মার্কেটের ভেতরের অনেক জায়গায় ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছিল। দোকানের ভেতর থেকে ছাদের ফুটো দিয়ে আকাশ দেখা যায়। এমন পরিস্থিতিতে প্রায় দেড় যুগ আগে রায়েরবাজারের মার্কেটটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ঢাকা সিটি করপোরেশন। পরিত্যক্ত ঘোষণার পর থেকে মার্কেটের ৫৮৩টি দোকান থেকে রাজস্ব পাচ্ছে না সিটি করপোরেশন। ভবনটি নতুন করে নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু উচ্চ আদালতে রিট করার পরিপ্রেক্ষিতে সেই উদ্যোগ থেমে যায়।
জীবনের ঝুঁঁকি নিয়ে মার্কেটে কেনাকাটা করছেন মানুষ। ভূমিকম্প কিংবা যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভেঙে পড়তে পারে মার্কেটটি, ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল ৫-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বী আহমেদ বলেন, ‘২০০৬ সালে তৎকালীন অবিভক্ত সিটি করপোরেশনের বিশেষজ্ঞ টিম মার্কেটটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। যেহেতু পরিত্যক্ত, তাই সিটি করপোরেশন রাজস্ব আদায় করতে পারে না। আমাদের মেয়র মহোদয় শিগগিরই দোকান মালিকদের সঙ্গে বসবেন। মার্কেটটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করার উদ্যোগ নেবেন। তার আগে বরাদ্দপ্রাপ্তদের কিভাবে পুনর্বাসন করা যায়, সে বিষয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’
দোতলা মার্কেটটি পড়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল ০৫-এর ৩৪ নম্বর ওয়ার্র্ডে। পরিত্যক্ত ঘোষণার পর ওপরের তলা ভেঙে ফেলা হয়। এরপর ২০০৯ সালের আবারও পরিত্যক্ত ঘোষণা করে সিটি করপোরেশন। দফায় দফায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করলেও একদিনের জন্যও দোকান বন্ধ রাখেননি ব্যবসায়ীরা। এরই মধ্যে মার্কেটে বরাদ্দপ্রাপ্ত দোকান মালিকরা হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্ছেদের আগে দোকান মালিকদের পুনর্বাসনের নির্দেশনা দেয় হাইকোর্ট। এরপর থেকে মার্কেট নির্মাণ কার্যক্রম থমকে আছে।
সিটি করপোরেশনের রাজস্ব শাখা জানায়, দোকানের প্রতি বর্গফুটের ভাড়া ছিল ৩ টাকা ৫০ পয়সা। দোকানের সংখ্যা ৫৮৩টি। এর মধ্যে ১০০ ও দেড় শ বর্গফুটের দোকান বেশি। এগুলোর চেয়ে বড় কিছু দোকানও আছে। গড়ে ১০০ বর্গফুটের দোকান ধরে হিসাব করলে ৫৮৩টি দোকান থেকে মাসে গড়ে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৯০০ টাকা রাজস্ব পাওয়া যেত। তাতে বছরে ২০ লাখ ৯৮ হাজার ৮০০ টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সিটি করপোরেশন। ফলে গত ১৬ বছরে প্রায় ৩ কোটি ৩৫ লাখ ৮০ হাজার ৮শ টাকা রাজস্ববঞ্চিত হয়েছে সিটি করপোরেশন।
‘সিটি করপোরেশন রাজস্ব হারাচ্ছে রায়েরবাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুল জলিল বলেন। আমরাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা করছি। আমরা একাধিকবার মেয়রসহ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাদের কাছ থেকে শুধু একটাই আশ্বাস চেয়েছি, আমাদের পুনর্বাসন করার ব্যবস্থা করুক আগে। আর মার্কেট সংস্কারের পর আমরা যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দোকান পাই, সেই নিশ্চিয়তা দিতে হবে।’
