হকচকিয়ে ওঠে তামান্না। রাজধানীর ধানমন্ডির এক স্কুলে পড়ে তামান্না ইসলাম। বাসার কাছাকাছি বলে মাঝেমধ্যে হেঁটে স্কুলে যায় সে। কিন্তু প্রায়ই তাকে ভয় পাইয়ে দেয় ফুটপাত দিয়ে চলা মোটরসাইকেল। পেছন থেকে এসে হঠাৎ বিকট শব্দে হর্ন বাজান দ্বিচক্র যানের চালকরা।
এই স্কুলবালিকার ভাষ্য, ‘আমি যখন স্কুলে হেঁটে যাই, তখন আতঙ্কে থাকি কোন সময় আমার গায়ে উঠে পড়ে মোটরসাইকেল। চালকদের ভাবখানা এমন, ফুটপাত যেন মোটরসাইকেল চালানোর জন্য। পেছন থেকে একের পর এক হর্ন দিতে থাকে।’
তামান্নার মতো এমন সমস্যায় প্রতিনিয়তই পড়ছে রাজধানীবাসী। আইনবিরোধী হলেও এসব মোটারসাইকেলের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয় না পুলিশ। এমনকি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাতেও কাজ হয়নি কোনো।
তবে ফুটপাতে মোটরসাইকেল ওঠা রোধ করতে ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি উদ্যোগ কিছুটা সফল হয়েছে বেশ কিছু এলাকায়। ফুটপাতে যাতে মোটরসাইকেল চলতে না পারে- এমন কায়দা করে ফুটপাতের মুখে ও মাঝখানে লোহার খুঁটি পোঁতা হয়েছে। এতে ফুটপাত দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল থেমেছে সেসব এলাকায়।
কিন্তু যেসব এলাকায় মোটরসাইকেল প্রতিরোধক এসব খুঁটি নেই? কলাবাগান, শাহবাগ, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও, খামারবাড়ি, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতে অবাধে চলছে মোটরসাইকেল। এসব এলাকার ফুটপাতে মোটরসাইকেলের ‘রাজত্ব’ আর পথচারীদের ‘বিরক্তি’ এক সাধারণ চিত্র।
ফুটপাত ধরে চলা একাধিক মোটরসাইকেল চালকের সঙ্গে কথা হয়েছে ঢাকাটাইমসের এই প্রতিনিধির। কয়েকজন বলেছেন, বিষয়টা অনৈতিক মানেন তারাও। কিন্তু যানজটের কারণে মাঝে মাঝে উঠতে হয়। কেউ কেউ জানান, তারা ফুটপাতে উঠলেও হর্ন বাজান না। কিন্তু কয়েকজন মোটরসাইকেল চালক আবার বিষয়টি পরোয়া না করার মনোভাব দেখিয়েছেন।
জোবায়ের নামে একজন মোটরসাইকেল চালক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ফুটপাত দিয়ে চলা উচিত না, সেটা আমিও জানি। কিন্তু কী করা? সময় বাঁচাতেই এ কাজ করি। পুরো রাস্তা গাড়িতে আটকা থাকে। আমাদের চলার জন্য আলাদা জায়গা নেই। রাস্তার পাশে এক হাত জায়গাও যদি মোটরসাইকেলের জন্য থাকত, তাহলে এই সমস্যায় পড়তে হতো না।’
কিন্তু পথচারীর সমস্যা দেখার কি কোনো প্রয়োজন নেই? রেহমান ছাবিদ পড়েন তেজগাঁও কলেজে। পরীবাগ এলাকা থেকে কলেজে যাওয়ার পথে যানজটে পড়লে প্রায়ই গাড়ি থেকে মেনে হেঁটে চলে যান। এই হেঁটে যাওয়ার অভিজ্ঞতা প্রায়ই বিরক্তিকর হয়ে ওঠে মোটরসাইকেলের কারণে।
কেন? ছাবিদ বলেন, ‘একদিন তো এক মোটরসাইকেল পায়ে লাগিয়ে দেয়। আর একটু হলে পায়ের রগ ছিঁড়ে যেত। চালক সরি বলে পাশ দিয়ে চলে গেল। ব্যথা নিয়ে আমি বসে পড়ে চেয়ে চেয়ে তার চলে যাওয়া দেখলাম।’ তিনি বলেন, ‘ফুটপাত পথচারীর জন্য, কিন্তু মনে হয় তারা সেখানে অপাঙক্তেয়।’
ফুটপাতে মোটরসাইকেল তোলা থামাতে চালকদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক বিভাগের (দক্ষিণ) যুগ্ম কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা ফুটপাতে লোহার পাইপের প্রতিবন্ধক বসিয়েছি, যাতে মোটরসাইকেল চলতে না পারে। দুই মাস হলো এটা করেছি। এতে সুফল পেয়েছি। পর্যায়ক্রমে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সব স্থানে এ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এরপরও ফুটপাতের ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চালালে তাদের জরিমানা করা হয়। এ ব্যাপারে আমাদের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’
