শেষ দিনে আর ৬টি উইকেট নিলেই চলতো দক্ষিণ আফ্রিকার। জয়ের মঞ্চটা তৈরি করা ছিল পার্থ টেস্টের চতুর্থ দিনেই। উল্টো চিত্র ছিল অস্ট্রেলিয়ানদের সামনে; আরো ৩৭০ রান তোলার বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুমাতে গিয়েছিল তারা। পাল্লাটা তাই ঝুঁকে ছিল প্রোটিয়াদের দিকেই। প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে অস্ট্রেলিয়া রাজত্ব করার পর ম্যাচের লাগাম টেনে নেওয়া সফরকারীদের দাপটের সামনে শেষ পর্যন্ত আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি স্বাগতিকরা। সোমবার প্রোটিয়াদের উৎসবে পার্থের লড়াইয়ের সমাপ্তির দিনে স্টিভেন স্মিথের দলের বিপক্ষে ১৭৭ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে ফ্যাফ ডু প্লেসিসের দল।
৫৩৯ রানের প্রায় অসম্ভব লক্ষ্যের পেছনে ছুটতে গিয়ে চতুর্থ দিন শেষে ৪ উইকেটে ১৬৯ রান তুলেছিল অস্ট্রেলিয়া। শেষ দিনে গুটিয়ে যাওয়ার আগে আরো ১৯২ তুলতে পেরেছে স্বাগতিকরা। সেটি কেবল ডুপ্লেসিসের দলের জয়কেই বিলম্বিত করেছে।
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (ওয়াকা) গ্রাউন্ডে প্রথম ইনিংসে মিচেল স্টার্কের বোলিং তোপে মাত্র ২৪২ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাব দিতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে ডেভিড ওয়ার্নার ও শন মার্শ ১৫৮ রানের দারুণ সূচনা এনে দেন অজিদের। কিন্তু ভারনন ফিনল্যান্ডার ও কেশব মাহারাজের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ২৪৪ রানেই থেমে যায় স্বাগতিকদের প্রথম ইনিংস।
ম্যাচে ২ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ উইকেটে ৫৪০ রানের পাহাড় গড়ে ইনিংস ঘোষণা করে প্রোটিয়ারা। পরে জয়ের জন্য ৫৩৯ রানের প্রায় অসম্ভব লক্ষ্য তাড়া করতে যেয়ে ৩৬১ রানের বেশি এগোতে পারল না অস্ট্রেলিয়া।
সকালে উসমান খাজা ৫৮ ও মিচেল মার্শ ১৫ রানে অপরাজিত থেকে ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন। তাতে নিজের ইনিংসটাকে ২৬ রানের বেশি টেনে নিতে পারেননি মার্শ। এরপর খানিকটা প্রতিরোধ গড়েন খাজা ও পিটার নেভিল। অবশ্য দলের হারের দিনে ৩ রানের জন্য ব্যক্তিগত হতাশাতেও ডুবতে হয়েছে খাজাকে।
সেঞ্চুরি থেকে সামান্য দূরে ৯৭ রানে ডুমিনির বলে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েছেন খাজা। অন্য প্রান্তে নেভিল মাটি কামড়ে ছিলেন। স্টার্ক (১৩), সিডল (১৩) হ্যাজেলউড (২৬) ছোট ছোট জুটিতে তাকে সঙ্গ দিলেও টিকে থাকতে পারেননি। স্বাগতিকদের দ্বিতীয় ইনিংস গুটিয়ে যাওয়ার সময় ৬০ রানে অপরাজিত ছিলেন নেভিল।
দলের মূল পেসার ডেল স্টেইন অজিদের প্রথম ইনিংসে বোলিংয়ের সময় চোট নিয়ে ছিটকে গেছেন। তবে সেটি বুঝতে দেননি কাগিসো রাবাদা। অজিদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফিরিয়েছেন এই তরুণ। ৯২ রান খরচার ইনিংসে ৩১ ওভার বোলিং করেছেন তিনি। এছাড়া ফিনল্যান্ডার, ডুমিনি, মাহারাজ ও বাভুমা একটি করে উইকেট তুলে নিয়ে রাবাদাকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার দাপটে গত ২৮ বছরে প্রথমবারের মতো ঘরের মাঠে গ্রীষ্মকালীন সিরিজের প্রথম ম্যাচে হারের মুখে পড়ল অস্ট্রেলিয়া। ১৯৮৮ সালে ব্রিসবেনের গ্যাবায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হারার পর আর একবারও ঘরের মাঠে গ্রীষ্মকালীন সিরিজের প্রথম টেস্টে পরাজয়ের মুখ দেখেনি অজিরা।
এর আগে গত মাসে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়াকে ওয়ানডে সিরিজে ৫-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এবার ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজে প্রোটিয়াদের পেয়ে প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগের শুরুতেই হোঁচট খেলো অস্ট্রেলিয়ানরা।
