
মেলবোর্নের রয়াল চিলড্রেন্স হসপিটালের অ্যালার্জিস্ট এবং ইমিউনোলজিস্ট প্রফেসর মিমি তাং জানান, কেবল শিশুদের দেহের ময়লা পরিষ্কারের মধ্য দিয়েই কাজটি সম্পন্ন হয় না। এর আরো অনেক বিষয় রয়েছে।
রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা : মাইক্রোবায়োটার বিকাশেল সঙ্গে মানুষের রোগ প্রতিরধী ক্ষমতা বিকাশ লাভ করে। প্রফেসর তাং বলেন, মাইক্রোবায়োটা এক ধরনের মাইক্রো অর্গানিজম যা আমাদের মধ্যেই বাস করে। আমাদের অন্ত্রে বিভিন্ন ধরনের ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া থাকে। এগুলোই আমাদের সবচেয়ে বড় বোঝা। মানুষের দেহে যত কোষ তার চেয়ে দশ গুন বেশি ব্যাকটেরিয়া থাকে। তাই অনেক বিষয়েই এদের ওপর নির্ভর করতে হয়।
তাহলে প্রথম তিন বছর কেন গুরুত্বপূর্ণ? এসব জীবাণুর পূর্ণাঙ্গ বিকাশে স্বাস্থ্যকর মাইক্রোবায়োটা সৃষ্টি হয়। এটি মানুষের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতার সঙ্গে যোগাযোগ সৃষ্টি করে। এতে করে পরবর্তী জীবনে দেহের রোগ প্রতিরোধীব্যবস্থা শক্তিশালী হয়ে ওটে।
এই ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত করলে অন্ত্রে বেশ প্রভাব পড়ে। মাইক্রোবায়োটা বিকাশের পথ বাধাগ্রস্ত হলে এ অবস্থাকে বলা হয় ‘ডিসবায়োসিস’। এটা সব ধরনের ক্রনিক অবস্থার কারণ হয়ে ওঠে। আধুনিক সমাজে এই সমস্যা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। অ্যালার্জির সমস্যা থেকে বিপাকক্রিয়া সবখানেই অস্বাভাবিক অবস্থা দেখা যায়।
স্বাস্থ্যকর মাইক্রোবায়োটা গড়ে তুলতে… : গতানুগতিক কৃষি পদ্ধতি বদলে যাওয়ার কারণে মাইক্রোবায়োটার বৈশিষ্ট্যও বদলে গেছে। আবার শত বছর আগে ময়লা যেমন ছিল এখন তেমনটা নেই। কাজেই এখন শিশুদের প্রকৃতির কাছাকাছি করতে ময়লার মধ্যে পাঠিয়ে দেওয়ার বিষয়টা আর আগের মতো নেই। পরিবেশের অন্যান্য বিষয়ও বদলে গেছে। প্রথম তিন বছরের মধ্যে শিশুর রোগ প্রতিরোধীব্যবস্থা গড়ে তুলতে পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
১. দীর্ঘমেয়াদি অ্যান্টিবায়োটিক এড়িয়ে চলুন : যখন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঠেকাতে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয়, তখন ধীরে ধীরে ওই ব্যাকটেরিয়া টিকে থাকার জন্য প্রতিরোধীব্যস্থা গড়ে তুলতে থাকে। আমরা জানি যে, মুখে খাওয়া অ্যান্টিবায়োটিকগুলো ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে। কিন্তু এগুলো অভ্যন্তরের মাইক্রোবায়োটার বিকল্প তৈরি করে।
তাই শিশুদের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার এড়িয়ে চলা দরকার। নয়তো তাদের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা পরিপূর্ণভাবে বিকশিত গতে পারে না। প্রয়োজন হলে স্বল্পমেয়াদী অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা যায়। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে শিশুদের খাওয়ানো উচিত নয়।
২. স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ান : স্বাস্থ্যকর মাইক্রোবায়োটা সৃষ্টি করতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াতে হবে। এতে অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া তৈরি হবে। আগেকার মানুষের স্বাস্থ্যকর মাইক্রোবায়োটা বিকশিত হতো। তখন মানুষের খাবার শস্য-ভিত্তিক ছিল। আধুনিককালে মানুষ সবজি ও ফল গ্রহণ করে নিয়েছে। আর এগুলো শক্তিশালী মাইক্রোবায়োটা সৃষ্টি করে না।
প্রফেসর তাং বেশি বেশি শস্য, কম মাংস এবং স্যাটুরেটেড খাবারের পরামর্শ দিয়েছেন। এসব খাবার অন্ত্রে স্বাস্থ্যকর মাইক্রোঅর্গানিজম তৈরি করে।
৩. পূর্ণাঙ্গ বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করুন : শিশুর মাইক্রোবায়োটার বিকাশ মায়ের মাওক্রোবায়োটা, জন্মদানের পদ্ধতি, শিশুকে খাওয়ানোর উপায় এবং খাদ্য বাছাইয়ের ওপরও নির্ভর করে।