ইতালীর নাগরিক তাভেল্লা সিজারের খুনে জেএমবি নাকি বিএনপির কাইয়ুমরা জড়িত- এ নিয়ে র‌্যাব ও পুলিশের মধ্যে ক’দিন ধরেই চলছিল শীতল সম্পর্ক   র‌্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদ সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তাভেল্লা হত্যাসহ ১৮টি নাশকতার ঘটনায় নব্য জেএমবি জড়িত।  তিনি জানিয়েছিলেন, ‘অন্তত ৩০০ সদস্য দিয়ে নব্য জেএমবি গঠিত হলেও বর্তমানে সংগঠনটির ২১ জন সদস্য সক্রিয় রয়েছে। এদের মধ্যে ২ জন সূরা সদস্য, ১৯ জন মিড-লেভেলের। আমাদের চেষ্টা থাকবে তাদের সংখ্যা যেন ২১ থেকে ২২ না হয়। ২১ জনের সাংগঠনিক নাম পাওয়া গেছে। আমরা সেগুলো যাচাই-বাছাই করে তাদেরকে ধরার চেষ্টা করছি।’
নব্য জেএমবির একটি চিঠির বরাত দিয়ে বেনজীর জানিয়েছিলেন, ৬ অক্টোবর পর্যন্ত তাদের ৩৩ জন সদস্য ছিল। বাকিরা ‘তাগুত’দের হাতে শহীদ হয়েছে এবং কারাগারে রয়েছে। তাদের ৫টি হ্যান্ডগান, ১টি একে-২২ রাইফেল এবং কিছু সংখ্যক ‘আম’ (গ্রেনেড) রয়েছে।
এর কয়েকদিন পর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান ও ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বিদেশ থেকে ফিরে গণমাধ্যমকে বলেন, তাভেল্লা ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার এমএ কাইয়ুম এবং তার ভাইসহ সাতজন জড়িত। গোয়েন্দা পুলিশের যথাযথ তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই তাদের নামে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।  তাভেল্লা হত্যাকাণ্ডে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই মর্মে র‌্যাব ডিজির বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ওইদিন মনিরুল বলেন, ‘আমি বিদেশে ছিলাম, তাই তিনি কী বলেছেন তা আমার জানা নেই। তবে আমার বিশ্বাস উনি (র‌্যাব ডিজি) এমন কথা বলেননি।’   র‌্যাব ডিজি বলেছেন, নব্য জেএমবির প্রধান নেতা সারোয়ার জাহান। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী- জানতে চাইলে মনিরুল বলেছিলেন, ‘সারোয়ার নব্য জেএমবির কোনো বড় মাপের নেতা নয়। তৃতীয় সারির নেতা হতে পারে। এ বিষয়ে র‌্যাব কী বলেছে, তা আমার জানা নেই।’   বেনজীর-মনিরুলের এই বাহাসে মন্তব্য করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হকও।   দুই বাহিনীর ‘শীতল সম্পর্ক’ দূর করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। গত রোববার সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দুই পক্ষকে এক হয়ে কাজ করতে বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এমন বিতর্কের পর একদমই চুপ ছিলেন র‌্যাবের মহাপরিচালক।

বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তাভেল্লা ইস্যুর ব্যাখ্যা দেন বেনজীর আহমেদ।
বেনজীর বলেন, ‘গত ৮ অক্টোবর র‌্যাব সাভার, আশুলিয়া এলাকায় একাধিক অপারেশন পরিচালনা করে। ওইদিন আব্দুর রহমান ছদ্মনামে একজন সন্ত্রাসী নিহত হয়। পরে বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে তথ্যপ্রমাণসহ ২১ অক্টোবর তার ব্যাক্তিগত ও সাংগঠনিক পরিচয় দেশবাসীর সামনে তুলে ধরি।’
তিনি বলেন, ‘ওইদিন তার পরিচয়ের বাইরে আর কোনো বক্তব্য আমি দেইনি। তবে পরে আমাদের অফিস থেকে একটি প্রেস রিলিজ ইস্যু করা হয়। সেখানে ওই জঙ্গিগোষ্ঠির তাভেল্লা হত্যাসহ একাধিক অপারেশনের দায় স্বীকারের বিষয়টি ছিলো।’   ‘এটি কিন্তু র‌্যাবের দাবি নয়। এটা ছিলো জঙ্গিগোষ্টির দাবি। র‌্যাবের মহাপরিচালক এই দাবি করেনি যে, জঙ্গিরা ওই হামলা করেছে। তাছাড়া র‌্যাব যেহেতু মামলাগুলোর তদন্ত করেনি, তাই সেগুলো নিয়ে মন্তব্য করার প্রশ্নই ওঠে না। তাছাড়া বিষয়টি এখন আদালতে বিচারাধীন।’
‘এটা নিয়ে মিডিয়ার কিছু অংশে প্রকাশিত হয়েছে, আমি মনে করি তা রং কন্টেক্সেটে প্রকাশিত হয়েছে।’ ‘র‌্যাব পুলিশের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আমাদের মধ্যে ভালো কাজের প্রতিযোগিতা থাকতে পারে। কিন্তু তা নিয়ে কোনো দ্বন্ধ নেই। আমরা পুলিশের আমব্রেলার মধ্যেই কাজ করি।’   ‘জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো বিভিন্ন দাবি করতে পারে। কিন্তু তার ওপর ভিত্তি করে তো আর তদন্ত চলে না। আমরা সত্য উদঘাটনের জন্য তদন্ত করি।’

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031