বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমে দসীমান্তে চোরাচালানের নেপথ্যে সীমান্তে বসবাসকারী মানুষের দারিদ্র্যকেই দায়ী করেছেন । তিনি বলেন, ‘আমাদের সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারী মানুষের জীবনযাত্রার মান দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের চেয়ে অনেক কম। তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব ভালো নয়। এই অভাবের সুযোগ নিয়ে চোরাকারবারীরা তাদের ব্যবহার করে। আসলে তারা চোরকারবারী না, বাহক।’ মঙ্গলবার বিজিবি সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
বিজিবিতে দায়িত্ব পালনের চারবছর শেষে বাহিনীর কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এদিকে, ফেলানী হত্যার বিচার শেষ না হওয়ায় অতৃপ্তি রয়েছে বলে জানিয়েছেন আজিজ আজমেদ। তিনি বলেন, ‘ফেলানী হত্যার বিষয়ে ভারত বিচার শুরু করেছিল। বিচারে একটি রায়ও হয়েছিল। তবে বর্তমানে একটি সংগঠন উচ্চআদালতে আবেদন করেছে। সেটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসলে কিছু বলা যাচ্ছে না। বিচার কী অবস্থায় আছে তাও বলা যাচ্ছে না।’
৬০ জনকে চাকরি থেকে অব্যাহতি
গত চার বছরে অন্তত ৬০ জনকে বিভিন্ন অপরাধে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘গত চার বছরে ৬০ থেকে ৭০ জনকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘তাদের শুধু চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য অব্যাহতি দেওয়া হয়নি, আরও বিভিন্ন কারণে তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে কারও কারও বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার কারণও রয়েছে।’
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘অধিকাংশ বিজিবি সদস্য কর্মস্থলে পরিবার ছাড়াই থাকেন। তাদের স্ত্রী সন্তান বাড়িতে থাকে। তারা যদি কেউ কর্মস্থলে বসে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়ান, তাহলে আমি তাদের ছাড় দেই না। তবে মানবিক কারণে অনেকে অনেককে ছাড় দিয়েছি। কারণ চাকরি থেকে এভাবে অব্যাহতি দিলে তারা কোনও টাকা পয়সা পেত না। তাই তাদের দ্রুত অবসরের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বাড়িতে যাও, তবে চাকরি পাবে না।’
দুটি চ্যালেঞ্জ
বিদায়ী বিজিবি ডিজি আজিজ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের সীমান্তে সড়ক ও কাঁটাতারের বেড়া না থাকা বিজিবির দায়িত্ব পালনে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ দুর্গম পথে পায়ে হেটে আমাদের সদস্যদের সীমান্ত এলাকায় টহল দিতে হয়। যদি সীমান্তে সড়ক থাকতো, তাহলে আমরা গাড়িতে করে টহল দিতে পারতাম। এখন যেখানে দু’বার টহল হয়, সড়ক থাকলে সেখানে গাড়িতে বিশ বার টহল দেওয়া যাবে। আমাদের সীমান্তে সড়ক ও কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া জরুরি। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আমাদের কাজ শুরু হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। টাকা হাতে পেলেই কাজ শুরু হবে।’
চোরাকারবারের নেপথ্যে সীমান্তের দারিদ্র্য
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, আমাদের সীমান্ত ব্যাংকের মাধ্যমে এসব সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের জীবনের মানোন্নয়নে কাজ করব। আমি দেশের এনজিওগুলোকে বলব, সেখানের মানুষদের নিয়ে কাজ করার জন্য। সেখানে তারা কোনও বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতা পায় না।’
চার বছরের বিজিবির গুরুত্বপূর্ণ অর্জন ও কর্মকাণ্ড
বিদায়ী ডিজি মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদের আমলে গত চার বছরে বিজিবির অর্জন ও কর্মকাণ্ডকে চারটিভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। সেগুলো হলো- অপারেশনাল কর্মকাণ্ড, প্রশিক্ষণ ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে উন্নয়ন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও কল্যানমূলক কর্মকাণ্ড।
বিজিবি ডিজি বলেন, ‘বিওপি হচ্ছে এ বাহিনীর কর্মকাণ্ডের মূল চালিকাশক্তি। গত চার বছরে বিওপির উন্নয়ন করা হয়েছে। জোয়ানদের থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থার উন্নতি করা হয়েছে। ৩৩৩ টি বিওপিতে সোলার প্যানেল ও ২৯ টি বিওপিতে বিদ্যুত সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ৪ টি রিজিয়ন সদর, চারটি সেক্টর সদর ও ১৫ টি ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এছাড়া ১০৮ টির বেশি বিওপি ও দু’টি ভাসমান বিওপি নির্মাণ করা হয়েছে।’
এছাড়াও টহল পরিচালনার জন্য মোটরসাইকেল সরবরাহ, অরক্ষিত সীমান্ত নজরদারিতে আনা, ডগ স্কোয়াড সংযোগ, জনবল নিয়োগ, বিজিবিতে প্রথমবারের মতো নারী সৈনিক নিয়োগ, সীমান্ত সড়ক, বিজিবি এয়ার উইং স্থাপণ, কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন, চোরাচালান, মাদক পাচার, মানব পাচার দমনে সাফল্য রয়েছে বলে বিফ্রিংয়ে জানান তিনি।
ডিজি বলেন, ‘রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের প্রতিহত, সীমান্ত হত্যা হ্রাস, সন্ত্রাসী হামলায় সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া, অভ্যান্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ভূমিকা রয়েছে বিজিবি।’
বিএনপি জামায়াতের অবরোধের সময়কাল ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‘ওই সময় অনেক বাহিনী দুর্বল হয়ে পড়লেও আমার বিজিবি দুর্বল হয়নি। তারা টানা দায়িত্ব পালন করেছেন। কোনও জোয়ান বলেনি স্যার আমি দায়িত্ব পালন করতে পারব না।’
তার আমলে প্রশিক্ষণ ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে উন্নয়ন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন ও কল্যাণমূলক কাজের অবদানের কথা স্মরণ করেন ডিজি।
