আল্লামা শাহ আহমদ শফী ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিম বা প্রধানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন । এরআগে ২০ বছরের মতো এ মাদরাসার শিক্ষক ছিলেন তিনি। হাটহাজারীতে এতোদিন ধরে তার কথাই ছিল শেষ কথা। এ মাদরাসার শিক্ষকদের বেশিরভাগই ছিলেন তার ছাত্র। যে কারণে তার সঙ্গে কেউই দ্বিমত পোষন করতেন না। কিন্তু গত কয়েক বছরে ছেলে আনাস মাদানীর প্রভাব বাড়তে থাকে আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে আল্লামা শফীর সমালোচনা। যার চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটে গত দু’দিনে।
বুধবার রাতে আনাস মাদানীকে যখন বহিষ্কার করা হয় তখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসে।

কিন্তু পরদিন সকাল থেকে নানা কথা ছড়িয়ে পড়ে। বলা হয়, আল্লামা শফী না বুঝেই কাগজে সই করেছেন। আনাস মাদানীকে বহিষ্কার করা হয়নি। মাদরাসা বন্ধ ঘোষণা করা হবে। এ গুজবের সঙ্গে সঙ্গে আবার বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। দিনগড়াতে থাকে। বাড়তে থাকে অনিশ্চয়তা। দিনের শেষভাগে মাদরাসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। যদিও আন্দোলনকারীরা এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেন। রাতে শূরার বৈঠকে পদত্যাগ করেন আল্লামা শফি। মাদরাসার দায়িত্ব দেয়া হয় শুরা কমিটির কাছে। তাকে আজীবনের জন্য উপদেষ্টা বা সদর মুহতামিম নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু নাটকীয়তার সেখানে শেষ হয় না।
রাতে মাদরাসার এক ছাত্রের ফেসবুক আইডি থেকে  লাইভ সম্প্রচারিত হচ্ছিল। নেতৃত্বদানকারী একজন মাইকে ঘোষণা দেন, আমাদের সব দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। হুজুর অসুস্থ। হুজুরকে হাসপাতালে নেয়া হবে। আপনারা সহযোগিতা করেন। দাবি মেনে নেয়ায় শুকরিয়া প্রকাশ করলেও আল্লামা শফীকে মাদরাসা থেকে হাসপাতালে নেয়ার ব্যাপারে আপত্তি জানান আন্দোলনকারীদের অনেকে। নানা মাধ্যমে তারা শঙ্কা প্রকাশ করতে থাকেন। বলতে থাকেন, আল্লামা শফী মাদরাসা ত্যাগ করলে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। অভিযানের শঙ্কা প্রকাশ করতে থাকেন কেউ কেউ। শুরা সদস্যরা এবং আন্দোলনের নেতারা অবশ্য তাদের অভয় দেন। এক ঘণ্টার বেশি সময় তাদের বুঝানো হয়। পরে যেতে দেয়া হয় আল্লামা শফীকে। তিনি এখন একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। থমথমে রাত শেষে হাটহাজারীতে সকাল হয়েছে। কিন্তু অবিশ্বাস আর অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
হাটহাজারী মাদরাসায় সাত হাজারের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন। কওমি ধারায় এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাদরাসা। অন্যান্য মাদরাসাও এটিকে অনুসরণ করে থাকে।
গত দু’ দিনের ঘটনাপ্রবাহের পরও যে সংকট শেষ হয়নি তার ইংগিত মিলে আনাস মাদানীর কথায়। অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি টেনে এনেছেন রাজনীতিকে। তিনি বিবিসিকে বলেন, যখন আলেম ওলামাদের সাথে সরকারের একটা সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে, তখন তা নস্যাৎ করার জন্য দীর্ঘ দিনের পরিকল্পনা অনুযায়ী এটা করা হয়েছে। কওমি মাদরাসা শিক্ষাকে ধ্বংস করার জন্য আন্দোলনের নামে মাদ্রাসায় ভাঙচুর এবং অনেক শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল।

দৃশ্যত তিনি মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে দায়ী করেন। যদিও মাদরাসার একজন শিক্ষক আনাস মাদানীর বক্তব্য নাকচ করে দেন। শিক্ষক আশরাফ আলী নিজামপুরী বলেছেন, ছাত্রদের বিক্ষোভের সাথে মাওলানা বাবুনগরী বা তাদের কোন সম্পর্ক নেই। ভর্তিসহ নানা ক্ষেত্রে হয়রানির জন্য মাদানীর প্রতি ক্ষোভ থেকে ছাত্ররা বিক্ষোভ করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

আল্লামা আহমদ শফী হেফাজতে ইসলামেরও আমীর। আট বছর ধরে তুমুল আলোচনায় থাকা সংগঠনটির মহাসচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন জুনায়েদ বাবুনগরী। মাস কয়েক আগে তাকে মাদরাসা থেকে আউট করা হয়। দু’ দিনের ঘটনাপ্রবাহের পর হেফাজতের নেতৃত্ব কার কাছে যাবে সে প্রশ্নই এখন বড় হচ্ছে। যদিও এর উত্তর বেশ জটিল।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031