বৃহস্পতিবার কর্মকর্তা-কর্মচারী, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, বিপুল সংখ্যক পুলিশ এবং জলকামান নিয়ে বড় ধরণের আক্রমণাত্মক অভিযান চালায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।দীর্ঘদিনের সমালোচনার পর অবশেষে গুলিস্তানের একাংশের প্রধান সড়ক ও ফুটপাত হকারমুক্ত হলো। বুলডোজার দিয়ে দুমড়ে-মুচড়ে দেওয়া হয়েছে হকারদের ছাউনী ও মালামাল।

প্রত্যক্ষদর্শিরা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে স্বাভাবিক কর্মসূচির মতই গুলিস্তান স্কোয়ারের পাতাল সড়কে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে উচ্ছেদ অভিযান অভিযান পরিচালনা করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ। মার্কেটের ভিতরে হাঁটার রাস্তা দখল করে দোকান বসানোর অভিযোগে কয়েকজন দোকান মালিককে অর্থ জরিমানা করেন আদালত। পাতাল মার্কেটের সভাপতি হাজী আনোয়ার হোসেন ও তার লোকজন মোবাইল কোর্টের কার্যক্রমে বাধা দেন এবং ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।

উচ্ছেদ কাজে বাঁধা দেওয়ায় মোবাইল কোর্ট হাজী আনোয়ারকে আটক করে নগর ভবনে নিয়ে যায়। হাজী আনোয়ার হোসেনের মুক্তির দাবিতে দোকান মালিকরা পাতাল মার্কেট বন্ধ করে ওপরের রাস্তা অবরোধ করেন এবং দিপন পরিবহনের দুটি বাস ভাঙচুর করেন। ভাঙচুর শেষে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরভবনে যান এবং নগরভবনের প্রবেশ গেট বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। খবর পেয়ে মেয়র সাঈদ খোকন তার দফতর থেকে বের হয়ে আসেন এবং বিক্ষুব্ধ দোকান মালিকদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা না থামলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিও ছোড়ে। তাড়া খেয়ে দোকান কর্মচারীরা গুলিস্তানের দিকে যেতে থাকলে তাদের পিছু ধাওয়া করে কয়েক জনকে বেধড়ক পিটুনি দেয় পুলিশ ও কর্মচারীরা। নগরভবনে থাকা সরকারি দলের নেতা-কর্মী ও ঠিকাদাররাও তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের ছবি তোলা ও ভিডিও করার কাজেও বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

এ ঘটনার পর বেলা পৌনে তিনটায় কর্মকর্তা, কর্মচারী, সিকিউরিটি গার্ড ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও বুলডোজার নিয়ে দ্বিতীয় বার অভিযান চালায় ডিএসসিসি।

সরেজমিন দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ সময় লাঠিসোটা হাতে মিছিল সহকারে ফুটপাতে অবস্থান নেন। তারা হকারদের মালামাল তছনছ করার পাশাপাশি প্লাস্টিকের অস্থায়ী ছাউনীগুলো ভেঙে দেন। এভাবে গোলাপশাহ মাজার থেকে গুলিস্তান চত্ত্বর হয়ে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের প্রবেশমুখ পর্যন্ত পুরো সড়ক হকারমুক্ত করা হয়।

এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. খালিদ আহমেদ। তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সাঈদ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মামুনুর রশীদসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

দ্বিতীয় অভিযান চালানোর আগে ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাইদ খোকন সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিয়মিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ গুলিস্তানে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়ে। সকালের অভিযানে হকাররা ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। এর ফলে বিকালে দ্বিতীয়বার অভিযান চালানো হবে।’

গুলিস্তান এলাকার হকার জাহঙ্গীর বলেন, ‘অভিযানের আগে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি, এমনকি কোনও নোটিশ দেওয়া হয়নি। হঠাৎ করে বুলডোজার এসে আমাদের মালামাল দুমড়ে মুচড়ে গেছে। আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে।’

বিকেল সাড়ে ৪টায় উচ্ছেদ অভিযান শেষ হয়। অভিযান শেষে মেয়রের নেতৃত্বে একটি মিছিল গুলিস্তান এলাকা প্রদক্ষিণ করে। মিছিলে অংশ নেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এবং কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর। এরপর এক ব্রিফিংয়ে মেয়র বলেন, গুলিস্তান এলাকার ফুটপাথ পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রতিদিন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাসহ যা যা করা দরকার সব করা হবে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে নাগরিকদের অসুবিধা মেনে নেব না। উশৃঙ্খলভাবে কেউ রাস্তা দখল করতে চাইলে তাকে কঠোরভাবে দমন করা হবে।

প্রসঙ্গত, নগরীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা গুলিস্তানের প্রতিটি সড়কের ফুটপাতই দীর্ঘদিন ধরে হকারদের দখলে রয়েছে। শুধু তাই নয়, ফুটপাতের পর তারা সড়কের অর্ধেকও দখল করে ব্যবসা করে আসছে। ইতোপূর্বে বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে হকার উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু উচ্ছেদের পরপরই হকাররা যথাস্থানে ফিরে আসে। প্রভাবশালীদের কাছে গুলিস্তানের ফুটপাত অবৈধ অর্থের বড় উৎস বলে অভিযোগ রয়েছে। যখন যে দল ক্ষমতায় আসে, সে দলের লোকজনই ফুটপাত নিয়ন্ত্রণ করেন

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031