বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন পর্নোগ্রাফি দেখার প্রবণতার পাশাপাশি এখন দেশের অনেক শিশু পর্নোগ্রাফি বানানোর মতো ভয়ংকর কাজে যুক্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে ।

আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়। এখানে ‘বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি: সংবাদপত্র বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ অভিমত’  শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে উন্নয়ন সংস্থাটি। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সংস্থাটির প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর মামুন আল মাহমুদ।

প্রতিবেদন উপস্থাপন শেষে এক প্রশ্নের জবাবে মামুন বলেন, “২০১২ সালের এক গবেষণায় আমরা পেয়েছি ৭৭ শতাংশ শিশু পর্নোগ্রাফি দেখছে। এই চিত্রটি সারা দেশে আসলে ভয়াবহ।  বর্তমানে হয়তো এই চিত্র আরও ভয়াবহ। তবে এখন যে নতুন প্রবণতা দেখছি, শিশুরা শুধু পর্নোগ্রাফি দেখছেই না বানানোর কাজেও যুক্ত হচ্ছে। সেটা প্রায় ৩০ শতাংশ । বাস্তব ক্ষেত্রে এই চিত্র খুবই ভয়াবহ।

স্থানীয় পর্নোগ্রাফির ব্যাপক চাহিদার সুযোগটিই দুষ্টচক্র নিচ্ছে বলে জানান মামুন। তিনি বলেন, “আমাদের দেশে স্থানীয় পর্নোগ্রাফির চাহিদা খুব বেশি। এ কারণে আন্তর্জাতিক যে পর্নো সাইট রয়েছে সেদিকে না ঝুঁকে শিশুরা এ ধরনের জঘন্য কাজে যুক্ত হচ্ছে। এটি আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য অশনিসংকেত।”

পর্নোগ্রাফি প্রতিরোধে দেশে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না জানিয়ে ২০১২ সালের পর্নোগ্রাফি আইনের কথা তুলে ধরেন।  বলেন, “আমাদের দেশে আইন আছে। কিন্তু আইনের যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না। এ আইনটি সম্পর্কে মানুষ  জানে না। এ কারণে পর্নোগ্রাফির অনেক মামলা হচ্ছে আইসিটি আইনে। এটা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। পর্নোগ্রাফি আইন সম্পর্কে মানুষকে জানানোর পাশাপাশি সরকাকে এই বিষয়ে ভূমিকা পালন করতে হবে।

প্রতিবেদনে বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়।  তারা মনে করছেন,  শিশুরা এভাবে পর্নোগ্রাফিতে জড়িয়ে যাওয়ার পেছনে বাবা-মায়ের অসচেতনতার চেয়ে অজ্ঞানতাই বেশি দায়ী। কারণ বাবা-মা প্রযুক্তির নিরাপদ ব্যবহার জানেন না।

বৈজ্ঞানিকভাবে শিশু-কিশোরদের জন্য যৌনশিক্ষার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বয়স উপযোগী করে শিশুকে বিষয়গুলো সম্পর্কে জানাতে হবে। কী করা উচিত কী  করা উচিত নয় সে সম্পর্কে শিশুকে স্পষ্ট ধারণা দিতে হবে। শিশুদের প্রযুক্তি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় নীতিমালা থাকা উচিত বলে প্রতিবেদনে অভিমত দেয়া হয়।

শিশু হত্যা, যৌন নির্যাতন

প্রতিবেদনে ২০১৫ সালে সংঘটিত শিশু ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যু, শিশু হত্যা, হত্যা চেষ্টা ও অপহরণ, রাজনৈতিক সহিংসতা, নির‌্যাতন, বাল্যবিয়ে, আত্মহত্যা, দায়িত্বে অবহেলা, নিখোঁজসংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, ২০১৫ সালে সংবাদপত্রের প্রকাশিত খবরের হিসেবে ২৯০ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়,  এর মধ্যে ৪১ জন শিশু মৃত্যুবরণ করে, ২৪৯ জন শিশু গুরুতর আহত হয়। এসব শিশুর মধ্যে মধ্যে ৮ জন ছেলে ও ২৮২ জন মেয়ে।

প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান অনুয়ায়ী, আটটি ছেলেশিশু মাদ্রাসাশিক্ষক ও বন্ধুর দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়। আর মেয়েশিশুরা প্রতিবেশী, শিক্ষক, প্রেমিক ও পরিচিতজনদের হাতে নিজের বাড়িতে ধর্ষণের শিকার হয়। এ ছাড়া ৩৪ জন শিশু যৌন নির‌্যাতনের শিকার হয়। এদের মধ্যে তিনশিশু মারা যায়। আর বাকি ৩১ শিশু আহত হয়।

গত বছর হত্যার শিকার হয় ২৮৫ জন শিশু। অপহৃত হয় ৮৯ জন। এদের মধ্যে ৪১ জনের লাশ পাওয়া গেছে।

গত বছর রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়েছে ১০৬ জন শিশু। এর মধ্যে ১৫ জন শিশু মারা যায়। ৯১ জন আহত হয়।

১২টি নেতিবাচক ও ২১টি ইতিবাচক চলক ধরে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। গত একবছরের সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরকে এর মূল ভিত্তি ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, পারভীন মাহমুদ ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ।

 

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031