দানবীয় সন্ত্রাস সড়কে থামছে না । ট্রাক–বাস চালকরা বেপরোয়া। ফলে নিত্যদিন ঘটছে প্রাণহানি। গত বৃহস্পতিবার ষোলশহর এলাকায় বেপরোয়া কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় রিকশা আরোহী এক কলেজ ছাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুর পর গতকাল আবার ট্রাকচাপায় প্রাণ হারিয়েছেন এক পথচারী। নগরীর কোতোয়ালী থানার ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড কার্যালয়ের সামনে এদুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম অভি রিভেরো (৬০)। তিনি আলকরণ এলাকার এডগ রিভেরোর ছেলে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কোতোয়ালী থানার ডিউটি অফিসার এএসআই খালেদা নাসরিন বলেন, ফিরিঙ্গিবাজার এলাকায় হেঁটে যাওয়ার সময় একটি ট্রাক ওই ব্যক্তিকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। ট্রাকটি আটক করা হলেও এর চালক পালিয়ে গেছে বলে জানান তিনি। দুই মেয়ে ও এক ছেলের জনক অভি রিভেরো একটি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি চালাতেন। তবে অনেকদিন ধরে অবসরে ছিলেন। দুর্ঘটনার পর শত শত মানুষ জড়ো হয়ে ফিরিঙ্গী বাজার সড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে মেরিনার্স সড়ক হয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামমুখী যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বেলা পৌনে ২টার দিকে স্থানীয়রা সড়ক অবরোধ তুলে নেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার ষোলশহরে নিহত রিয়া বড়ুয়া নাসিরাবাদ সরকারি মহিলা কলেজের অর্থনীতির (সম্মান) চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। তাদের গ্রামের বাড়ি পটিয়া উপজেলার হুলাইন ইউয়িনে। তার বাবার নাম রাজীব বড়ুয়া। তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট রিয়া বড়ুয়া ছিলেন সদা হাস্যোজ্জ্বল ও প্রাণচঞ্চল। ঐদিন বেলা আড়াইটা নাগাদ কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির অফিসের সামনের সড়কে রিয়াকে বহনকারী রিক্সার পেছন থেকে একটি কাভার্ডভ্যান ধাক্কা দেয়। এতে রিক্সাটি ডান পাশের ডিভাইডারে ধাক্কা খায়। এ সময় রিক্সা থেকে ছিটকে পড়েন ওই কলেজছাত্রী। সঙ্গে সঙ্গে তার মাথার ওপর দিয়ে চলে যায় কাভার্ডভ্যানটি।
ওদিকে রাজধানীতেও গতকাল বাসচাপায় এক যুবকের পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দুপুরে হানিফ ফ্লাইওভারে গ্রিনলাইন পরিবহনের একটি বাসের চাপায় তার বাম পা কাটা পড়ে। স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। পুলিশ জানিয়েছে, মো. রাসেল (২৫) নামে ওই যুবক একটি প্রাইভেটকার চালাচ্ছিলেন। তার গাড়িতে বাসটি ধাক্কা দিলে তার প্রতিবাদ জানাতে বাসটি থামাতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাসটি তার উপর দিয়েই চালিয়ে দেয়। পরে বাসটি এবং তার চালককে পুলিশ আটক করেছে।
প্রসঙ্গত, গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতকের (বাণিজ্য) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীব হোসেন (২১ ) দুই বাসের রেষারেষিতে চাপা পড়ে হাত হারান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩দিন পর ১৬ এপ্রিল তিনি মারা যান। আর গত ১৭ এপ্রিল গোপালগঞ্জে ট্রাকের ধাক্কায় বাসের সহকারী হৃদয় শেখের হাত বিচ্ছিন্ন হয়। আর ২০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ির সামনে বিআরটিসির বাসের ধাক্কায় রোজি নামে এক তরুণীকে হারাতে হয়েছে পা । রোজি বর্তমানে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ব্রিজের নিচে রাস্তা পারাপারের সময় হঠাৎ রোজি রাস্তায় পড়ে যান। এ সময় মহাখালী থেকে উত্তরাগামী বিআরটিসির দোতলা বাসটি তার ডান পায়ের ওপর দিয়ে চলে যায়। এতে সঙ্গে সঙ্গে তার হাঁটু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় পায়ের নিচের অংশ। এভাবে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। আর তাতে প্রাণ যাচ্ছে নিরীহ লোকজনের।
