গত ১৭ দিনে মোট ৯০ জন রোহিঙ্গা চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে এসেছিন গত ২৪ আগস্ট আরাকান রাজ্যে সেনা ক্যাম্পে হামলার পর মিয়ানমার সেনা বাহিনির নির্যাতনের শিকার হয়ে। যাদের অধিকাংশই গুলিবিদ্ধ বা বিস্ফোররণে দগ্ধ।
আহত অবস্থায় হাসপাতালে আসার পর একজন গত ২৬ আগস্ট এবং একজন ৩০ অগাস্ট মারা যান। নানাভাবে জখম হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ও অগ্নিদগ্ধ নারী-পুরুষ ও শিশু রয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল সূত্র রবিবার দুপুরে ব্রেকিংনিউজকে এ তথ্য জানিয়েছে।
সবশেষ গতকাল শনিবার ও রবিবার গুলিবিদ্ধ আরও ১৩ রোহিঙ্গা চমেকে ভর্তি হয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন থেকে গুলি আর বোমার জখম নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের পর চিকিৎসা নিতে চমেক হাসপাতালে আসে এসব রোহিঙ্গা নাগরিকদের অধিকাংশই।
সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গারা চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে বলে মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার ব্রেকিংনিউজকে জানান।
আহতদের মধ্যে মো. ইউনুস (২০), মো. আলম (২০), বশির উল্লাহ (৬৫) ও খালেদ হোসেন (২৫) গুলিবিদ্ধ এবং হোসাইন জোহা (২২) এসেছেন বোমার ক্ষত নিয়ে।
মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার ব্রেকিংনিউজকে জানান, শনিবার রাত সোয়া ১০টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে ওই ৯ জনকে হাসপাতালে আনা হয়। তারা হলেন- মো. হামিদ হোসেন (৪০), মো. তাহের (১৯), আবুল কালাম (৩৫), মোছাম্মৎ আদিজা (১১), ফাতেমা (১৫), বশির উল্লাহ (২৪), মঞ্জুর রহমান (২৫), করিম উল্লাহ (৪৬) ও শামসুল আলম (৩৫)।
তাদের মধ্যে শামসুল আলম টেকনাফে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। অন্যরা গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে এসেছেন বলে এএসআই আলাউদ্দিন জানান।
এছাড়া রবিবার আরও ৪ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তিনি বলেন, ‘আহতদের মধ্যে ৮ জন টেকনাফের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে মেডিসিন এমএসএফ হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে পাঠানো হয়।’
প্রসঙ্গত, গত মাসের ২৪ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে পুলিশ পোস্ট ও সেনা ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় সীমান্ত পেরিয়ে ফের বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নামে।
এখন পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে বলে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক এই মানবাধিকার সংস্থাটি জানিয়েছে, আরও প্রায় লাখ পাঁচেকের মতো রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিতে রাখাইনে অপেক্ষমান আছে।
ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোয়, তাদের আশ্রয় দেয়ায় ও তাদের কাছে সহায়তা পৌঁছে দেয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখায় রবিবার মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
অন্যদিকে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ায় উদারতার পরিচয় দিচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার মুখপাত্র ভিভিয়ান ট্যান।
এদিকে প্রাণ বাঁচাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প পরিদর্শন করতে আগামী মঙ্গলবার কক্সবাজারে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
