গণতন্ত্রের বড়াই করা দেশে নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীর বিরুদ্ধে এমন বিক্ষোভ হতবাক করেছে গোটা বিশ্বকেই। মূলধারার প্রায় প্রতিটি গণমাধ্যমে গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হচ্ছে এসব খবর। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটে জেতা ডোনাল্ড ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশটি।
বিক্ষোভকারীরা ভাঙচুর চালাচ্ছে, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ জড়াচ্ছে, মিছিল করছে, আগুন ধরাচ্ছে, যান চলাচলে বাধা দিচ্ছে, চলছে ট্রাম্পবিরোধী স্লোগান। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না কী তাদের দাবি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে পাঁচটি কারণ উঠে এসেছে।
ভোটে ট্রাম্পের জয় নিশ্চিত হওয়ার পর প্রথমে বিক্ষোভে নামে ক্যালিফোর্নিয়াবাসী। এরপর তা ছড়িয়ে যায় নিউ ইয়র্ক থেকে আটলান্টা পর্যন্ত জনপদে। হাজারো মানুষ রাজপথে নেমে এসে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করছে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিক্ষোভকারীরা শান্ত থাকলেও পোর্টল্যান্ড, ওরেগনে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। সেখানে পুলিশ দাঙ্গা পরিস্থিতি ঘোষণা করেছে।
‘ডাম্প ট্রাম্প’
হাজারো মানুষ মিছিলে এই স্লোগান তুলছে। বুধবার রাতে শিয়াটলের উপশহরে মিছিল বের করে।
এর মানে কি? সিএনএন বলছে, বিক্ষোভকারীরা ইলেকটোরাল কলেজের নির্বাচিত ভোটারদেরকে হিলারির পক্ষে মত দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা ইলেকটোরাল কলেজে লিখিতভাবে দাবি জানানে অনলাইন পিটিশনও খুলেছেন।

কিন্তু এটা কি সম্ভব? snopes.com এ একটি লেখায় বলা হয়েছে, ‘এটf হওয়া প্রায় অসম্ভব। …যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে অপ্রত্যাশিত এবং পুরোপুরি মোড় ঘুরে যাওয়ার মতো ঘটনা হবে এটি।’
‘সেতুবন্ধন, বাধা নয়’
ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারে অভিবাসনবিরোধী প্রচারকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তিনি অবৈধ অভিবাসীদেরকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা চান না এমনটি হোক।
আটলান্টায় বিক্ষোভে যোগ দেয়া ১৯ বছর বয়সী স্পেনসার স্মিথ বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি আমার অনিবন্ধিত বন্ধুদের জন্য।’

মিয়ামি শহরে বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিচ্ছিল, ‘সেতুবন্ধন তৈরি করুন, বাধা হয়ে দাঁড়াবেন না।’ ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারে ম্যাক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তৈরির কথা বলেছিলেন। এই বিষয়টিকেই সামনে আনছেন বিক্ষোভকারীরা।
কিন্তু ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এই দেয়াল কি আদৌ নির্মাণ হবে? ট্রাম্পের অভিবাসী বিষয়ক পরামর্শক ক্রিস কোরব্যাচ বলেন, ‘এটা যে নির্মাণ হবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। প্রশ্ন হচ্ছে এটা কত তাড়াতাড়ি হবে এবং এর জন্য খরচ কে করবে।’
নিজেদের চাওয়াটাকে জানিয়ে দেওয়া
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণ করবেন ২০ জানুয়ারি। কিন্তু তাকে তারা জানিয়ে দিতে চান যে, নির্বাচনের ফলাফলে তারা খুশি নন। আর ঘটনাটি তারা মেনে নেবেনও না।
আইওয়া শহরে বিক্ষোভকারীদের দুটি প্রধান উদ্দেশ্যের কথা জানিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব আইওয়ার পিএইচডির ছাত্র রেচেল ওয়ালেরস্টেইন। এক. শেতাঙ্গ ছাড়া অন্য মানুষ, অভিবাসী ও সমকামীদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানো, দুই. ট্রাম্প যেন তার ১০০ দিনের ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে না পারে, সে জন্য রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করা। রেটেল বলেন, ‘আমরা আমাদের এসব বক্তব্যকে সামনে নিয়ে আসতে চাই।’
আরেক বিক্ষোভকারী ডালিনা অ্যামি পারডেমো বলেন, ‘আমরা মূলত সচেতনতা বৃদ্ধি করতে চাই।’ ট্রাম্প প্রথমে বিক্ষোভকারীদেরকে ভাড়াটে বললেও পরে অবশ্য তিনি তাদের প্রশংসা করেছেন।
ট্রাম্প যেন তার ঘৃণা সূচক বক্তব্য থেকে সরে আসেন
নিউ ইয়র্কে বিক্ষোভে অংশ নেয়া নিক ট্রুসেডেল বলেন, ‘তিনি ঘৃণাসূচক যা যা অতীতে বলেছেন এবং যা যা করার অঙ্গীকার করেছেন, তাকে সে সব থেকে সরে আসতে হবে’।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে ট্রাম্প চলতি সপ্তাহেই অবশ্য বলেছেন, তিনি তার অতীত বক্তব্যকে নিয়ে খুব বেশি ভাবছেন না। তবে তিনি চান, জনগণ যেন ঐক্যবদ্ধ হয়। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এমন একটি দেশ চাই যেখানে সবাই সবাইকে ভালোবাসবে। আমি এর ওপরই গুরুত্ব দেবো।’

ট্রাম্পের জয়ের স্মরণে শেতাঙ্গদের একাধিপত্যের প্রকাশের জন্য পরিকল্পনা করা কে কে কে শোভাযাত্রা বাতিলের দাবিও জানাচ্ছেন অনেকে। ট্রাম্প অবশ্য এই শোভাযাত্রার কথা সবাইকে বলেননি। আর নর্থ ক্যারোলিনা রিপাবলিকান পার্টি এর সমালোচনাও করেছে।
‘তিনি আমাদের প্রেসিডেন্ট নন’
সারাদেশের বিক্ষোভকারীরাই এই স্লোগানটাই বেশি দিচ্ছে। আটলান্টায় বিক্ষোভের আয়োজকদের একজন ফেইসবুকে লিখেছেন, ‘ট্রাম্পকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমরা সম্মান করি না।’
‘ট্রাম্প বা তার মতো কোনো নেতা, যারা আমাদের ভয়কে নিয়ে খেলে, তাদেরকে আমরা চাই না। যিনি মুসলমানদেরকে নিষিদ্ধ করতে চান, তাকে আমরা চাই না, যিনি ম্যাক্সিকানকে ধর্ষক বলেন, তাকে আমরা চাই না।’- আটলান্টায় বিক্ষোভের আয়োজন করে তাতে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে লেখা বার্তায় এমন কথাই বলা হয়েছে।

বার্তায় লেখা হয়, ‘ধর্ষকামী সংস্কৃতিকে না বলুন যিনি শেতাঙ্গদের একাধিপত্যের কথা বলেন, তাকে না বলুন, যিনি আমাদের পরিবেশের ক্ষতি করার কথা বলেন, তাকে না বলুন।’
