মেলানিয়া ট্রাম্প ফার্স্টলেডি হতে পারলে কাজ শুরু করবেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর সংস্কৃতি উন্নয়নে। ‘অত্যন্ত বাজে ও কঠিন’ হয়ে পড়া সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো থেকে তিনি গালিগালাজের সংস্কৃতি দূর করবেন। অন্যদের ‘চেহারা ও বুদ্ধিমত্তা’ নিয়ে অহেতুক সমালোচনার চর্চাকে বন্ধ করবেন তিনি। ফিলাডেলফিয়ার এক নির্বাচনী প্রচারণায় হোয়াইট হাউসের ভাবী কর্ত্রী হিসেবে নিজের ভাবনাগুলো এভাবেই তুলে ধরেন তিনি। এ খবর দিয়েছে সিএনএন। খবরে বলা হয়, নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্পের সহধর্মিণী মেলানিয়ার উপস্থিতি বিরল। এর আগে কেবল রিপাবলিকান দলের জাতীয় সম্মেলনেই এককভাবে বক্তব্য রেখেছিলেন তিনি। ওই বক্তব্যও মার্কিন ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামার এক বক্তব্য থেকে নকল করা বলে অভিযোগ উঠেছিল। তবে সেসব ভুলেই ফিলাডেলফিয়ার প্রচারণায় হাজির হয়েছিলেন মেলানিয়া। তাতে একক বক্তব্যও রাখেন। তাতে ভবিষ্যৎ ফার্স্টলেডি হিসেবে কিছু ভাবনার কথা সবাইকে জানান তিনি। এ ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে পরিচ্ছন্ন করে তোলার কথা বললেও টুইটারে তার স্বামী ডনাল্ড ট্রাম্পের ক্লান্তিহীনভাবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সাংবাদিক, সমালোচক বা অন্যদের তীব্রভাবে আক্রমণ করা নিয়ে তিনি কিছুই বলেননি। মেলানিয়া ওই বক্তব্যে বলেন, ‘১২ বছর বয়সের একটি ছেলে বা মেয়েকে ভেঙানো, গালি দেয়া বা আক্রমণ করা মোটেও ঠিক নয়। খেলার মাঠে এমন ঘটনা ঘটা মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনতে পারে। একইরকম ভাবে অনলাইনেও কেউ এমনটি করলে তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের পরস্পরের কথা বলার আরো ভালো পথ খুঁজতে হবে। আমাদের খুঁজে বের করতে হবে কিভাবে বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের শিশুদের সম্মান ও ভালো গুণের সমর্থন করা যায়। ফার্স্টলেডি হওয়ার মতো সৌভাগ্য যদি আমার হয়, তবে এটি আমার মনোযোগের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।’
১৯৯৬ সালের মিস ইউনিভার্স অ্যালিসিয়া মাশাদোকে ‘মিস পিগি’ ও ‘মিস হাউজকিপার’ বলে অভিহিত করেছিলেন ট্রাম্প। বিষয়টি প্রথম টিভি বিতর্কেও উল্লেখ করেন হিলারি। পরে ট্রাম্প ভোর রাত ৩টার সময় এক টুইটারে মাশাদোকে ‘কদর্য’ ও ‘প্রতারক’ অভিহিত করেন। শুধু তাই নয়, মাশাদোর সেক্স টেপ রয়েছে বলে সেগুলো তার সমর্থকদের দেখারও আহ্বান জানান। ট্রাম্পের প্রচারণা শিবিরের ম্যানেজার কেলান কনওয়ে বলেন, মেলানিয়া ট্রাম্পের বক্তব্য তার স্বামীর বহুল বিতর্কিত ও উস্কানিমূলক টুইটগুলোকে আলোচনায় আনার জন্য নয়। তিনি বলেন, ‘দায়িত্বশীল সাংবাদিকদের যারা তার গোটা বক্তব্য বা জীবনের গল্প তুলে ধরতে চান, তাদের জন্য এই বক্তব্য নয়। আর সেটাই যদি হতো, তবে কি প্রেসিডেন্ট হলেও হিলারি ক্লিনটন কখনই আইনশৃঙ্খলা বা দুর্নীতির তদন্ত নিয়ে কোনোদিনই কথা বলতে পারবেন না? তিনি কি বিচার মন্ত্রণালয় আর এফবিআইকে বিলুপ্ত করবেন?’
ফিলাডেলফিয়ার বক্তব্যে মেলানিয়া তার স্বামীকে আমেরিকার শ্রমজীবী শ্রেণির মানুষের সংস্পর্শে থাকা একজন ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী যখনই ওহাইও, নর্থ ক্যারোলাইনা বা পেনসিলভানিয়ায় কোনো কারখানা বন্ধের সংবাদ পান, আমি তাকে হতাশ হতে দেখি।’ মেলানিয়া তার বক্তব্যের শুরু করেন নিজের জীবনের তরুণ বয়সের কথা দিয়ে। ওই সময় তিনি স্লোভেনিয়ায় ছিলেন। তখনও আমেরিকার অভিবাসী হননি তিনি। মেলানিয়া বলেন, ‘তখন আমেরিকার অর্থ ছিল যে তুমি কিছু হওয়ার স্বপ্ন দেখলে তা হতে পারবে।’ তিনি জানান, আমেরিকার একজন নাগরিক হওয়ার জন্য ১০ বছরের দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে।
তিনি বলেন, ‘আমি একজন অভিবাসী। এবং আমেরিকার স্বাধীনতা ও সুযোগের মূল্যায়ন আমার চেয়ে বেশি আর কেউ করে না।’ স্বামী ডনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় খুব বেশি ভূমিকা রাখেননি মেলানিয়া। তিনি নিজেও স্পষ্টতই জানিয়ে দিয়েছেন, তার মূল কাজ হলো তার ১০ বছর বয়সী ছেলে ব্যারনের লালন-পালন করা। তবে ফিলাডেলফিয়াতে ঠিকই হাজির হয়েছিলেন তিনি। এর ইঙ্গিত অবশ্য ট্রাম্প আগে থেকেই জানিয়ে রেখেছিলেন। বলেছিলেন, চূড়ান্ত নির্বাচনের আগে মেলানিয়া দুই/তিনটি রাজ্যে বক্তব্য রাখতে পারেন। ফিলাডেলফিয়াতে তাই মেলানিয়া হাজির হয়েছিলেন স্বামীর পক্ষে ভোট জোগাড় করতে। বিশেষ করে ওই এলাকার মধ্যবিত্ত নারীদের আকৃষ্ট করা ছিল তার লক্ষ্য। ট্রাম্পের উপদেষ্টা কনওয়ে মেলানিয়াকে এই বক্তব্য দিতে সহায়তা করেছেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময়ই মেলানিয়ার সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন তিনি। স্বামীর নির্বাচনী প্রচারণায় কনওয়ের ভূমিকার প্রশংসাও করেছেন মেলানিয়া। ওই প্রচারণায় মেলানিয়া ট্রাম্পের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন ট্রাম্পের রানিং মেট মাইক পেন্সের স্ত্রী ক্যারেন পেন্সও। ক্যারেনই মূলত মঞ্চে সম্ভাষণ জানান মেলানিয়াকে। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি জানি, তিনি আমেরিকার জনগণকে যতটা ভালোবাসেন, আমেরিকার জনগণও তাকে ঠিক ততটাই ভালোবাসবেন।’

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031