হকরা টাকা না দিলে ধর্ষণের অভিযোগ জানাতে পারবেন না যৌনকর্মীরা। এই নির্দেশ ভারতের সুপ্রিম কোর্টের।
বিচারপতি পিনাকিচন্দ্র ঘোষ ও বিচারপতি অমিতাভ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ ২০ বছরের একটি পুরনো মামলার রায় দিতে গিয়ে বলে – নিম্ন-আদালতে (ট্রায়াল কোর্টে) নারীদের ধর্ষণের অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে শুনতে হবে, তবে কোনও নারী অভিযোগ করছে বলেই তা ধ্রুব সত্যি হিসেবে ধরে নেওয়া ঠিক নয়।
২০ বছর আগের ঘটনা। বেঙ্গালুরুর এক নারী ৩ পুরুষের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন। অভিযোগে জানান, তিনি পরিচারিকার কাজ করতেন।
একদিন তাঁকে এলাকারই ৩ ব্যক্তি অপহরণ করে নিয়ে যায়। এবং একটি গ্যারাজে নিয়ে গিয়ে তাঁকে বারংবার ধর্ষণ করেন। নিম্ন আদালত গড়িয়ে বিষয়টি পৌঁছায় কর্নাটক হাইকোর্টে।
তবে তিন অভিযুক্তই ধর্ষণের অভিযোগের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানান। মামলার বারংবার শুনানি হয়। অবশেষে মামলাটি গিয়ে পৌঁছায় সুপ্রিম কোর্টে। সুপ্রিম কোর্টেও মামলাটির পুনরায় সাক্ষ্যগ্রহণ হয়।
বাদি-বিবাদী পক্ষের সওয়াল-জবাব এবং পূর্ণাঙ্গ সাক্ষ্যগ্রহণের পর মামলার রায় দিতে গিয়ে বিচারপতিরা বলেন – এই মামলায় অভিযোগকারিনী ও সরকারপক্ষের আইনজীবী অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ।
বলেন – নারীর সাক্ষ্যগ্রহণ থেকে নির্দিষ্ট করে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হচ্ছে না। বরং আসামি-পক্ষের দাবিই আরও জোরদার হয়েছে।
নিম্ন আদালতে শুনানি চলাকালীন ওই নারীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল – তিনি কেন ওই ৩ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা এনেছেন? তার উত্তরে ওই নারী নাকি বলেছিলেন, ওই ৩ ব্যক্তি প্রতিশ্রুতিমতো ১০০০ টাকা তাঁকে দেননি। মামলা করলে, তাঁরা বাধ্য হবেন টাকা দিতে – তাই এই মামলা।
পরে ওই নারীর রুমমেটকে জিজ্ঞেস করতেই বেরিয়ে আসে আসল সত্য। জানা যায় ওই মহিলা পরিচারিকার কাজ করতেন।
ওই ৩ ব্যক্তির কাছ থেকে মাঝমধ্যেই আর্থিক সাহায্য নিতেন। এবং দিনের বেলায় পরিচারিকার কাজের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের জন্য রাতে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতেন।
সম্পূর্ণ শুনানির পর বেঞ্চের পক্ষে বিচারপতি অমিতাভ রায় লেখেন – এতে কোনও সন্দেহ নেই, প্রতিশ্রুতি না রাখার কারণেই অভিযোগকারিনী নিজেকে বঞ্চনার শিকার বলে ধরে নিয়েছেন।
ফলে প্রতিশোধ নেওয়ার তাগিদেই এই ধর্ষণের মামলা। বেনিফিট অফ ডাউটে বেকসুর খালাস দেওয়া হয় ওই ৩ অভিযুক্তকে। সঙ্গে শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ – টাকা না পেলে ধর্ষণের অভিযোগ করতে পারবেন না যৌনকর্মীরা।
Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031