ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন । রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিলাসী জীবনযাপন বহুল আলোচিত। একই সঙ্গে তার পরিবারের পরিধিও অনেক বড়। ফলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ট্রাম্প পরিবারের কোন কোন সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনিক কেন্দ্র হোয়াইট হাউসে উঠছেন তা নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তিনটি বিয়ে করেছেন। বর্তমানে তার সঙ্গে রয়েছেন তৃতীয় স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প। ট্রাম্পের ছেলেমেয়ের সংখ্যা ৫ জন। তাদের মধ্যে তিন ছেলে হলেন, এরিক ট্রাম্প (৩২), ডোনাল্ড ডন ট্রাম্প জুনিয়র (৩৮) ও ছোট ছেলে ব্যারন উইলিয়াম ট্রাম্প (১০)। দুই মেয়ে আইভানকা ট্রাম্প (৩৫) ও টিফানি ট্রাম্প (২৩)।
ছেলেমেয়েদের মধ্যে দুই ছেলে ও এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। এরিক বিয়ে করেছেন লারা ইউনাস্কা ট্রাম্প (৩৪)-কে ও ডোনাল্ড জুনিয়র বিয়ে করেছেন ভ্যানেসা হেইডন ট্রাম্প (৩৮)-কে। আর মেয়ে আইভানকার স্বামী হলেন জ্যারেড কুশনার।
ট্রাম্পের নাতি-নাতনির সংখ্যা ৮ জন। এর মধ্যে দুজন তাদের সঙ্গে বাস করেন। তারা হলেন, কাই ট্রাম্প (৯) ও ডোনাল্ড ট্রাম্প তৃতীয় (৬)।
ভাইস প্রেসিডেন্টসহ ট্রাম্প পরিবার
মার্কিন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, হোয়াইট হাউসে স্ত্রী মেলানিয়া ও ১০ বছরের ছেলে ব্যারনকে নিয়ে হোয়াইট হাউসে ওঠতে পারেন ট্রাম্প। প্রাপ্ত বয়স্ক অপর ছেলে-মেয়েরা নিয়মিত হোয়াইট হাউসে যাতায়াত করবেন।
জন এফ. কেনেডি জুনিয়রের পর সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে হোয়াইট হাউসে বাস করবেন ব্যারন ট্রাম্প। প্রচারের আলোয় থেকেই বেড়ে ওঠা হবে ব্যারনের।
অবশ্য এটা একেবারে নিশ্চিত না। কারণ ট্রাম্প কী সিদ্ধান্ত নেবেন তা অনুমান করা মুশকিল। ট্রাম্পের তিন স্ত্রীরই সন্তান রয়েছে। ফলে সব পক্ষেরই ছেলেমেয়েদের নিজের সঙ্গে রাখতে পারেন ট্রাম্প। সিবিএস নিউজের মতে, ট্রাম্পের কয়েকজন ছেলেমেয়ে তার গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা হিসেবে ভূমিকা রেখে আসছেন। ফলে তাদের কাছাকাছি রাখতে চাইবেন ট্রাম্প।
হোয়াইট হাউস
বুধবার সকালে বিজয়ীর ভাষণের সময়ও ট্রাম্পের পাশে ছিলেন সবচেয়ে বিশ্বস্ত রাজনৈতিক মিত্র ও উপদেষ্টা হিসেবে পরিচিত তার পরিবারের সদস্যরা। ভাষণে পরিবারের সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।
ফার্স্টলেডি হিসেবে মেলানিয়া সাইবার নিপীড়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। নির্বাচনি প্রচারণার সময় খুব একটা তাকে দেখা যায়নি। বাসায় ১০ বছরের ছেলে ব্যারনকে সময় দিয়েছেন তিনি। তবে হোয়াইট হাউসে যাওয়ার পর এই অবস্থা পাল্টাবে কিনা তা সময়ই বলে দেবে।
পুরো নির্বাচনি প্রচারণায় ট্রাম্পের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ছিলেন বড় মেয়ে ও ব্যবসায়ী আইভানকা ট্রাম্প। তাকে ট্রাম্পের সবচেয়ে প্রিয় সন্তান হিসেবে মনে করা হয়। আইভানকার স্বামী জ্যারেড কুশনারও ডিজিটাল প্রচারণা তদারকি করে ট্রাম্পকে নিজের বিশ্বস্ততার প্রমাণ দিয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসনে এই দম্পতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে বলে মনে করেন অনেকেই। এমনকি হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ হিসেবেও কুশনারের নাম আলোচিত হচ্ছে।
প্রচারণার সময় এরিক ট্রাম্পকে মাঝে মাঝেই ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা গেছে। বেশির ভাগ সময়েই ট্রাম্পের সঙ্গে ছিলেন এরিকের ভাই ডোনাল্ড জুনিয়র। ধারণা করা হচ্ছে, দুই ভাই এখন ট্রাম্পের ব্যবসায় হাল ধরবেন। আর দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান ও সবচেয়ে ছোট মেয়ে টিফানি ট্রাম্প আইন বিষয়ে পড়াশোনা অব্যাহত রাখবেন।
সিবিএস নিউজের সাংবাদিক ল্যাংলির মতে, প্রচারণার সময় পরিবারের যেসব সদস্য উপস্থিত ছিলেন তারা ট্রাম্পের খুবই ঘনিষ্ঠ এবং জয়ী হতে সহযোগিতা করেছেন। দেশ পরিচালনাতেও তাদের ভূমিকা আগামীতে দেখা যাবে।
এদিকে, ট্রাম্পের বিলাসী জীবনের কারণে হোয়াইট হাউস সংস্কার করতে পারেন বলেও মনে করা হচ্ছে। ১৩২ রুমের হোয়াইট হাউসকে ট্রাম্প পরিবারের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে কিছুটা সংস্কার প্রয়োজন পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিজের ইচ্ছেমতো ওভাল অফিস (প্রেসিডেন্টের অফিস) সাজানোর সুযোগ থাকবে ট্রাম্পের। হোয়াইট হাউসে বসবাসের জন্য নির্বাচিত সদস্য ও কর্মীদের স্থানান্তরের সময় বেশ কিছু আসবাবপত্রও পরিবর্তিত হবে। ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্প পরিবারের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে অন্তত ১০০জন কর্মী আসবেন।
হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিস
যে কোনও নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউসে ওঠার সময় কিছু না কিছু পরিবর্তন করেছেন। জেরাল্ড ফোর্ড আউটডোর সুইমিং পুল বসিয়েছিলেন, রিচার্ড নিক্সন একলেনের বউলিং অ্যালে স্থাপন করেছিলেন। সর্বশেষ মিশেল ওবামা বাগান ও বারাক ওবামা টেনিস কোর্ট স্থাপন করেন। যা বাস্কেটবল মাঠ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে। ট্রাম্প যদি নিজের শখ ধরে রাখেন তাহলে আশা করা হচ্ছে তিনি এবার হয়ত চাইবেন হোয়াইট হাউসে গলফ কোর্স স্থাপন করতে।
তবে এসব কিছুই অনুমান। হোয়াইট হাউস নিয়ে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্টলেডি তাদের পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত জানাননি। কিন্তু ২০১৫ সালে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘যদি আমি নির্বাচিত হই, তাহলে কিছুটা পরিবর্তন তো করবই… কিন্তু হোয়াইট হাউস হচ্ছে বিশেষ স্থান, এখানে বেশি কিছু পরিবর্তন কেউই চাইবে না।’ সূত্র: গার্ডিয়ান, ডেইলি মিরর, সিবিএস নিউজ।
