স্কটল্যান্ডের উত্তর-পূর্ব উপকূলে ছোট্ট দ্বীপ ফোওলাতে পা দিলে প্রথমেই মনে হবে রূপকথার এক রাজ্যে চলে এসেছেন। ফোওলা অর্থ পাখির দ্বীপ। হ্যাঁ, হাজার হাজার পাখি আছে বটে এখানে। তবে তার চেয়েও মনকাড়া আরো কিছু একটা আছে ফোওলা দ্বীপে। দ্বীপে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই হয়তো দেখবেন কয়েক শ ক্ষুদ্রাকৃতির পনি ঘোড়া ছুটে আসছে আপনার দিকে। মনে হবে যেন তাদের দ্বীপে আপনাকে স্বাগত জানাতেই ছুটে এসেছে তারা। কেবল এই ঘোড়াগুলোই নয়, দ্বীপটিতে, এর পাশের সাগর, যেদিকে তাকাবেন সেদিকেই হরেক রকম পশুপাখি দেখতে পাবেন। আর মানুষ? সে সংখ্যা হাতে গোনা যায়। মাত্র ৩০ জন। একজন মানুষের বিপরীতে ৫০টি পনি বা টাট্টু ঘোড়ার বাস দ্বীপে। অর্থাৎ এখানে পনি আছে প্রায় ১৫০০।

ফোওলা মূলত শেটল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত। ব্রোঞ্জ যুগ থেকে এখানে আছে এই খুদে ঘোড়াগুলো। বলা হয়, এখান থেকেই শেটল্যান্ড পনিদের উত্পত্তি। তারপর ছড়িয়ে পড়ে গোটা পৃথিবীতে। দেখতে ভারি সুন্দর এই পনিগুলোর সারা শরীর ভারী চামড়া দিয়ে ঢাকা। পা চারটি ছোট ছোট। এদের আছে মাথা ভরা বুদ্ধি। শেটল্যান্ড দ্বীপের এই পনিগুলোর মস্তিষ্ক এতটাই প্রখর যে অনায়াসে এদের কুকুরের জায়গা দিয়ে দিতে পারবেন। অর্থাৎ এদের প্রশিক্ষণ দিয়ে অনেক কাজই করানো যায়।

কথায় বলে—বুদ্ধি আর সৌন্দর্য নাকি একসঙ্গে খুব কম দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু এই খুদে ঘোড়াগুলোকে জানার পর এই কথাটি আর মাথায়ই আসবে না আপনার! যাদের এই দ্বীপটি একবার ঘুরে আসার মনোবাসনা জেগে উঠেছে, তাদের জন্য জানিয়ে রাখি, ফোওলা দ্বীপটি গ্রেট ব্রিটেনের একদম শেষদিকে অবস্থিত। গ্রেট ব্রিটেনের দ্বীপ হয়েও ভিন্ন একটি দিনপঞ্জিকা অনুসরণ করে এই দ্বীপবাসীরা। জুলিয়ান দিনপঞ্জিকা মেনে চলে তারা। দ্বীপটির রয়েছে অনেক পুরনো ইতিহাস। নবম শতকে নর্সরা ফোওলা দখল করে নেয়। আর স্কট বা স্কটিশরা এখানে আধিপত্য শুরু করে পঞ্চদশ শতকের দিকে। তবে বিংশ শতাব্দীতে এখানকার জনসংখ্যা কমতে থাকে। এক শ বছর ধরেই দ্বীপটির মালিক হলবোর্ন পরিবার। ফোওলার সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী জনবসতিটা প্রায় ২০ মাইল দূরে অবস্থিত। তবে তাতে কী? ফেরি বা বিমানে করেই অনায়াসে চলে যাওয়া যায় দ্বীপে। যদিও এখানকার আট আসনের বিমানগুলো সপ্তাহে কেবল চারবারই যাওয়া-আসা করে। তা-ও আবার কেবল গ্রীষ্মকালে। আর ফেরিগুলো সপ্তাহে যাতায়াত করে সর্বমোট তিনবার।

এই দ্বীপেই শুটিং হয়েছিল ১৯৩৭ সালে মুক্তি পাওয়া বিখ্যাত ব্রিটিশ ছবি ‘দ্য এজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’-এর। অনেকের কাছে দ্বীপটি ‘এজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামেও পরিচিত। সাড়ে তিন মাইল লম্বা আর আড়াই মাইল প্রস্থের এই দ্বীপে একবার পা দিলেই থাকার জন্য ছোট্ট ঘর, কুঁড়ে বা বাংলো ভাড়া পেয়ে যাবেন। সেই সঙ্গে পর্যটকদের জন্য আছে দ্বীপের অসম্ভব সুন্দর পাহাড়ের চূড়াসহ নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখা আর প্রাচীন নর্স সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার সুযোগ। নানা জাতের ফুল দর্শনেও আপনি যেতে পারেন দ্বীপটিতে। ফোওলার সাগরেও পাবেন সিল, কিলার হোয়েলসহ নানা প্রাণী। আর মাঝেমধ্যে মানুষের সঙ্গে কথা বলার জন্য মন আইঢাই করলে পশুপাখির ভিড়ে খুঁজতে পারেন দ্বীপের বাসিন্দা ৩০ জন মানুষকে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031