মাত্র ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ৫০ কেজি ওজনের একটি পেঁয়াজের বস্তা । এও কী সম্ভব ? কিছুদিন আগেওতে ছিল কেজি ৩০০ টাকা।
বিক্রেতারা বলছেন ১০ টাকা দিয়েও অনেকে কিনছে না। বাধ্য হয়ে ডাস্টবিনে ফেলে আসতে হচ্ছে। ফেলতে দেয়ার খরচটুকুও বাড়তি ক্ষতি।
বুধবার চট্ট্রগ্রামের পেঁয়াজ বাজারের আড়তগুলোর ছিল এই হাল। যারা কিছুদিন আগেও পাবলিকের টাকায় পকেট ভারী করে বুক ফুলিয়ে গদিতে বসতো, তারা যেন হঠাৎ চুপসে গেছে একেবারে।
বাজারে স্বাভাবিকভাবে ১৭ থেকে ২৫ টাকা দরে পেঁয়াজ কেজিতে বিক্রি হতো। তার বিপরীতে মজুতদার ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির ফলে সে পেঁয়াজের দর পৌছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়।
বেশি লাভের আশায় অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট পেঁয়াজ মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কমলে হু হু করে বাড়ে পেঁয়াজের দাম।
তবে এবার বেআইনিভাবে পেঁয়াজ মজুদ করা যেন তাদের জন্য কাল হয়েছে। অধিক সময় সংরক্ষণের কারণে গ্যাজ গজিয়ে পঁচে যাচ্ছে শত শত মেট্রিক টন পেঁয়াজ। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে দেখা মিলছে বস্তা বস্তা পচন ধরা পেঁয়াজ।
যার ফলে, ১ কেজি নয়, পেঁয়াজের পুরো ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০ টাকায়। বিশ্বের নানা দেশ থেকে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে আনা পেঁয়াজ পচে যাওয়ায় এমন দুরবস্থা। এমনকি টাকা দিয়ে গাড়ি ডেকে এনে ফেলেও দেয়া হচ্ছে পচা পেঁয়াজ।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, রপ্তানিকারক দেশে জাহাজ ভর্তি করার সময় কনটেইনার সংক্রান্ত অসচেতনতা ও জাহাজের তাপমাত্রা যথাযথ না থাকায় পেঁয়াজ পঁচে যাচ্ছে।
খাতুনগঞ্জ এলাকার হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিছ বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ গুলো বন্দরে আসার পর কাগজপত্র জটিলতায় ডেলিভারি পেতে দেরি হয়।
আবার পাকিস্তান ও মায়ানমারের থেকে আসা পেঁয়াজগুলো অনেক পুরনো। নানা কারণে মূলত পেঁয়াজ পঁচলেও ব্যবসায়ী নেতারা একবারও স্বীকার করলেন না অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের মজুদের কারণে পেঁয়াজ ব্যবসায় এমন সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এ দায় কার। বারবার কী এমন অস্থিরতার মাশুল দিতে থাকবে সাধারণ ভোক্তারা ?
এ বিষয়ে কথা হয় চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাহবুবুল আলমের সাথে। তিনি বলেন, পেঁয়াজ, আদা, রসুন এসব জিনিস বেশিদিন রাখা যায় না, পঁচে যায়। আমাদের দেশে এগুলো সংরক্ষণ করার কোনো ওয়ার হাউস নেই।
নর্থ বেঙ্গলে চাতালে রেখে পেঁয়াজ মজুত করে ওরা। দাম বাড়লে তারা বাজারে ছাড়ে। আমাদের চট্টগ্রামে মজুত করার সুযোগ নাই। বাজারে পণ্যের চেয়ে চাহিদা কম, তাই এমন হচ্ছে।
এদিকে নগরীর চাক্তাই খালে বস্তায় বস্তায় ফেলা হচ্ছে পঁচা পেঁয়াজ। ফলে ব্যাহত হচ্ছে খালের পানি চলাচল। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।
ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া প্রতিরোধে মঙ্গলবার চকবাজার ধনিয়ার পুল এলাকায় চাক্তাই খালের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার কার্যক্রম ও ওষুধ ছিটাতে গেলে এই নাজুক অবস্থা প্রত্যক্ষ করেন প্রশাসক।
এ সময় প্রশাসক বলেন, খাল নালা হলো পানি চলাচলের পথ। অথচ খালে ফেলা হচ্ছে পঁচা পেঁয়াজ, আবর্জনা। এটা তো কাম্য নয়। ব্যবসায়ী নামে এসব গণদুশমনকে প্রতিহত করতে হবে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031