রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট সমাধানে মিয়ানমারে নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায় বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা এই ইস্যুর সমাধানে উপায় বের করার কাজে মিয়ানমারের নতুন নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে আছি। আমি ইতোমধ্যে এ বিষয়ে অং সান সু চিকে কিছু আভাসও দিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার অপরাহ্নে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিল চেম্বারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আয়োজিত ‘লিডারশিপ সামিট অন রিফিউজস’ বিষয়ে বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত তিন দশকে মিয়ানমার থেকে আসা বিপুল সংখ্যক শরণার্থী ও উদ্বাস্তুকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে। সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ওই মানুষদের দায়িত্ব বহন করে চলেছে।

উগ্রবাদী বৌদ্ধদের আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে গত কয়েক দশক থেকে মিয়ানমার থেকে মুসলিম রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসছে বাংলাদেশে। সে দেশের সরকারের দাবি, তারা মিয়ানমারের নাগরিক নন।

১৯৫৮, ১৯৭৮ ও ১৯৯২ সালে নির্যাতনের মুখে নদী ও সমুদ্র পারি দিয়ে ব্যাপকহারে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে ২৫ হাজার নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ২৫ হাজারের মত হলেও প্রকৃত সংখ্যা আড়াই লাখের বেশি বলে ধারণা করা হয়।

বাংলাদেশ সরকার বারবার তাগাদা দিলেও রোহিঙ্গাদেরকে নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখায়নি মিয়ানমার। এ নিয়ে একাধিকবার আশ্বাস দিলেও বাংলাদেশের সঙ্গে পরে আর কাজ করেনি দেশটি। আর এখনও নানা সময় দেশটি থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। এরা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে এবং এ কারণে সামাজিক নানা সমস্যাও তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বলেন, ‘এতে বাংলাদেশ বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে।’ তিনি বলেন, মিয়ানমারের শরণার্থীদের ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও দক্ষতার বিষয়ে সরকার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছে। তাদেরকে উন্নত মানের আশ্রয়স্থলের ব্যবস্থা ও আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্যও মনযোগ দেয়া হবে।

রোহিঙ্গাদের শনাক্ত করতে নতুন উদ্যোগ নেয়ার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমরা তাদেরকে ‘তথ্য কার্ড’ শীর্ষক পরিচয়পত্র প্রদানের জন্যও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এই পরিচয়পত্র ন্যায়বিচার, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও অন্যান্য সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে তাদের জন্য সহায়ক হবে।’

শরণার্থী ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। বলেন, ‘কাউকে পেছনে ফেলে না রাখার আমাদের যে অঙ্গীকার তা বাস্তবায়নে আমাদেরকে অবশ্যই জনগণকে সুশৃংখল, নিরাপত্তা, নিয়মানুবর্তিতা ও দায়িত্বের প্রতি উন্নয়ন সাধনে কাজ করতে হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ ও পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031