নালা-নর্দমা মশক নিধনে ওষুধ ছিটানোর বদলে পরিস্কার করা হচ্ছে । তাতেও কমছে না মশার উৎপাত। বরং মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ চট্টগ্রাম নগরবাসী। এমন পরিস্থিতিতে বাজার থেকে কেনা কয়েল ও স্প্রে ব্যবহার বাড়ছে। ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকির পাশাপাশি বাড়ছে আর্থিক ব্যয়ও।
চসিকের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে মশক নিধন ওষুধ সংগ্রহের জন্য ১০ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ রাখা হলেও কৌশলগত কারণে ওষুধ ছিটানোতে অনাগ্রহ খোদ মেয়রের। এর পরিবর্তে মশার উৎপাদনস্থল নালা-নর্দমা পরিষ্কারের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। অথচ এ যাবত নগরীর মশক নিধনে ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম চালিয়েছে চসিক।
সূত্র আরও জানায়, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শুরু থেকে চট্টগ্রাম মহানগরের সর্বত্র মশার উৎপাত বাড়ে। সে হিসেবে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেয় চসিক। এবার মশক নিধনের জন্য বরাদ্দ রাখা হলেও ওষুধ ছিটানোর কাজে ব্যবহৃত স্প্রে মেশিনগুলো অকেজো পড়ে আছে এখনও।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শফিকুল মান্নান সিদ্দীকি জানান, ওষুধ ছিটিয়ে মশক নিধনের চেয়ে প্রজননস্থল ধবংস করা হলে মশার উৎপাত কমার হার বৃদ্ধি পাবে। এই যুক্তিতে নালা-নর্দমা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে চসিক।
চসিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ও ২১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন এ প্রসঙ্গে বলেন, মশার উৎপাত বেড়েছে সত্য। নতুন করে আমরা ওষুধ আনার ব্যবস্থা করেছি। ওষুধ ছিটানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। পাওয়ার স্প্রে মেশিন নষ্ট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু কিছু পাওয়ার স্প্রে মেশিন রিপেয়ার করেছি এবং নতুন করেও সংগ্রহ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে মশক নিধন ওষুধ সংগ্রহের জন্য ১০ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু মশক নিধনের ওষুধ ছিটানোতে অনাগ্রহ খোদ মেয়রের। গত ১১ অক্টোবর চসিকের সাধারণ সভায় মেয়র আ জ ম নাছির বলেন, মশার ওষুধ ছিটানোতে অনেক অর্থের অপচয় হয়। এ জন্য মশার প্রজননস্থল, নালা-নর্দমা ও ডোবা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল হোসেন বলেন, নালা-নর্দমা পরিষ্কার থাকলে মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস হবে। তাছাড়া এখন থেকে নালা-নর্দমা পরিষ্কার করার ফলে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি এলেই দ্রুত পানি অপসারণ হবে, যা জলযটমুক্ত শহর গড়তে সহায়তা করবে।
প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরও বলেন, মশক নিয়ন্ত্রণে প্রতিবছর নগরীর বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে এডাল্ট ডি সাইট নামে পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসকারী ওষুধ ছিটানো হত। এছাড়া বর্ষা মৌসুম ছাড়া বছরের অন্য দিনগুলোতে নালা-নর্দমায় লাইট ডিজেল এবং লিমব্যাক (লাল তেল নামে পরিচিত) নামক মশার ডিম ধ্বংসকারী একটি তেল ছিটানোর ক্রাশ প্রোগ্রাম থাকে। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে বিভিন্ন নালা-নর্দমায় ব্যবহার করা হয় লাইট ডিজেল এবং স্কটল্যান্ডের তৈরি লিমব্যাক। নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডের জন্য প্রতি মাসে ৪শ লিটার করে লাল তেল বরাদ্দ থাকত, যা চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের নালা-নর্দমায় নিয়মিত ছিটাতেন।
নগরবাসীদের অভিযোগ, মশক নিধনে ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম বন্ধ রাখায় যত্রতত্র মশার উৎপাত বাড়ছে। বিশেষ করে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, মোহাম্মদপুর, নাসিরাবাদ, মৌসুমি আবাসিক এলাকার মতো সবকটি আবাসিক এলাকায় মশার যন্ত্রণা ক্রমেই বাড়ছে।
মশার কামড় থেকে রেহাই পেতে মানুষ বাজার থেকে কয়েল ও স্প্রে কিনে ব্যবহার করছে। তাতে এসব এলাকার সাধারণ মানুষ হাঁপানি, সর্দি-কাশির মত অসুখে ভুগছে বলে আলাপকালে জানান বহু ভুক্তভোগী মানুষ।
স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন বলা হয়েছে, মশক নিধনে বাসা-বাড়িতে যে কয়েল বা স্প্রে ব্যবহার করা হয়, তাতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে। একটা মশার কয়েল থেকে যে পরিমাণ ধোঁয়া বের হয় তা একশটা সিগারেটের সমান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন মশার কয়েলে থাকে অ্যালোট্রিন নামে এক ধরনের রাসায়নিক উপাদান। এর সাথে ফেনল ও ক্রেসল নামে দুই ধরনের উপাদান ব্যবহার করা হয়। এই দুটিও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। যদিও বিভিন্ন কয়েল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের দাবি, মানব দেহের জন্য সহনীয় পর্যায়ে এ উপাদান ব্যবহার করা হয়। কয়েল তৈরিতে ব্যবহৃত উপাদান এতই সু², যা সহজেই শ্বাসনালী ও ফুসফুসের বায়ু থলির মধ্যে পৌঁছে সেখানে জমা হয়। এর ফলে নানা ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া মশক নিধনে কয়েল ও স্প্রে ব্যবহারের কারণে ব্যয় বাড়ছে সাধারণ মানুষের।
