স্বজনদের আবেদনে মুক্তি পান বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দলীয় প্রধানের মুক্তির দাবিতে বিএনপির নানা কর্মসূচি, আইনি প্রচেষ্টাসহ সব চেষ্টা যখন ব্যর্থ। দল ও স্বজনদের পক্ষ থেকে বারবার দাবি করা হচ্ছিল বাতব্যথায় আক্রান্ত বিএনপির চেয়ারপারসনের সুচিকিৎসা হচ্ছে না। ফলে তার হাত-পা অবশ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। মানবিক বিবেচনায় তার মুক্তির জন্য পরিবারের আবেদনেও ছিল নিজ দায়িত্বে তার সুচিকিৎসা করানোর প্রতিশ্রুতি।

তাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক বিবেচনায় ছয় মাসের জন্য খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যবস্থা করেন, যা বিভিন্ন মহলের প্রশংসা কুড়িয়েছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের বাতব্যথা ছাড়া অন্য রোগগুলো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিশেষ করে তার হাত ও হাঁটুর ব্যথার জন্য উচ্চ মাত্রার ওষুধের চিকিৎসা প্রয়োজন।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও দলের নেতারা তার বাঁ হাতটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য জানাচ্ছেন। বলছেন, চেয়ারপারসনের মুক্তির পর হাসপাতাল থেকে গুলশান পর্যন্ত যাওয়ার সময় তার বাম হাতটি এ জন্য হলুদ কাপড়ে ঢাকা ছিল। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতেও এমনটা দেখা গেছে।

তারা বলছেন, খালেদা জিয়ার দুই হাতেই বাতব্যথা আছে। ডান হাতের তুলনায় বাম হাতটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গত দুই বছরে। বাম হাতটি বাঁকা হয়ে অনেকটা ফুলে গেছে।

খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, বুধবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে বিকাল চারটায় বের হয়ে গুলশানের বাসায় যাওয়ার পথে পুরোটা সময় বাম হাতটি ঢাকা ছিল। রাস্তায় নেতাকর্মীদের ভিড়ের কারণে প্রায় এক ঘণ্টা সময় চলা এ পথে অসংখ্য নেতাকর্মী তাকে ঘিরে সালাম দেন। এ সময় ডান হাত নেড়ে সালামের জবাব দেন খালেদা জিয়া। একটিবারের জন্যও বাম হাত নাড়াচাড়া করেননি সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের তথ্যমতে, ৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়া ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যায় ভুগছেন। তবে তার মূল সমস্যা গেঁটে বাত (অস্টিও-আর্থরাইটিস)। হাসপাতালে তাকে বিশেষ থেরাপি দেওয়ার কথা বলা হলেও তাতে তিনি সম্মতি দেননি।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় সাজা পেয়ে কারাগারে যান খালেদা জিয়া। এরপর থেকে তার মুক্তির জন্য বহুবার আদালতে গেলেও জামিন মঞ্জুর হচ্ছিল না। বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে মিছিল-মানববন্ধন করছিলেন, কিন্তু তাদের নেত্রীর মুক্তির পথ খোলেনি তাতে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে পরে তাকে কারা তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।

এ অবস্থায় চলতি মাসের শুরুতে ‘মানবিক কারণে’ খালেদার সাময়িক মুক্তি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। শামীম এবং তার সেজ বোন সেলিমা ইসলাম এ বিষয়ে কথা বলতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন বলেও জানা গেছে।

অবশেষে ২৫ মাস পর সাময়িক মুক্তি পেলেন খালেদা জিয়া। হাসপাতাল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাকে তোলা হয় শামীমের গাড়িতে। শামীম নিজেই গাড়ি চালিয়ে রওনা হন ফিরোজার পথে। শামীমের স্ত্রী কানিজ ফাতিমাও ছিলেন ওই গাড়িতে। ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার নিজে গাড়ি চালিয়ে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেন। সেখানে ফুল দিয়ে বিএনপি নেত্রীকে স্বাগত জানান স্বজনরা।

খালেদা জিয়ার গাড়ির পেছনে অন্য একটি গাড়িতে ছিলেন তার কারাজীবনের সঙ্গী গৃহকর্মী ফাতেমা।

খালেদা জিয়া যখন বিএসএমএমইউর ক্যাবিন ব্লক থেকে বেরিয়ে আসেন, তখন তার পরনে ছিল গোলাপি জামা, চোখে সানগ্লাস, আর মুখে মাস্ক। বিকাল সোয়া পাঁচটায় গাড়ি প্রবেশ করে খালেদার বাড়িতে। সেজ বোন সেলিমা ইসলাম, সেলিমার স্বামী রফিকুল ইসলাম, প্রয়াত সাঈদ এস্কান্দারের স্ত্রী নাসরিন এস্কান্দার, খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমানের বড় বোন শাহিনা খান জামান বিন্দুসহ পরিবারের সদস্যরা এ সময় ফুল দিয়ে তাকে স্বাগত জানান।

সেজ বোন ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর হাতে ভর করে গাড়ি থেকে নামেন বিএনপি প্রধান। পরে তাকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে নেওয়া হয় বাড়ির ভেতরে। এ সময় তার বাম হাতের হলুদ কাপড় সরে গেলে তা ঢেকে দেয়ার জন্য বলেন খালেদা জিয়া।

সেখানে উপস্থিত একজন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ম্যাডামের হাতটা দেখে বিশ্বাসই করতে পারিনি। দেখলে চোখে পানি চলে আসবে যে কারও। হাতটা বাঁকা হয়ে গেছে। বেশ ফোলাও ছিল।’

এদিকে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়া বাতের সমস্যা ছাড়া বেশ সুস্থ শরীর নিয়েই হাসপাতাল ছেড়েছেন। বুধবার তার ডায়াবেটিস ছিল ৯ দশমিক ৩ এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক ছিল।

ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় দুপুর ও রাতে দুই বেলা ২৪ ও ২২ মিলিগ্রাম ইনসুলিন গ্রহণ এবং উচ্চ রক্তচাপসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ লিখে দেয়া হয়েছে।

আর আর্থ্রাইটিস রোগের আধুনিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত বায়োলজিক্যাল ড্রাগ (ইনজেকশন ও মুখে খাওয়ার ওষুধ) ব্যবহারের জন্য বেগম জিয়ার অনুমতি চাইলেও তিনি ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে এমন আশঙ্কায় ওই চিকিৎসা নিতে রাজি হননি। মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা তার ব্যবস্থাপত্রে ওই বায়োলজিক্যাল ড্রাগ চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031