এখন শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্রই । করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যায় অন্যসব দেশকে আগেই ছাড়িয়ে যায় দেশটি। এবার ছাড়ালো মৃত্যুসংখ্যায়ও। ইটালি এখন দ্বিতীয় স্থানে। শনিবার মধ্যরাতের আগেই যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসজনিত মৃত্যুর সংখ্যা ২০ হাজার ৫৮০ জনে পৌঁছে যায়। পাশাপাশি আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ লাখ ৩৩ হাজার ১১৫ জনে। সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সর্বাধিক আক্রান্ত স্টেট নিউ ইয়র্কেও বেড়েছে মৃত্যুসংখ্যা। শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত এখানে মারা যায় ৮ হাজার ৬২৭ জন।
এদিকে শনিবার একদিনেই যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুবরণ করেছেন আরও অন্তত ১২জন বাংলাদেশী।
এরমধ্যে নিউ ইয়র্ক স্টেটে ১১ জন এবং মেরিল্যান্ডে ১ জন।
সবমিলিয়ে গত চার সপ্তাহেরও কম সময়ে এখানে মারা গেলেন ১২৫ জনেরও বেশি
প্রবাসী বাংলাদেশী। গতকাল শনিবার মৃত্যুবরণকারী বাংলাদেশীদের মধ্যে
মেরিল্যান্ডে মারা গেছেন আব্দুল মান্নান নামের একজন প্রবীন চিকিৎসক। তাঁর
বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। নিউ ইয়র্ক সিটিতে মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে রয়েছেন পুলিশ
অফিসার খন্দকার আব্দুল্লাহ’র পিতা খন্দকার সাদেক, নিউ ইয়র্ক ট্রাফিক
পুলিশের সদস্য জয়দেব সরকার, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কর্মকর্তা
খন্দকার মোসাদ্দেক আলী, আসাদুজ্জামান লালা, দেওয়ান আফজাল চৌধুরী, শারমিন
আহমেদ চৌধুরী নীলা ও আজিজুন নেসা। রতন চৌধুরী নামের আরও একজনেনর
মৃত্যুসংবাদ পাওয়া গেলেও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নায়াগ্রা জলপ্রাপতের অদূরে
নিউ ইয়র্ক স্টেটের বাফেলো সিটিতে মৃত্যুবরণ করেছেন দু’জন বাংলাদেশী। এরা
হলেন মোহাম্মদ জাকির ও সামসুজ জহির। এছাড়া নিউ ইয়র্কের লং আইল্যান্ডে
মৃত্যুবরণ করেছেন সিলেটের একটি চা বাগানের সাবেক জেনারেল ম্যানেজার এ
জামান।
অন্যদিকে গত কয়েকদিনে মৃত্যুবরণকারী প্রবাসী বাংলাদেশীদের বেশ
কয়েকজনকে শনিবার নিউ ইয়র্কের পার্শ্ববর্তী নিউজার্সি স্টেটের মার্লবোরো
মুসলিম গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। ওজনপার্কের বাসিন্দা আব্দুস সামাদও
রয়েছেন তাঁদের মধ্যে। বাংলাদেশে তাঁর বাড়ি সিলেটের উপশহরে।আব্দুস সামাদের
পুত্র গিয়াস আহমেদ বেলাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন, হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ
নেওয়ার পর ফিউনারেল হোমের মাধ্যমে গোসল করানোসহ প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া
সম্পন্ন করে দুপুরের দিকে গোরস্থানে নিয়ে যান। সেখানেই তাঁর জানাযা
অনুষ্ঠিত হয় এবং স্বাভাবিকভাবেই দাফন সম্পন্ন করা হয়। বেলাল জানান, আরও বেশ
কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশীর মৃতদেহ এদিন জানাযাসহ প্রয়োজনীয় ধর্মীয়
আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নের মাধ্যমে মার্লবোরো মুসলিম গোরস্থানে দাফন করা হয়।
প্রত্যেকেরই জানাযা অনুষ্ঠিত হয়েছে গোরস্থান এলাকায়। এসব জানাযা ও দাফনে
প্রত্যেক মৃতব্যক্তির পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স¦জনরা অংশ নেন।
এদিকে
একটি ইতিবাচক খবর হলো, মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকলেও নিউ ইয়র্কে টানা
পাঁচদিন ধরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ধীরে
ধীরে কমছে। এই প্রেক্ষিতে গভর্ণর অ্যান্ড্রু কুমো বলেছেন, আগামী কয়েকটি দিন
হয়তো আমাদের জন্য আরও কঠিন সময় যাবে। আমরা হয়তো আরও অনেককেই হারাবো।
কিন্তু হাসপতালগুলোতে নতুন রোগী ভর্তির প্রবণতা যেহেতু নি¤œমুখী সে কারণে
আশা করা যেতে পারে যে কয়েকদিন পর মৃত্যুহারও কমতে শুরু করবে।
এদিকে নিউ
ইয়র্ক সিটির মেয়র বিল ডি ব্লাজিও শনিবার সকারে এক ঘোষণায় জানান যে, করোনা
পরিস্থিতির কারণে সিটির সকল পাবলিক স্কুল চলতি শিক্ষাবর্ষের বাকি সময়টা
(সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) বন্ধই থাকবে। তবে বিকালে রাজ্যের গভর্ণর অ্যান্ড্রু
কুমো তাঁর নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংকালে বলেন, সিটির মেয়র এককভাবে এই
সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এরসঙ্গে অনেক কিছু জড়িত রয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি
হলে যদি অর্থনৈতিক ও দাফতরিক কর্মকান্ড চালু হয়ে যায় তাহলে শিক্ষার্থীদের
মধ্যে যাদের পিতা-মাতা কর্মজীবি তারা বিড়ম্বনায় পড়বেন। সুতরাং মেয়রের
ঘোষণাটিকে আমরা তার মতামত হিসাবেই দেখতে পারি, সিদ্ধান্ত নয়।
