রুহুল কবির রিজভী বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের মধ্যকার ‘প্রেম’ রয়েছে দাবি করেন, এটি প্রেম নিয়ে নানা লোক কাহিনিকে হার মানিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ সফর নিয়ে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে দিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছিলেন রিজভী।
ভারত সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের কথা তুলে ধরে বিএনপি নেতা বলেন, ‘তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন ভারতকে সব দিয়ে দিয়েছেন। অদ্ভুত কথা। আমরা লাইলী-মজনু, শিরি-ফরহাদের প্রেমের কথা শুনেছি, দেবদাস-পার্বতীর প্রেমের কথা শুনেছি। কিন্ত আওয়ামী লীগ সরকার প্রধান শেখ হাসিনা ও ভারতের সঙ্গে প্রেম ইতিপূর্বের সকল প্রেমকে হার মানিয়েছে।’
‘এত প্রেম এর আগে আমরা দেখিনি। তারা না চাইতেই সবকিছু উজাড় করে দিয়ে দেন। তার (শেখ হাসিনা) প্রেম এত গভীর ভারতের জন্য।’
গত ২৫ ও ২৬ মে পশ্চিমবঙ্গ সফর করেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ভবন এবং কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে যোগ দিয়ে সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি নেন শেখ হাসিনা।
সফরে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গেও বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী।
বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে এই দুই বৈঠকের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অনেক প্রশ্ন রাখেন গণমাধ্যমকর্মীরা। তিস্তা নিয়েই বেশি প্রশ্ন করা তাকে। তবে চুক্তি কবে হবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য আসেনি।
তিস্তা নিয়ে নিয়ে যৌথ নদী কমিশন কাজ করছে জানিয়ে অপেক্ষা করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
মোদির সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনা প্রতিদান চেয়েছেন বলে কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার যে খবর প্রকাশ করেছে তাকেও উড়িয়ে দেন তিনি। এক প্রশ্নে বলেন, ‘আমি কোনো প্রতিদান চাই না। প্রতিদানের কী আছে? আর কারও কাছে চাওয়ার অভ্যাস আমার একটু কম। দেয়ার অভ্যাস বেশি।’
‘আমরা ভারতকে যে দিয়েছি, সেটা ভারত সারা জীবন মনে রাখবে’- উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মাটিতে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটি গুড়িয়ে দেয়ার কথা তুলে ধরেন।
‘প্রতিদিনের বোমাবাজি, গুলি, আমরা শান্তি ফিরিয়ে দিয়েছি। এটা তাদের মনে রাখতে হবে। কাজেই আমরা কোনো প্রতিদান চাই না।’
ভারত থেকে এক বালতি পানিও আনতে পারেননি বলে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্যের জবাবে তাকে প্রথমে এক বালতি ও পরে ১০ বোতল পানি পাঠানোর কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
আর পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে রিজভী ‘প্রতিদান না চাওয়ায়’ প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করলেও তাকে পানি পাঠানোর বিষয়ে দেয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাননি।
জোশেফকে মুক্ত করে খালেদা কারাগারে কেন
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া খুনের মামলার আসামি জোশেফকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা ঘোষণা করে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়ারও সমালোচনা করেন রিজভী।
১৯৯৮ সাল থেকে কারাগারে থাকা জোসেফের শাস্তির মেয়াদ আর এক বছরের কিছু বেশি সময় বাকি ছিল। কিন্তু গুরুতর অসুস্থতার কথা জানিয়ে চিকিৎসার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে তিনি আবেদন করেন। আর ২০ বছর সাজা খাটা হয়ে যাওয়ার পর তার সে আবেদন মঞ্জুর করা হয়।
রিজভী বলেন, ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, তিনি নাকি কিছু জানেন না। গোপনে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কি ভয়ংকার অবস্থা। অথচ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী তাকে স্যাঁতসেঁতে ঘরের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। তাকে সঠিক চিকিৎসাও দেয়া হচ্ছে না।’
‘এটা কি জনগণের সরকার? এরা তো গডফাদার, সন্ত্রাসী ও বেআইনি কাজের যারা জড়িত তাদের সরকার।’
শেখ হাসিনার ‘অন্তরের জ্বালা ও বিদ্বেষের কারণে’ খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় এসব করা হচ্ছে। যে যতদিন পারা যায় তাকে কষ্ট দাও।’
সাকার বাড়িতে হামলার নিন্দা
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়া বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর চট্টগ্রামে বাড়ি গুডস হিলে মামলার নিন্দা জানান রিজভী।
সাকা চৌধুরীর ছোট ভাই গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার রাতে এই হামলা হয়।
গিয়াস কাদের বলেছিলেন, শেখ হাসিনার পরিণতি তার বাবার চেয়ে ভয়ঙ্কর হবে। আর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা গত রাতে গিয়াস কাদেরকে তার বাড়িতে খুঁজতে গিয়ে না পেয়ে বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুর করে।
রিজভীর দাবি, গিয়াস কাদের চৌধুরী এই বক্তব্য দেননি। কিন্তু চট্টগ্রামের স্থানীয় পত্রিকা পূর্বকোণ বক্তব্য বিকৃত করে প্রকাশ করে।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবু সাদাত সায়েমের নেতৃত্বে এই হামলার সময় পুলিশ দর্শক হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা।
‘পুলিশ আর আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা একাকার হয়ে গেছে। তারা একেবারে খালাতো ভাইয়ের ভূমিকা পালন করছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সায়েমদের মত সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দিয়ে বেআইনি পন্থায় মানুষকে ধরে নিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে।’
‘যারা অন্যের বাড়িতে হামলা করে তারা কি ভদ্র মানুষ? তারা তো জঙ্গি।’
‘আর বসে থাকার সময় নেই’
দেশের পরিস্থিতি দেখে বসে থাকার সময় শেষ হয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন রিজভী।
‘এসব দেখে মনে হচ্ছে আমাদের আর বসে থাকার সময় নেই। দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আগেই বলেছি আন্দোলনের গতি কেমন হবে তা সরকারের আচরণের উপর নির্ভর করছে।’
