দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হৃদরোগের চিকিৎসায় বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিভিডি) দুর্নীতি অনুসন্ধানে নেমেছে। অনুসন্ধানের তালিকায় রয়েছে চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্রয়ের অনিয়ম। কম দামের মেশিন বেশি দামে এবং অনেক ক্ষেত্রে অকেজো মেশিন ক্রয় করে সরকারের রাজস্বের ক্ষতিসাধনের অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ চিকিৎসা সরঞ্জাম ব্যবহার করায় অনেক ক্ষেত্রে রোগীদের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। সুনির্দিষ্ট ১১টি ক্ষেত্রে এই অনুসন্ধান চলছে বলে সূত্র জানিয়েছে। এসব ক্ষেত্রে দুর্নীতির পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি টাকা।
অভিযোগে রয়েছে, হাসপাতালের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এবং স্বাচিপ নেতারা মিলে দুর্নীতির এই সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। এরা প্রত্যেকেই ঢাকা শহরে ফ্লাট, গাড়ি, বাড়ি ও কোটি কোটি টাকার মালিক। শেয়ার বাজারে এদের রয়েছে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ, রয়েছে সঞ্চয়পত্র। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকার সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন এসব বিষয় তদন্ত করছেন। এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়েছে দুদক। ইতিমধ্যে হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে হাসপাতালটির এসব দুর্নীতি নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
দুদক যেসব ক্ষেত্রে অনুসন্ধান চালাচ্ছে সেগুলো হলো- ইকো কালার ডপলার (সনোসাইট) মেশিন ক্রয়, আল্ট্রাক্লিন অপারেটিং সিস্টেম মেশিন ক্রয়, অটোক্লেভ মেশিন ক্রয়, জীবাণুমুক্ত মেশিন ক্রয়, ১২০টি ভাল্ব ক্রয়, গ্যাস স্ট্যারিলাইজেশন (প্লাজমা) মেশিন ক্রয়, স্ট্রিম স্ট্যারিলাইজেশন মেশিন ক্রয়, ইকো মেশিন মেরামত, সিটি এনজিও মেশিন মেরামত, মেয়াদোত্তীর্ণ চিকিৎসা সরঞ্জাম ব্যবহার এবং ট্রপনিন রি-এজেন্ট ক্রয়ের মধ্যমে এসব দুর্নীতি করা হয়েছে। অভিযোগে জানা যায়, ২০১৩ সালে নিয়ম লঙ্ঘন করে দি স্পন্দন লিমিটেড থেকে অধিক মূল্যে নিম্নমানের ইকো কালার ডপলার ক্রয় করা হয়। এতে সরকারের ৬০ লাখ টাকা ক্ষতিসাধন হলেও মেশিনটি রোগীদের কোনো কাজে আসেনি। ক্রয়ের পর থেকে মেশিনটি বাক্সবন্দি অবস্থায় ছিল। এ বিষয়ে অভিযোগ উত্থাপিত হলে কিছুদিন বহির্বিভাগে প্রদর্শনীর মতো রাখা হলেও পরে আবারো বাক্সবন্দি করে ফেলে রাখা হয়। শুধুমাত্র কমিশন লাভের জন্য অব্যবহারযোগ্য এ মেশিনটি কিনে সরকারের ৬০ লাখ টাকা ক্ষতি করা হয়েছে। এছাড়া মেশিনটি ক্রয়ের ক্ষেত্রেও প্রক্রিয়াগত নানা অনিয়ম রয়েছে। আল্ট্রাক্লিন অপারেটিং সিস্টেম মেশিন ক্রয়ের ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, এতে ১ কোটি ১৫ লাখ ৩৭ হাজার টাকার দুর্নীতি হয়েছে। ২০১১ সালের ১৫ই জুন মেশিনটি ক্রয়ে বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেয়ার পর থেকে মেশিনটি হাসপাতালে পাওয়া যায়নি। মেশিনটি হাসপাতালে না দিয়েই বিল তুলে নেয়া হয়েছে বলে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া শর্ত মোতাবেক ১০ শতাংশ জামানতে পে-অর্ডার দিয়ে চুক্তি করতে বলা হলেও জামানতের ১১ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা পড়েনি। একই তারিখে যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্তকরণের জন্য ৯২ লাখ টাকায় অটোক্লেভ (মিনিমাম-৭০০) মেশিনটি ক্রয়ের জন্য মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনালকে নির্দেশ দেয়া হলেও জীবাণুমুক্তকরণ বিভাগে এ ধরনের কোন মেশিন পাওয়া যায়নি। এক্ষেত্রেও মেশিন না নিয়েই বিল দেয়া হয়েছে। জামানতের টাকাও সরকারি কোষাগারে জমা হয়নি। ২০১৩ সালের ৪ঠা জুন জীবাণুমুক্তকরণ মেশিন স্ট্যারিলাইজিং ক্রয়ের জন্য মেসার্স হাসান এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। কিন্তু কোটি টাকার এ মেশিন না দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ঠিকাদার হাসপাতালে খালি বাক্স সরবরাহ করে। এ ব্যাপারে ২০১৪ সালের ২৯শে অক্টোবর দুদক শেরে বাংলা থানায় একটি মামলাও করে। এক্ষেত্রে ১০ লাখ টাকার জামানতের পে-অর্ডর বা ব্যাংক গ্যারান্টিও জাল। কিন্তু জাল ব্যাংক গ্যারান্টি ব্যাংকের মাধ্যমে যাচাই না করে সঠিক বলে ধরে নিয়ে যে সব কর্মকর্তা এ কার্যাদেশ দিয়েছিলেন তাদের আসামি না করায় প্রকৃত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা পার পেয়ে যান। ২০১১ সালের ১৪ই মে ১২০টি ভাল্ব ক্রয়ের জন্য মেসার্স প্রভি ইন্টারন্যাশনালকে ৫৫ লাখ ৮০ হাজার টাকার কার্যাদেশ দেয়া হয়। সার্জনদের চাহিদামতো ভাল্বের ক্রাইটেরিয়ার সঙ্গে এ ভাল্বগুলোর মিল না থাকায় রোগীরা স্বল্প বা বিনামূল্যে উন্নত চিকিৎসা বঞ্চিত হয়। অন্যদিকে সরকারে অর্ধ-কোটির অপচয় হয়েছে। গ্যাস স্ট্যারিলাইজার (প্লাজমা) মেশিন ক্রয়ে দুর্নীতি হয়েছে ২ কোটি ১৭ লাখ টাকা। ২০১১ সালে ১ কোটি ৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা দিয়ে বেঙ্গল সায়েন্টিফিক এন্ড সার্জিক্যাল কোম্পানি থেকে জীবাণুমুক্ত একটি মেশিন ক্রয়ের পর থেকে ত্রুটি দেখা দেয়। পরের বছর একই কোম্পানি থেকে আরো একটি মেশিন ক্রয় করা হয়। চালু করতে গেলে সেটিও নষ্ট পাওয়া যায়। মেশিন দু’টি অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সংসদীয় কমিটিও তদন্তকালে এর প্রমাণ পেয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার বেলাল আহমেদের যোগসাজশে ২০১৩ সালে সিএমডি থেকে ৩টি স্ট্যারিলাইজার মেশিন হাসপাতালে আনা হয়। কিন্তু দরপত্র কমিটির সদস্য বেলাল মেশিন ৩টি চালু না করেই হাসপাতালের বিল চালানে স্বাক্ষর করে ঠিকাদারকে বিল তুলে নিতে সাহায্য করেন। ইলেক্ট্রিক তারের অজুহাতে ওই সময় মেশিন ৩টি চালু করতে গড়িমসি করা হয়। পরবর্তীতে হাসপাতালের নতুন পরিচালকের দায়িত্ব নিয়ে ডা. আবু আজম মেশিন ৩টি চালানোর উদ্যোগ নিলে লোহার বাক্স খুলে দেখা যায়, মেশিনটির মূল ইঞ্জিনই নেই। এতে ২ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০১৩ সালে ইকো মেশিনটি মেরামত না করেই মেরামতের কাগজ তৈরি করে কোটেশন মেডিটেক ইমেজিং লিমিটেড ২৮ লাখ ৬৫ হাজার ৬০০ টাকা বিল তুলে নেয়। তিন কোটি টাকা দিয়ে সিটি এনজিওগ্রাম মেশিনটি ক্রয়ের পর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবলের অভাবে মেশিনটি চালানোয় সিস্টেম ভুলের কারণে মাঝে-মধ্যে অচল হয়ে পড়তো। এ মেশিনটি মেরামতের ক্ষেত্রেও প্রায় ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠে। বর্তমান এনজিওগ্রাম মেশিনটি মেরামতের নামে আরো প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা আত্মসাতের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ কাছাকাছি সময়ে হাসপাতালে প্রয়োজনের তুলনায় বেশ কয়েকগুণ হার্ট ল্যাং ক্রয় করা হয়। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে ৩৩৯টি ল্যাং প্যাক মেয়াদোত্তীর্ণ হবে বলে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়। পরবর্তীতে ওই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্যাডে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, প্যাকগুলো পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেটি পরিবর্তন করা হয়নি। পরিবর্তনের এ চিঠি তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজ চক্র। এ চক্রটি আগেও মেয়াদোত্তীর্ণ ৭৫টি পেসমেকার ও ১৫০টি স্টেন্ট স্টোরে জমা রেখে কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ প্যাক ব্যবহার করায় ২০১৫ সালের ১৮ই আগস্ট এক ৭ মাসের শিশু মারা যায়। এ হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জাম মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে সরকারের অপচয় ১ কোটি ২৮ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। এছাড়া ট্রপিনন রি-এজেন্ট ক্রয়ের নামে কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দুদক এসব দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে যন্ত্রপাতি ক্রয় ও মেরামতের ব্যাপারে তথ্য-প্রমাণ দিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। এছাড়া এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করতে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তাকে গত ৩০শে অক্টোবর দুদকের ঢাকা জেলা কার্যালয়ে তলবও করা হয়। সূত্র জানিয়েছে, হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. বেলাল খান, একাউন্টস অফিসার নাজমুল হক সিদ্দিক, স্টোর অফিসার ইকরামুল করিম ওইদিন দুদকের ঢাকা জেলা কার্যালয়ে হাজির হয়েছিলেন।
দুদক যেসব ক্ষেত্রে অনুসন্ধান চালাচ্ছে সেগুলো হলো- ইকো কালার ডপলার (সনোসাইট) মেশিন ক্রয়, আল্ট্রাক্লিন অপারেটিং সিস্টেম মেশিন ক্রয়, অটোক্লেভ মেশিন ক্রয়, জীবাণুমুক্ত মেশিন ক্রয়, ১২০টি ভাল্ব ক্রয়, গ্যাস স্ট্যারিলাইজেশন (প্লাজমা) মেশিন ক্রয়, স্ট্রিম স্ট্যারিলাইজেশন মেশিন ক্রয়, ইকো মেশিন মেরামত, সিটি এনজিও মেশিন মেরামত, মেয়াদোত্তীর্ণ চিকিৎসা সরঞ্জাম ব্যবহার এবং ট্রপনিন রি-এজেন্ট ক্রয়ের মধ্যমে এসব দুর্নীতি করা হয়েছে। অভিযোগে জানা যায়, ২০১৩ সালে নিয়ম লঙ্ঘন করে দি স্পন্দন লিমিটেড থেকে অধিক মূল্যে নিম্নমানের ইকো কালার ডপলার ক্রয় করা হয়। এতে সরকারের ৬০ লাখ টাকা ক্ষতিসাধন হলেও মেশিনটি রোগীদের কোনো কাজে আসেনি। ক্রয়ের পর থেকে মেশিনটি বাক্সবন্দি অবস্থায় ছিল। এ বিষয়ে অভিযোগ উত্থাপিত হলে কিছুদিন বহির্বিভাগে প্রদর্শনীর মতো রাখা হলেও পরে আবারো বাক্সবন্দি করে ফেলে রাখা হয়। শুধুমাত্র কমিশন লাভের জন্য অব্যবহারযোগ্য এ মেশিনটি কিনে সরকারের ৬০ লাখ টাকা ক্ষতি করা হয়েছে। এছাড়া মেশিনটি ক্রয়ের ক্ষেত্রেও প্রক্রিয়াগত নানা অনিয়ম রয়েছে। আল্ট্রাক্লিন অপারেটিং সিস্টেম মেশিন ক্রয়ের ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, এতে ১ কোটি ১৫ লাখ ৩৭ হাজার টাকার দুর্নীতি হয়েছে। ২০১১ সালের ১৫ই জুন মেশিনটি ক্রয়ে বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেয়ার পর থেকে মেশিনটি হাসপাতালে পাওয়া যায়নি। মেশিনটি হাসপাতালে না দিয়েই বিল তুলে নেয়া হয়েছে বলে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া শর্ত মোতাবেক ১০ শতাংশ জামানতে পে-অর্ডার দিয়ে চুক্তি করতে বলা হলেও জামানতের ১১ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা পড়েনি। একই তারিখে যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্তকরণের জন্য ৯২ লাখ টাকায় অটোক্লেভ (মিনিমাম-৭০০) মেশিনটি ক্রয়ের জন্য মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনালকে নির্দেশ দেয়া হলেও জীবাণুমুক্তকরণ বিভাগে এ ধরনের কোন মেশিন পাওয়া যায়নি। এক্ষেত্রেও মেশিন না নিয়েই বিল দেয়া হয়েছে। জামানতের টাকাও সরকারি কোষাগারে জমা হয়নি। ২০১৩ সালের ৪ঠা জুন জীবাণুমুক্তকরণ মেশিন স্ট্যারিলাইজিং ক্রয়ের জন্য মেসার্স হাসান এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। কিন্তু কোটি টাকার এ মেশিন না দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ঠিকাদার হাসপাতালে খালি বাক্স সরবরাহ করে। এ ব্যাপারে ২০১৪ সালের ২৯শে অক্টোবর দুদক শেরে বাংলা থানায় একটি মামলাও করে। এক্ষেত্রে ১০ লাখ টাকার জামানতের পে-অর্ডর বা ব্যাংক গ্যারান্টিও জাল। কিন্তু জাল ব্যাংক গ্যারান্টি ব্যাংকের মাধ্যমে যাচাই না করে সঠিক বলে ধরে নিয়ে যে সব কর্মকর্তা এ কার্যাদেশ দিয়েছিলেন তাদের আসামি না করায় প্রকৃত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা পার পেয়ে যান। ২০১১ সালের ১৪ই মে ১২০টি ভাল্ব ক্রয়ের জন্য মেসার্স প্রভি ইন্টারন্যাশনালকে ৫৫ লাখ ৮০ হাজার টাকার কার্যাদেশ দেয়া হয়। সার্জনদের চাহিদামতো ভাল্বের ক্রাইটেরিয়ার সঙ্গে এ ভাল্বগুলোর মিল না থাকায় রোগীরা স্বল্প বা বিনামূল্যে উন্নত চিকিৎসা বঞ্চিত হয়। অন্যদিকে সরকারে অর্ধ-কোটির অপচয় হয়েছে। গ্যাস স্ট্যারিলাইজার (প্লাজমা) মেশিন ক্রয়ে দুর্নীতি হয়েছে ২ কোটি ১৭ লাখ টাকা। ২০১১ সালে ১ কোটি ৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা দিয়ে বেঙ্গল সায়েন্টিফিক এন্ড সার্জিক্যাল কোম্পানি থেকে জীবাণুমুক্ত একটি মেশিন ক্রয়ের পর থেকে ত্রুটি দেখা দেয়। পরের বছর একই কোম্পানি থেকে আরো একটি মেশিন ক্রয় করা হয়। চালু করতে গেলে সেটিও নষ্ট পাওয়া যায়। মেশিন দু’টি অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সংসদীয় কমিটিও তদন্তকালে এর প্রমাণ পেয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার বেলাল আহমেদের যোগসাজশে ২০১৩ সালে সিএমডি থেকে ৩টি স্ট্যারিলাইজার মেশিন হাসপাতালে আনা হয়। কিন্তু দরপত্র কমিটির সদস্য বেলাল মেশিন ৩টি চালু না করেই হাসপাতালের বিল চালানে স্বাক্ষর করে ঠিকাদারকে বিল তুলে নিতে সাহায্য করেন। ইলেক্ট্রিক তারের অজুহাতে ওই সময় মেশিন ৩টি চালু করতে গড়িমসি করা হয়। পরবর্তীতে হাসপাতালের নতুন পরিচালকের দায়িত্ব নিয়ে ডা. আবু আজম মেশিন ৩টি চালানোর উদ্যোগ নিলে লোহার বাক্স খুলে দেখা যায়, মেশিনটির মূল ইঞ্জিনই নেই। এতে ২ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০১৩ সালে ইকো মেশিনটি মেরামত না করেই মেরামতের কাগজ তৈরি করে কোটেশন মেডিটেক ইমেজিং লিমিটেড ২৮ লাখ ৬৫ হাজার ৬০০ টাকা বিল তুলে নেয়। তিন কোটি টাকা দিয়ে সিটি এনজিওগ্রাম মেশিনটি ক্রয়ের পর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবলের অভাবে মেশিনটি চালানোয় সিস্টেম ভুলের কারণে মাঝে-মধ্যে অচল হয়ে পড়তো। এ মেশিনটি মেরামতের ক্ষেত্রেও প্রায় ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠে। বর্তমান এনজিওগ্রাম মেশিনটি মেরামতের নামে আরো প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা আত্মসাতের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ কাছাকাছি সময়ে হাসপাতালে প্রয়োজনের তুলনায় বেশ কয়েকগুণ হার্ট ল্যাং ক্রয় করা হয়। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে ৩৩৯টি ল্যাং প্যাক মেয়াদোত্তীর্ণ হবে বলে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়। পরবর্তীতে ওই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্যাডে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, প্যাকগুলো পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেটি পরিবর্তন করা হয়নি। পরিবর্তনের এ চিঠি তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজ চক্র। এ চক্রটি আগেও মেয়াদোত্তীর্ণ ৭৫টি পেসমেকার ও ১৫০টি স্টেন্ট স্টোরে জমা রেখে কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ প্যাক ব্যবহার করায় ২০১৫ সালের ১৮ই আগস্ট এক ৭ মাসের শিশু মারা যায়। এ হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জাম মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে সরকারের অপচয় ১ কোটি ২৮ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। এছাড়া ট্রপিনন রি-এজেন্ট ক্রয়ের নামে কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দুদক এসব দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে যন্ত্রপাতি ক্রয় ও মেরামতের ব্যাপারে তথ্য-প্রমাণ দিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। এছাড়া এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করতে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তাকে গত ৩০শে অক্টোবর দুদকের ঢাকা জেলা কার্যালয়ে তলবও করা হয়। সূত্র জানিয়েছে, হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. বেলাল খান, একাউন্টস অফিসার নাজমুল হক সিদ্দিক, স্টোর অফিসার ইকরামুল করিম ওইদিন দুদকের ঢাকা জেলা কার্যালয়ে হাজির হয়েছিলেন।
