র‌্যাব ঢাকার অদূরে আশুলিয়ার গাজিরচট এলাকায় র‌্যাবের অভিযানে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়া ব্যক্তিই নব্য জেএমবির আমীর বলে জানিয়েছে । সে সময় ওই বাসা থেকে উদ্ধারকৃত পাসপোর্ট দেখে র‌্যাব জানিয়েছিল তার নাম আব্দুর রহমান। কিন্তু, র‌্যাব প্রাথমিক তদন্তে জানতে পারে ওই বাসা থেকে উদ্ধারকৃত পাসপোর্ট এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স ভুয়া। আব্দুর রহমানের আসল নাম সারোয়ার জাহান ওরফে শাইখ আবু ইব্রাহিম আল হানিফ। সারোয়ার জাহানের আরো ২১ জন সহযোগী অধরা রয়েছে। যার মধ্যে ৩ জন মজলিশে শূরার সদস্য। ওই ২১ জন মাঠপর্যায়ে নব্য জেএমবির নেতৃত্ব দিচ্ছে।  ওই নব্য জেএমবির নেতা গুলশানের তাভেলা হতাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজারের বিসিআইসি ভবনে র‌্যাবের নতুন মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ৮ই অক্টোবর ঢাকার আশুলিয়ার গাজীরচট এলাকায় অভিযান চালায় র‌্যাব। এ সময় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি প্রধান আব্দুর রহমান ওরফে মোক্তার ওরফে প্রকাশ পালানোর চেষ্টাকালে পাঁচ তলা থেকে নিচে পড়ে গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে আশুলিয়ার ওই বাসা থেকে র‌্যাব ২৯ লাখ ৯৮ হাজার ৮৬ টাকা, ১টি পিস্তল ও ২২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে। ওই বাসা থেকে উদ্ধারকৃত পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্সে প্রকৃত পরিচয় ছিল না। ওই পরিচয় ছিল ভুয়া।
র‌্যাব ডিজি বলেন, তার আসল নাম সারোয়ার জাহান। বাবার নাম আব্দুল মান্নান। মায়ের নাম ছালেহা খাতুন। গ্রামের বাড়ি  চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট থানার মুশরিভুজা এলাকায়। স্থানীয় পর্যায়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, সে ১৯৯৮ সালের পর হতেই জেএমবি’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ২০০৩ সালে জেএমবি নেতা বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে একদল জঙ্গিসহ জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে মনতেজারের বাড়িতে পুলিশের সঙ্গে সশস্ত্র দাঙ্গায় লিপ্ত হয়। অতঃপর ২০০৩ সালে সারোয়ার গ্রেপ্তার হলে প্রায় নয় মাস চারদিন কারাভোগের পর জামিন পেয়ে সে দেড় মাসের মতো বাড়িতে অবস্থান করে এবং পরে আত্মগোপনে চলে যায়। সে কোনো এক কওমি মাদরাাসা হতে দাওরা পাস করে। সে বাংলা ছাড়াও ইংরেজি, আরবি ও উর্দু ভাষায় পরদর্শী ছিল বলে জানা যায়।
তিনি আরো জানান, ইতিমধ্যে র‌্যাব কর্তৃক আব্দুর রহমানের একাধিক চিঠি, মেইল, এবং ক্ষুদে বার্তা হস্তগত হয়, কয়েকটি চিঠিতে সে শাইখ আবু ইব্রাহিম আল হানিফ নাম ব্যবহার করে স্বাক্ষর করেছেন এবং এ ছাড়াও বাংলাদেশের নব্য জেএমবির আমীর হিসাবে জঙ্গিবাদে ব্যবহৃত সমুদয় অর্থায়নের কিছু হিসাব পাওয়া যায়। এ ছাড়াও নব্য জেএমবির অপারেশনের নথিপত্র ও হস্তগত হয়। এতে এটাই প্রমাণ করে যে, আব্দুর রহমানই হলো বর্তমান সময়ের নব্য জেএমবি’র আমির “শাইখ আবু ইব্রাহিম আল হানিফ” যার  মূল নাম সারোয়ার জাহান।
তিনি জানান, ২৭শে আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় জঙ্গি তামিম চৌধুরী নিহত হয়। ওই দিন তামিম এই নব্য জেএমরির প্রধানের সঙ্গে প্রায় ১ ঘণ্টা ১৬ মিনিট কথা বলেছে। ওই মোবাইল আলাপে তামিমকে নব্য জেএমবির নেতা সারোয়ার পুলিশের ওপর আক্রমণের জন্য নির্দেশ দিয়েছিল। নব্য জেএমবির প্রধানের কতজন অনুসারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, সারোয়ার জাহান ওরফে আব্দুর রহমানের তালিকা অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ২১ জন নব্য জেএমবির সদস্য পলাতক রয়েছে। তারা মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন অপারেশন চালায়। তার মধ্যে তিনজন হচ্ছে মজলিশে সশূরা সদস্য। তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়াও আর যেন কেউ জঙ্গিবাদে জড়িত না হয় এজন্য র‌্যাবের পক্ষ থেকে জঙ্গি বিরোধী অভিযানের পাশাপাশি জনসচেতনার জন্য কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। নব্য জেএমবির সঙ্গে আন্তর্জাতিক কোন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে কোন যোগাযোগ ছিল কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান আবুল কালাম আজাদ, আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান, উপ-পরিচালক মেজর রইসুল আজম মনি ও উপ-পরিচালক এএসপি মিজানুর রহমান প্রমুখ।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031