মায়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর চালানো নির্যাতন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শামিল বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা।

বুধবার জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস হাইকমিশনারের’ অফিস থেকে এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, মায়ানমারে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যে রক্তাক্ত সহিংসতায় আন্তর্জাতিক উদ্বেগে অং সান সু চি সরকারের সুনাম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

এতে বলা হয়, ‘রোহিঙ্গাদের ওপর বার্মা সরকারের চালানো দমন-পীড়ন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শামিল।’

গত জুন মাসের একটি রিপোর্টের তথ্য পুনর্ব্যক্ত করে এতে বলা হয়, ‘সরকার মূলত জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে…। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের ধরণ স্পষ্টতই মানবতাবিরোধী অপরাধ।’

জাতিসংঘের সাবেক প্রধান কফি আনান গত আগস্টে সপ্তাহব্যাপী ওই এলাকা পরিদর্শন করে ওই প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন। পরিদর্শন শেষে তিনি রাখাইনে সহিংসতায় ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেন।

চলতি মাসে পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্য সংখ্যালঘু হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর রক্তাক্ত নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। তাদের অমানবিক নির্যাতনে বাধ্য হয়ে এসব অসহায় রোহিঙ্গারা সীমান্ত অতিক্রম করে পার্শবর্তী বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে।

নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে শত শত রোহিঙ্গা গণধর্ষণ, ভয়ংকর নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছেন বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে ওঠে আসছে।

সাম্প্রতিক নির্যাতনে প্রায় ৩০,০০০ রোহিঙ্গা তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে এবং উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে কয়েক হাজার ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে।

মায়ানমারের সরকারি কর্মকর্তারা নির্যাতনের এসব অভিযোগকে অস্বীকার করে বলেছে, সেনাবাহিনী পুলিশের ওপর হামলার পেছনে জড়িত ‘সন্ত্রাসীদের’ হত্যা করছে।

ধর্ষণ ও হত্যার খবরে দেশটির সরকার মিডিয়াকে দায়ী করছে এবং রোহিঙ্গা মুসলমানদের ‘জাতিগতভাবে নির্মূল’ করতে মায়ানমার সরকার হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে- এমন বিবৃতি দেয়ায় বাংলাদেশে জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে মায়ানমার।

গণধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ তদন্ত করতে বিদেশি সাংবাদিক, স্বাধীন তদন্ত সংস্থা ও মানবাধিকার কর্মীদের এসব অঞ্চলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে দেয়া হচ্ছে না।

কয়েক প্রজন্ম ধরে এসব রোহিঙ্গারা বার্মায় বসবাস করে আসছে। তারপরেও তাদের নাগরিকত্বকে স্বীকার করা হয়নি। তারা বিবাহ, ধর্মপালন, সন্তান জন্মদানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তারা সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগণ হিসাবে বসবাস করছে।

২০১২ সালে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে তাদের ঘর-বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয় এবং এরপর থেকে তারা পুলিশ পাহাড়ায় দারিদ্র্যপীড়িত ক্যাম্পে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। সেখানে তারা স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং তাদের আন্দোলনকে প্রচন্ডভাবে দমিয়ে রাখা হয়েছে।

তাদের কেউ কেউ ক্যাম্প থেকে নৌকায় করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু অনেকে শেষ পর্যন্ত মানব পাচার কিংবা মুক্তিপণের শিকার হয়েছে।

সূত্র: ইন্ডিপেনডেন্ট, আলজাজিরা

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031