জিল স্টেইন মার্কিন নির্বাচনে গ্রিন পার্টির প্রার্থী  তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যে ভোট পুনর্গণনার আবেদন জানাতে যাচ্ছেন। এ তিনটি অঙ্গরাজ্য হলো মিশিগান, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিন। তিনটিতেই জিতেছিলেন নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রামপ। উইসকিনসিনের ভোট পুনর্গণনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় ২০ লাখ ডলার সংগ্রহে তিনি অনলাইনে আবেদন জানানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যায়। কয়েকদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন কমিপউটার বিজ্ঞানী দাবি করেন তারা এ তিনটি অঙ্গরাজ্যে ভোটগ্রহণে হ্যাকিং-এর আলামত পেয়েছেন। তারা ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের শিবিরের সঙ্গে ভোট পুনর্গণনার দাবি জানাতে যোগাযোগও করেন। এরই মধ্যে জিল স্টেইন পুনর্গণনার উদ্যোগ নিলেন। এ খবর দিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান। খবরে বলা হয়, ইস্টার্ন স্টান্ডার্ড সময়ানুযায়ী বুধবার মধ্যরাতের আগেই তার প্রত্যাশিত ২০ লাখ ডলারের চেয়ে বেশি অর্থ সংগৃহীত হয়। তিনি উইসকনসিনে পুনর্গণনার আবেদন জানাবেন। শুক্রবার রাজ্যটিতে পুনর্গণনার শেষ তারিখ।
স্টেইন বলেন, ‘নির্বাচনে অনিয়মের জোরালো প্রমাণে’র প্রেক্ষিতে তিনি ভোট পুনর্গণনার দাবি জানাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ডাটা অ্যানালাইসিস থেকে ইঙ্গিত মিলছে যে, অঙ্গরাজ্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকাশিত ‘মোট ভোটের হিসাবে বেশ অসামঞ্জস্য’ দেখা গেছে। তার মতে, ‘২০১৬ সালের নির্বাচন প্রত্যয়িত হওয়ার পূর্বে এ উদ্বেগগুলোর তদন্ত হওয়া দরকার। আমরা বিশ্বাস করতে পারি এমন নির্বাচনই আমাদের প্রাপ্য।’ তিনি একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এ অর্থ সংগ্রহ করছেন। এতে বলা হয়, তিনটি রাজ্যের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রায় ৬০-৭০ লাখ ডলার প্রয়োজন।
একদল শিক্ষাবিদ ও কমিপউটার বিজ্ঞানী কয়েকদিন ধরেই ভোট পুনর্গণনা ও তদন্তের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাদের আশঙ্কা, বিদেশি হ্যাকাররা হয়তো নির্বাচনী সিস্টেমে অনুপ্রবেশ করেছে। এ দলটি পরাজিত ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে ভোট পুনর্গণনার দাবি জানাতে আহ্বান জানিয়েছে। এ মাসের শুরুতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক ঘেঁষা পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিনে অপ্রত্যাশিত ও স্বল্প ব্যবধানে জয় পান ডনাল্ড ট্রামপ। মিশিগানেও তিনি স্বল্প ব্যবধানে জিততে পারেন। এ রাজ্যের ফল এখনও ঘোষিত হয়নি।
স্টেইন ও তার শিবির থেকে বলা হচ্ছে, তারা ভোট পুনর্গণনার দাবি জানাচ্ছেন, কারণ তারা নিশ্চিত করতে চান যে নির্বাচনী ফলাফল আসল। এমন নয় যে, এসব রাজ্যে তারা জিতেছেন বলে তারা মনে করছেন। কিন্তু তারা ফলাফলের মর্যাদার স্বার্থেই এ উদ্যোগ নিয়েছেন বলে তাদের দাবি। যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি রাজ্যে ব্যালটে নাম ছিল এমন যেকোন প্রার্থী ভোট পুনর্গণনার দাবি জানাতে পারেন।
জিল স্টেইন ও তার দলকে এখন দ্রুত বিভিন্ন কাজ করতে হবে। উইসকনসিনে ভোট পুনর্গণনার অনুরোধ জানানোর শেষ সময় শুক্রবার। এ রাজ্যে ট্রামপ ০.৭ শতাংশ ব্যবধানে জিতেছেন। পেনসিলভানিয়ায় তার ব্যবধান ছিল ১.২ শতাংশ। ওই রাজ্যে ভোট গণনার অনুরোধ জানানোর শেষ সময় সোমবার। মিশিগানে বুধবার হলো ফলাফল চ্যালেঞ্জ করার শেষ সময়। এ রাজ্যে বর্তমানে ট্রামপ মাত্র ০.৩ শতাংশ ব্যবধানে এগিয়ে আছেন।
এর আগে গার্ডিয়ান জানিয়েছিল, শিক্ষাবিদ ও অ্যাক্টিভিস্টদের একটি দল নির্বাচনের নিরাপত্তা নিয়ে তাদের উদ্বেগের বিষয়টি রিপোর্ট আকারে কংগ্রেশনাল কমিটি চেয়ারম্যান ও ফেডারেল কর্তৃপক্ষের কাছে আগামী সপ্তাহের শুরুতে পাঠাবে। মার্কিন ইলেকশন অ্যাসিস্ট্যান্স কমিশনের উপদেষ্টা ড. বারবারা সিমন্স বলেন, ‘আমি ভোট যাচাই-বাছাইয়ে আগ্রহী। আমাদের প্রয়োজন নির্বাচন পরবর্তী ব্যালট অডিটের ব্যবস্থা থাকা।’ ভোটের ডাটা অ্যানালাইসিস করেছে এমন একটি গ্রুপের সঙ্গে তিনি সংশ্লিষ্ট। দ্বিতীয় আরেক বিশ্লেষক দলের নেতৃত্বে রয়েছেন ন্যাশনাল ভোটিং রাইটস ইন্সটিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা জন বোনিফাজ ও অধ্যাপক অ্যালেক্স হ্যাল্ডারম্যান। হ্যাল্ডারম্যান হলেন মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিপউটার নিরাপত্তা সেন্টারের পরিচালক।
নির্বাচনে ট্রামপ জয় পাওয়ার আগে মার্কিন একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তাদের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে জানায় যে, রাশিয়ান হ্যাকাররা আঞ্চলিক ইলেকটোরাল কমিপউটার সিস্টেমে অনুপ্রবেশে জড়িত। নির্বাচনের আগে তারা ডেমোক্রেটিক পার্টির কর্মকর্তাদের নেটওয়ার্কেও হানা দেয়। উইসকনসিনে ট্রামেপর জয় নিয়ে সন্দেহ হওয়ার কারণ হলো, শুধু পেপার ব্যালট ও শুধুমাত্র ইলেক্ট্রনিক সিস্টেম থাকা কাউন্টিগুলোতে ট্রামেপর প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান অনেক বেশি। উইসকনসিনে যেসব ভোটিং মেশিন ব্যবহৃত হয় সেসব ক্যালিফোর্নিয়ার মতো রাজ্যে নিষিদ্ধ। কারণ, নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বারবার দেখিয়েছেন যে, এসব মেশিন কত সহজে হ্যাক করা যায়!
তবে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ নেট সিলভার এ থিওরি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তার মতে, বর্ণ ও শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসাব করলে এ ব্যবধান অসামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হবে না। সিলভার ও আরও কিছু নির্বাচনী বিশ্লেষক ফলাফল নিয়ে উদ্বেগ নাকচ করে দিয়েছেন। এরপরও সাইবার নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ কয়েক ডজন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক কংগ্রেস নেতাদের কাছে দুই দিন আগে খোলা চিঠি লিখেছেন। সেখানে তারা লিখেছেন যে, নির্বাচনে বিদেশী হস্তক্ষেপের সংবাদে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তারা আইনপ্রণেতাদেরকে এ বিষয়ে জরুরী পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে তারা নির্বাচনী ফলকে সরাসরি প্রশ্ন করছেন না। এদিকে সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম ও কংগ্রেসম্যান এলিজাহ কামিংস-এর মতো জ্যেষ্ঠ আইনপ্রণেতারা ইতিমধ্যে নির্বাচন চলাকালে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে গভীর তদন্ত পরিচালনার দাবি জানিয়েছেন।
তবে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে জিল স্টেইন ভোট পুনর্গণনার উদ্যোগ নেয়ায় বেঁচে গেল ডেমোক্রেটিক দল ও হিলারি শিবির।  প্রচারাভিযান চলাকালে ট্রামপ যখন নির্বাচনে কারচুপি হবে বলে রব তুলেছিলেন, তখন হিলারি সেসব জোরগলায় নাকচ করেছিলেন। তাই শীর্ষ ডেমোক্রেটরা এ বিষয়ে সরব হতে চাইছেন না। কারণ, এটি একরকম নির্বাচনী কারচুপির অভিযোগ তোলারই শামিল। তবে কেউ কেউ প্রকাশ্যেই কথা বলছেন। হিলারির সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী হুমা আবেদিনের বোন ফেসবুকে লিখেছেন যে, পেনসিলভানিয়া, মিশিগান ও উইসকনসিনে মাত্র ৫৫ হাজার ভোট এদিক-ওদিক হলেই ফল ঘুরে যাবে! তিনি মার্কিন আইন মন্ত্রণালয়কে তদন্তের অনুরোধ জানাতে সকলকে আহ্বান জানান। একই দাবি তুলেছেন ডেমোক্রেটিক জাতীয় কমিটির সাবেক পরামর্শক আলেক্সান্ডার চালুপা। প্রচারাভিযান চলাকালে তিনি মস্কোর সঙ্গে ট্রামেপর তৎকালীন ক্যামেপইন ম্যানেজার পল ম্যানাপোর্টের যোগসূত্র তদন্ত করেছিলেন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031