজেও করোনায় আক্রান্ত, বলছেন, অনেক প্রিয়জনকে হারাতে হবে।
দুনিয়া থেকে বিচ্ছন্ন নয়, বাংলাদেশও। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতেও আঘাত হেনেছে করোনা। ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৬ জন। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা চার দিকে। কী হচ্ছে, কী হবে? কেউ আসলে জানেন না। ২৬শে মার্চ থেকে কার্যত লকডাউন চলছে দেশে। এখন পর্যন্ত ঘোষণা অনুযায়ী ১১ই এপ্রিল পর্যন্ত চলবে তা।
করোনায় স্বাস্থ্যখাতে এরই মধ্যে সংকট তৈরি হয়েছে। কয়েকজন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসকদের একটি অংশ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। মানবতার এই সংকটময় মুহুর্তে সাহসী ভূমিকা রাখছেন তারা। কিন্তু বহু জায়গায় চিকিৎসকদের খোঁজ মিলছে না। মানুষ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না। চিকিৎসকদের সুরক্ষা সামগ্রীর সংকট এখন সারা পৃথিবীতেই। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে। বেক্মিমকোসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিও এগিয়ে এসেছেন।

অঘোষিত লকডাউনে এরই মধ্যে নিম্ন আয়ের মানুষ বিপাকে পড়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। অনেকে বলছেন তা পর্যাপ্ত নয়। অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে। ছোট ছোট গ্রুপে মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। এই সংকটের মুহুর্তে এটা আশাবাদ তৈরি করছে। বেশ কিছু বড় প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে এসেছে। বেক্মিমকো, বসুন্ধরা, আকিজ, প্রাণসহ বিভিন্ন গ্রুপ এরইমধ্যে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে।

কিন্তু এসব উদ্যোগের পরও মানুষের হাহাকারের খবর পাওয়া যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার ঢাকার রাস্তায় ত্রাণের খোঁজে থাকা বহু মানুষ দেখা গেছে। চট্টগ্রামে বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। অনেক পরিবারই রয়েছে অনিশ্চয়তায়। তারা জানেন না, ঘরে রান্না হবে কি না।
এই পরিস্থিতিতে একটি বিষয় হয়তো অনেকের দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। সাম্প্রতিক অতীতে দেখা গেছে, অতি ধনী বৃদ্ধির হারে বিশ্বের শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। এখন জাতীর চরম সংকটের মুহুর্তে তারা যেন নিখোঁজ হয়ে গেছেন। কোথায় রয়েছেন সেই অতি ধনীরা। তাদের কি কিছুই করার নেই। প্লিজ এগিয়ে আসুন আপনারা।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031