যুক্তরাষ্ট্রে এক বাংলাদেশীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে আইএসকে সমর্থন ও এক সেনা সদস্যকে হত্যা পরিকল্পনায় জড়িত থাকার দায়ে । মেরিল্যান্ডের হায়াতসভিলে বসবাসকারী ২৪ বছর বয়সী ওই যুবকের নাম নীলাশ মোহাম্মেদ দাস। শুক্রবার তাকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতে হাজির করা হয়েছিল সোমবার । বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে আবারও শুনানির কথা রয়েছে। সে পর্যন্ত তাকে আটক রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এফবিআইয়ের এক এজেন্টের পাতা ফাঁদে পা দেয় সে। ওই এজেন্টকে জানায়, সে মার্কিন সেনা সদস্যকে হত্যা করতে চায়। এক্ষেত্রে কবে, কোথায় ওই সেনা সদস্যের ওপর হামলা চালানো যাবে সে তথ্য দেয় ওই এজেন্ট। নীলাশ গুলি ভর্তি অস্ত্র নিয়ে সেখানে গেলে তাকে আটক করা হয়। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ওয়াশিংটন পোস্ট, বার্তা সংস্থা রয়টার্স। বলা হয়েছে অভিযুস্ত নীলাশ যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা। তাকে আদালতে হাজির করা হলেও অনলাইন রেকর্ড থেকে দেখা যায়, তার জন্য কোনো আইনজীবী ছিলেন না। ইউনাইটেড স্টেটস এটর্নি ফর ডিস্ট্রিক্ট অব মেরিল্যান্ডের এক মুখপাত্র বলেছেন, নীলাশ দাসকে একজন ‘পাবলিক ডিফেন্ডার’ দেয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে সোমবার এটর্নির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তাতে সফলতা আসে নি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে নীলাশ দাসকে সর্বোচ্চ ২০ বছর পর্যন্ত জেল দেয়া হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কর্মকর্তারা সোমবার বলেছেন, তারা নীলাশ মোহাম্মেদ দাসের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন এবং তারপর থেকেই তাকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছিল। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এ বছরের শুরু পর্যন্ত সামাজিক মিডিয়ায় ইসলামিক স্টেটের পক্ষে সমর্থন প্রকাশ করে সে। প্যারিসে ও ক্যালিফোর্নিয়ার সান বার্নাডিনোতে সন্ত্রাসী হামলায় সমর্থন দেয়। এ সময়ে সে সামাজিক ওয়েবসাইটে নানা রকম প্রচারণা চালায়। জানুয়ারিতে একটি একে-৪৭ রাইফেলের ছবি পোস্ট করে। তাতে লেখে, এটা একটি অস্ত্রের চেয়ে বেশি কিছু। এটা হলো জান্নাতের টিকিট। নীলাশের বিরুদ্ধে আনা ৭ পৃষ্ঠার অভিযোগে বলা হয়েছে, ৩০শে এপ্রিল সে প্রিন্স জর্জ কাউন্টির ফায়ারিং রেঞ্জে হস্তচালিত অস্ত্রের যোগ্যতা বিষয়ক লাইসেন্স ক্লাসে যোগ দিয়েছিল। ওই ক্লাসের পরে সে আরেক ব্যক্তিকে বলেছিল যে, সে একটি গ্লোক ৯এমএম ও একটি একে-৪৭ রাইফেল কিনতে চায়। জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই প্রশিক্ষণে সে সাত বার গিয়েছিল। সেখানে এফবিআইয়ের এক গোপান এজেন্টকে সে বলেছিল যে, মার্কিন সেনাদের সে হত্যা করতে চায়। এ সময় সে আরও জানিয়েছিল, ‘একটি হামলা চালানোই আমার জীবনের লক্ষ্য’। এরপর এফবিআইয়ের ওই এজেন্ট নীলাশ দাসকে জানান, ইরাকে ইসলামিক স্টেটের কাছ থেকে তিনি তথ্য পেয়েছেন মার্কিন সেনাবাহিনীর একজন সদস্য সম্পর্কে। এটাই হতে পারে টার্গেট। জবাবে নীলাশ বলেছিল, সে ওই সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে হামলা চালাতে সহায়তা করতে চায়। এ জন্য গোলাবারুদ কিনেছে সে। নীলাশ মনে করেছিল ইরাকের এই গোপন কন্টাক্টের মাধ্যমে সে ৮০ হাজার ডলার পাবে। এরপর এফবিআইয়ের ফাঁদে পা রাখে নীলাশ। যেখানে ওই মার্কিন সেনা সদস্যের ওপর হামলা চালানো যাবে বলে তাকে জানানো হয়েছিল সেখানে গুলি ভর্তি বন্দুক নিয়ে হাজির হয় সে। এরপরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এফবিআইয়ের এই এজেন্টের সঙ্গে তার সাক্ষাত হয় ২০১৬ সালের মে মাসে। এফবিআইয়ের বাল্টিমোর ডিভিশনের স্পেশাল এজেন্ট ইন চার্জ গর্ডন জনসন বলেছেন, তদন্তের সময়ে নীলাশ দাসের তরফ থেকে বিপদের যেসব তথ্য পাওয়া গেছে সেগুলো বাস্তব। সে একজন সেনা সদস্যের ওপর হামলা চালানোর বিষয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিল। ফেডারেল কর্মকর্তারা যে এফিডেভিট দেখিয়েছেন সে অনুযায়ী, ১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যায় নীলাশ। এরপর সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পায়। ইউএস এটর্নি ফর মেরিল্যান্ডের রড জে. রোসেনস্টেইন বলেছেন, আমাদের লক্ষ্য হলো হামলা চালানোর আগে বিপদজনক সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ধরে ফেলা। এক্ষেত্রে তার সাংবিধানিক অধিকারের প্রতি সম্মান দেখানো হয়।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031