সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ ৮ দফা দাবিতে আজ ২৮ অক্টোবর রোববার সকাল ছয়টা থেকে দেশজুড়ে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। তবে রাস্তায় কোন রকম পিকেটিং, ব্যারিকেড থাকবে না। পরিবহন মালিক শ্রমিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই কর্মবিরতি পালন করবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী গতকাল রাতে  জানান, সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ বাতিলসহ আট দফা দাবিতে ২৮ ও ২৯ অক্টোবর সারাদেশে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে পরিবহন শ্রমিকরা। দাবি না মানলে ৩০ অক্টোবর থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে সড়ক পরিবহন আইন পাশ হওয়া পর থেকে পরিবহন সেক্টরে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারই ফলশ্রুতিতে এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ কর্মবিরতির কর্মসূচি ঘোষণা করে। কর্মবিরতি আহবানের প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন-এআইনে শ্রমিক স্বার্থ পরিপন্থী ধারা রয়েছে। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনাকে দুর্ঘটনা হিসেবে গণ্য না করে, অপরাধ হিসেবে গণ্য করে আইন পাস করা হয়েছে। আইনে সড়ক দুর্ঘটনা মামলায় অপরাধী হয়ে ফাঁসির ঝুঁকি রয়েছে। এমনই অনিশ্চিত ও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পেশায় দায়িত্ব পালন করা শ্রমিকদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে আন্দোলন ছাড়া বিকল্প কোনো পথ দেশের পরিবহন মালিক শ্রমিকদের সামনে খোলা নেই। এআইনের সংশোধন ও সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে উক্ত কর্মবিরতি পালন করা হবে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন পূ্‌র্বাঞ্চল কমিটির (চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ) সভাপতি মৃণাল চৌধুরী  বলেন, আমাদের দাবিগুলো স্পষ্ট এবং মেনে নেয়ার মতো। কেননা ফাঁসির দড়ি গলায় ঝুলিয়ে চালক কেন গাড়ি চালাবেন ? আমাদের দাবিগুলো হলো- সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০২ ধারায় মামলা গ্রহণ করা যাবে না, সড়ক দুর্ঘটনায় সব ধরনের মামলা জামিনযোগ্য করতে হবে। শ্রমিকদের অর্থদন্ড ৫ লাখ টাকা করা যাবে না। ড্রাইভিং লাইসেন্সে শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি করতে হবে। সহজ শর্তে ভারী যানবাহন চালানোর লাইসেন্স দিতে হবে, ওয়েস্কেলে জরিমানা কমানো ও শাস্তি বাতিল করতে হবে। গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের সময় শ্রমিকদের নিয়োগপত্র সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সত্যায়িত স্বাক্ষর থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। সড়কে পুলিশের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। সকল জেলায় শ্রমিকদের ব্যাপকহারে প্রশিক্ষণ দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করতে হবে। লাইসেন্স ইস্যুর ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, পরিবহন শ্রমিকরা সারা দেশে স্বত:স্ফূর্তভাবে কর্মবিরতি পালন করবে। আগামীকাল (রোববার) থেকে ভর্তি পরীক্ষার সময় এ ধরনের কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের আতঙ্কিত করবে এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করলে তিনি বলেন, ভর্তি পরীক্ষার্থীদের বহনকারী পরিবহনে কোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না করতে পরিবহন মালিক শ্রমিকদের প্রতি স্পষ্ট নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরআগে গত ৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদে সদ্য পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ সাত দফা দাবিতে পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ধর্মঘট শুরু হয়েছিল। সেই সময় ৯ অক্টোবর বিকেল ৪টায় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছিল ট্রাক পরিবহন শ্রমিকরা। গত ২৬ অক্টোবর কেরানীগঞ্জে ট্রাকচালক-শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শ্রমিক নিহত হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবার একই দাবি নিয়ে ফুঁসে উঠে পরিবহন শ্রমিকরা এবং কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন (আঞ্চলিক কমিটির) সভাপতি মো: মুছা  বলেন, আমরা জানি দুর্ঘটনা পরিকল্পিতভাবে ঘটে না কিন্তু অপরাধ পরিকল্পিতভাবেই ঘটে। দুর্ঘটনা মামলার তদন্ত করে অপরাধী হিসেবে বিচারে ৩০২ ধারায় শ্রমিকদের ফাঁসির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এমনিতেই প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে পরিবহন শ্রমিকরা রাস্তায় গাড়ি চালায়, তার ওপর আবার বিচারে মৃত্যুর ঝুঁকি। এ কারণে শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে পেশা ছেড়ে দেবার চিন্তা শুরু করেছে।

x
Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031