সাফল্যের আলো জ্বলে না। বেতারে বিদ্যুৎ সংযোগ হয় না, তার লাগে। তেমনি, মনের তারে বাঁধতে হয় মানুষকে, নইলে নির্বাচনে ভোট বাক্স ভরে না। নিজের আখের  গোছাতে গেলে তার ছিঁড়ে বিচ্ছিন্ন। মানুষ  বেজার, বিরক্ত। তোয়াজেও কাজ হয় না। প্রার্থীর সব প্রতিশ্রুতি তখন ফাঁকা বুলি। কাছে  গেলে তারা দূরে সরে। প্রাপ্তি কেবল প্রত্যাখ্যানের যন্ত্রণা। সেই শঙ্কা আওয়ামী লীগের অনেক সাংসদেরই। সংখ্যাটা পঞ্চাশের কম নয়। এতদিন দলের চাক ভেঙে মধু  খেয়েছেন। মৌচাকে মৌ সংগ্রহের দায়িত্ব  নেননি। আওয়ামী লীগের ব্ল্যাক লিস্টে তাদের নাম। আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়াটা অনিশ্চিত। তাদের অনেকেই ভেবেছিলেন, শেখ হাসিনার ভাবমূর্তিতে ভর করে নির্বাচনী  বৈতরণী পেরোবেন। সেটা হবে না। অপদার্থরা হাসিনার কৃতিত্বের ভাগ পাবেন কেন। দলটা হাসিনার একার নয়। তার নেতৃত্বে হাজার হাজার নেতাকর্মীর প্রাণান্ত পরিশ্রমে দলটা আজ এই জায়গায়। বিরোধীরা বিভ্রান্ত। আওয়ামী লীগের সঙ্গে লড়বে কী করে ভেবে পাচ্ছে না।
এটা ঠিক হাসিনার নামে ল্যামপোস্টকে দাঁড় করালেও ভোটে জিতবে। সেটা হাসিনার কৃতিত্ব। বিচক্ষণতা, দৃঢ়তা, সত্যনিষ্ঠা ও কর্মনিষ্ঠায় তিনি বিশ্বজনীন। তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে ধীরে ধীরে দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন উচ্চতার শিখরে। ৩৫ বছর ধরে দলের হাল ধরে। বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের রূপকার। তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দল ফুলে ফেঁপে উঠেছে। সদস্য সংখ্যা সীমাহীন। সেখানে  কোনো ফাঁকিবাজি কি মানা যায়! কেউ মরে বিল ছেঁচে, কেউ খায় কই। দলের সাফল্যে অনুরঞ্জিত হবেন, অবদান রাখবেন না। কোনো  কোনো সাংসদ আবার নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে এতটাই ব্যস্ত, রাজনীতিতে সময় দিতে পারেন না। ভাবখানা ডনাল্ড ট্রাম্পের মতো। যিনি জানিয়েছেন, নিজের ব্যবসা যে ভাবে চালাই, ঠিক সেই ভাবে আমেরিকা চালাবো। সত্যিই তাই করলে কেলেঙ্কারি। রাজনীতি, ব্যবসা নয়। সেখানে লাভ-ক্ষতির অঙ্ক চলে না। নিজেকে উজাড় করে দেয়াটাই শর্ত। পাওয়া নয় দেয়াটাই দায়িত্ব।
কারো কোথাও গাফিলতি মানবেন না হাসিনা। আগাছার মতো অপদার্থদের ছাঁটবেন। আগামী নির্বাচনে টিকিট দেবেন না। বাতিলের তালিকায় এমন অনেকে আছেন যারা প্রথমবার সাংসদ হয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন। পদের গ্ল্যামারটা উপভোগ করছেন। কাজের বেলায় অষ্টরম্ভা। তারা পার পাবেন না। সাংসদ বাতিলের প্রাথমিক তালিকায় আপাতত চট্টগ্রামের পাঁচ, সিরাজগঞ্জে চার, নোয়াখালীতে চার। যশোর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনায় নয়। নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, নাটোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, বরিশাল, টাঙ্গাইল, ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজারে ২৬। দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, মেহেরপুর, মাগুরা, খুলনা,  ভোলা, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, জয়পুরহাট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চাঁদপুর,  ফেনী, রংপুর, লক্ষ্মীপুরে ১৭।
সাংসদের কাজ নির্লক্ষ্য নয়। নিক্তির ওজনে মাপা হচ্ছে প্রতিটি পদক্ষেপ। ২০১৪’র ৫ই জানুয়ারি নবম সাধারণ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪ প্রার্থী জয়ী। সংসদের ৩০০ আসনে এত জনের লড়াই ছাড়া সাফল্য কম কথা নয়। ভোট কী বুঝলেন না। অথচ ভোটে জিতলেন। সেটাই কাল হয়েছে অনেক সাংসদের। এবার সেটা হবে না। গতবার প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে নামেনি। এবার নামছে, অগোছালো ঘর গোছাচ্ছে। ভারতবিদ্বেষকে ইস্যু করলে সুবিধা কিনা ভেবে  দেখছে। ভোটের ময়দানে নেমে গো-হারা হারতে তারা রাজি নয়। ২০১৯-এর ২৮শে জানুয়ারির তিন মাস আগে থেকে যে কোনো দিন ভোট। সময় আছে। আওয়ামী লীগের পিছিয়ে পড়া সাংসদরা চাইলে স্পিড বাড়িয়ে এগোতে পারেন। লেট করা ট্রেন গতি বাড়িয়ে  যেভাবে টাইম মেকআপ করে সেভাবেই।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031