ড. আবদুল মঈন অনেকটা গোপনীয়তা বজায় রেখেই কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কূটনৈতিক কোরের প্রধান। গত বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে তার গুলশান-২-এর ৩৬ নম্বর রোডের বাসায় ১৪টি দেশের রাষ্ট্রদূত ও চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সরা এই বৈঠকে অংশ নেন। তিনঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে আলোচনা করা হয় আগামী নির্বাচন, নির্বাচন কমিশনসহ রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে। এ সময় বিএনপির তরফে কূটনীতিকদের স্ব-স্ব অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার অনুরোধ করা হয়। যদিও বিএনপির কোনও কোনও নেতা বলছেন, এটি বৈঠক নয় নৈশভোজ ছিল।

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে চেষ্টা করলে মঈন খানের মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে। এছাড়া বাসায় টেলিফোনে রিং হলেও রিসিভ করা হয়নি। জানাতে চাইলে বিএনপির মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘আমাকে মঈন খান জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার কোনও বৈঠক ছিল না, তার পারিবারিক আয়োজনের অংশ হিসেবে নৈশভোজ ছিল। গত বছর আমি ছিলাম, সেখানে ঈদ-শুভেচ্ছা ও আড্ডাই ছিল বেশি।’ তিনি জানান, ‘বৃহস্পতিবারের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, চিন, ইইউ, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, জাপান, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, ভুটানের রাষ্ট্রদূত ও চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া আমেরিকান সেন্টারের প্রধান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের পলিটিক্যাল কাউন্সিলর ও ঢাকাস্থ এনবিআই প্রধানও অংশ নেন এতে।’

জানতে চাইলে বিএনপির কূটনৈতিক কোরের আরেক সদস্য, স্থায়ী কমিটির মেম্বার আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী  বলেন, ‘এই নৈশভোজ বিএনপির পক্ষ থেকে নয়, মঈন খানের ব্যক্তিগত নিমন্ত্রণে হয়েছিল।’

বিএনপির দলীয় একটি সূত্র জানায়, দলটির কূটনৈতিক কোরের প্রধান দায়িত্বশীল আবদুল মঈন খান। বরাবরই ঈদের সময় কূটনীতিকদের সঙ্গে নিজের বাসায় নৈশভোজের আয়োজন করেন। বিগত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বরও তার গুলশানের বাসায় কূটনীতিকদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। ওই আমন্ত্রণে অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড ও কুয়েতের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স, বাহরাইন ও আরব আমিরাত দূতাবাসের প্রতিনিধিরা থাকলেও এ বছর এই দেশগুলোর কেউ ছিলেন না।

বিএনপির দলীয় সূত্রগুলো জানায়, বিগত দিনে মঈন খানের বাসায় হলেও বিএনপির নেতারা অনেকে উপস্থিত থাকতেন। এ বছর এ আয়োজনের ব্যাপারটি অনেকের অজানা। কূটনৈতিক কোরের সদস্য ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী  বলেন, ‘নৈশ্যভোজ ছিল। কিন্তু আমি জানি না, যেহেতু আমি দাওয়াত পাইনি। ফলে, জানার কোনও সুযোগ নেই, যে নৈশভোজ কেন হয়েছে।’

মঈন খানের ঘনিষ্ঠ বিএনপি নেতা জানান, ‘বৃহস্পতিবার হজ করে দেশে ফেরেন খালেদা জিয়া। এ কারণে অন্য নেতারা হয়তো যেতে পারেননি। ’

পারিবারিকভাবে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র দাবি করে, খান ফাউন্ডেশনের প্রধান ও মঈন খানের স্ত্রী অ্যাডভোকেট রোকসানা মঈন ফোন করে কূটনৈতিকদের দাওয়াত দিয়েছেন। মূলত মঈন খান গত বছর খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

দলীয় সূত্র জানায়, এ বছর হজ পালনে সৌদি সফর করার কারণে ঈদে কূটনৈতিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পারেননি খালেদা জিয়া। এ কারণে মঈন খানকেই উদ্যোগ নিয়ে তার বাসায় নৈশভোজ করানোর কথা বলা হয়েছিল। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ভারত-পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা ছিলেন না।

মঈন খানের ঘনিষ্ঠ একজন জানান, ‘বৈঠকে মার্কিন নির্বাচন, কাশ্মির নিয়ে ভারত-পাকিস্তান অস্থিরতা, বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন এবং সম্ভাব্য নির্বাচন কমিশন নিয়েও আলোচনা হয়।’ যদিও বিষয়টি নিয়ে বিএনপির কোনও নেতা মুখ খুলছেন না।

একজন ভাইস চেয়ারম্যান নিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে  বলেন, ‘মঈন খান আড্ডাপ্রিয় মানুষ। তার দেশে-বিদেশে বন্ধুবান্ধব আছেন। তাদের সঙ্গে আড্ডা দেন। গত বছরও আড্ডা দিয়েছেন।’

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রবীণ এক সদস্য  বলেন, ‘বৃহস্পতিবারের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীনসহ পশ্চিমা দেশগুলো থাকলেও ভারত ও আরব বিশ্বের কয়েকটি দেশ অনুপস্থিত ছিল। ফলে সুনির্দিষ্ট কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তা আন্দাজ করা কঠিন। তবে কূটনীতিক ডেকে তো চা পান করানো বড় বিষয় নয়, কিছু ব্যাপার তো থাকেই।’

কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে বিএনপিকে কোনও কথা বলা হয়েছে কিনা, এ নিয়ে কোনও তথ্য জানা সম্ভব হয়নি।- বাংলা ট্রিবিউন

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031