আলোচনায় শিশু একাডেমীর সদ্য সাবেক পরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, শিশু একাডেমী তার কাজের পরিধি নির্ধারণ কিছু সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে গেছে। গ্রাম পর্যায়ে শিশুদের বিকাশের জন্য কোনও উদ্যোগ এখন পর্যন্ত একাডেমীর নেই। কেবল সাংস্কৃতিক চর্চা না তাদের আমরা নির্যাতনবিরোধী সচেতনতায় নিয়ে আসতে চাই। তিনি আরও বলেন, শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়েও আমাদের কাজ করার পরিকল্পনা আছে। আমরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের মধ্যে থাকি। শিশু
মোহিত কামাল
শিশুদের মানসিক গড়নে কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কিনা সেটি অভিভাবককেই সতর্কতার সঙ্গে দেখতে হবে বলে মনে করেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহিত কামাল। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে শিশুর সামনে ঝগড়া করা যাবে না, এতে সে নিরাপত্তহীনতায় ভোগে। মনে রাখা জরুরি, বেশিরভাগ যৌন হয়রানি চেনাজানার মধ্যে ঘটে এবং শিশুটি বুঝে উঠতে পারে না এই পরিচিত মানুষটিই তাকে হেনস্তা করতে পারে।
শিশু সাংবাদিক পৃথা প্রণোদনার এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা মানসিক প্রতিবন্ধী তাদের ক্ষেত্রে স্কুল, পরিবার, টিচিং ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। কীভাবে যৌনহয়রানিকে না বলতে হবে সেটা তাদের শেখাতে হবে। কেউ অনিরাপদ আচরণ করলে বলতে হবে: ‘মা কে বলে দেবো’।
ফরিদা ইয়াসমিন
আলোচনায় আইনি দিক নিয়ে কথা বলেন বাংলাদেশ পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের উপ-পরিচালক ফরিদা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, আমাদের কাছে প্রতিনিয়ত এধরনের অনেক কেস আসে। ৯৯ শতাংশ পরিবারের সদস্যদের দ্বারা হয়রানির শিকার। তবে ভাইদের দ্বারা বোনের যৌন হয়রানির তেমন কোনও উদাহরণ এখনও পাওয়া যায় না। মূল সমস্যা আমাদের মানসিকতায়। আমরা এধরনের যেকোনও ঘটনা লুকিয়ে রাখতে চাই। কিন্তু এধরনের ঘটনায় শিশু যদি ন্যায়বিচার না পায় সেটা তার পরবর্তী বিকাশে প্রভাব ফেলে। তিনি বলেন, শিশুদের নির্যাতনের বিষয়গুলো বিচারে যে কয়েকটি পর্যায় আছে সেগুলো শেষ হওয়া পর্যন্ত অভিভাবক শক্ত থাকতে পারেন না। এ কারণে অনেকসময় বিচারের দিকে না গিয়ে সমঝোতার দিকে যেতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
রাশেদা রওনক খান
বৈঠকিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাশেদা রওনক খান বলেন, মায়েরা ধরে নেন মেয়েশিশুদের ওপর নির্যাতন হলে লুকিয়ে রাখাটাই পরিবারের জন্য ভালো। এটা থেকে তারা বের হতে পারে না। ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে আজকে অনেকেই যাচ্ছে বলা হয়, কিন্তু সেটা সংখ্যায় খুবই কম। মায়েদের মনোজগতে আঘাত করতে হবে। ছেলে বা মেয়ে শিশু নির্যাতনের শিকার হলে তাকে প্রতিবাদ করতে হবে। করণীয় প্রশ্নে তিনি বলেন, পরিবারের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত: পরিবার দ্বিতীয়ত: স্কুল এবং আরেকটি হচ্ছে সমাজ। তিনি গণমাধ্যমের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, গণমাধ্যমগুলোতে সংবাদ আসে কিন্তু তারা ফলোআপ করে না। ফলে ভুক্তভোগীরা সাহস হারায়।
লায়লা খন্দকার
শিশু বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের ডিরেক্টর চাইল্ড প্রটেকশন লায়লা খন্দকার বলেন, মেয়ে ও ছেলেশিশুরা অতীতের তুলনায় বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। শিশুরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, বখাটের দ্বারা উত্ত্যক্ত হচ্ছে, ছেলেরাও নির্যাতিত হচ্ছে। এখন ভয়াবহ নৃশংসতার কারণে উদ্বিগ্নতা বাড়ছে। তুচ্ছ কারণে হত্যা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, পরিবারের যে সদস্য বা পরিচিতজন শিশুকে নির্যাতন করতে চান তিনি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে সেই শিশুটির সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করেন। সেটাও মাথায় রাখতে হবে।সামিনা চৌধুরী
সঙ্গীতশিল্পী ও অভিভাবক সামিনা চৌধুরী অভিভাবকদের শঙ্কার জায়গাগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হলো, অভিভাবক হিসেবে আমরা নিশ্চিন্ত হতে পারছি না। আমি বেশ কিছুদিন মা ও শিশুর স্বাস্থ্য বিষয় নিয়ে কাজ করেছি। আমার মনে হয়েছে, তাদের অনেক নিরাপত্তা দরকার। তিনি আরও বলেন, আমার মনে হয় আমাদের সন্তানদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে কিন্তু সেটিরও মাত্রাগত দিক সম্পর্কে অভিভাবককেই সতর্ক হতে হবে। তাকে তথ্যগুলো দিতে হবে যাতে সে নিজের নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন হয়ে গড়ে উঠতে পারে।
পৃথা প্রণোদনা
শিশু নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষ বৈঠকিতে শিশু সাংবাদিক পৃথা প্রণোদনা তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, যখন কাজ করতে যাই তখন আমরা চাই শিশুদের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরতে। কিন্তু আমরা যখন শিশুর কথা জানার চেষ্টা করছি যেসব জানছি নেতিবাচক দিকগুলো এসে যাচ্ছে। আমি নিজেওতো শিশু। আমার নিজেরও ভয় কাজ করে।
তিনি আরও বলেন, আমরা অনেক সময় বুঝি না। পত্রিকার জরিপ বলছে, গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টম্বর পযন্ত ৩২৫জন শিশু নির্যাতন শিকার। তার মধ্যে ৩১ জন শিশু শারীরিক মানসিক প্রতিবন্ধী। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উচিত।
জুলফিকার রাসেল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বাংলা ট্রিবিউন
বাংলা ট্রিবিউনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জুলফিকার রাসেল আলোচনায় বেশকিছু প্রশ্ন উত্থাপন করেন। তিনি উপকমিশনার ফরিদা ইয়াসমিনের কাছে জানতে চান, ৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া নির্যাতন নিয়ে বলতে পারে না। সেক্ষেত্রে করণীয় কি হতে পারে। এ প্রশ্নের জবাবে ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে। জুলফিকার রাসেল মনে করেন নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে সচেতনতা কার্যক্রমে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
মিথিলা ফারজানা
মিথিলা ফারজানার সঞ্চালনায় বৈঠকি একাত্তর টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এর প্রচার সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ছিল ঢাকা ট্রিবিউন। বৈঠকিতে বক্তারা শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশের পাশাপাশি করণীয় বিষয়ে কথা বলেন। বর্তমানে শিশু নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা বলেন, এধরনের ক্ষেত্রে বিচার করার পাশাপাশি সামাজিক বন্ধন ও কার্যক্রম অনেক বেশি সক্রিয় করে তোলায় মনোযোগী হতে হবে।
