রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি পেয়েছে মিয়ানমার থেকে ফের। ২৬ ডিসেম্বর সোমবার ভোরে নাফ নদের হ্নীলা, দমদমিয়া ও শাহপরীরদ্বীপ পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা বোঝাই ৩৭ টি নৌকা মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি। তাদেরকে রবিবার সন্ধ্যায় নাফনদের পাশ্ববর্তী হ্নীলা এলাকা খোলা মাঠ হতে আটক করা হয়। এখানে ৩৪৫ জন রোহিঙ্গা নারী পুরুষ ও শিশু ছিলো বলে জানিয়েছে বিজিবি।

গত রবিবার ভোরে টেকনাফ সীমান্ত অনুপ্রবেশ করেছে শত শত রোহিঙ্গা নারী পুরুষ ও শিশু। এর মধ্যে রবিবার ভোরে টেকনাফ সীমান্তের ৩টি পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে রোহিঙ্গা বোঝাই ৩৪ টি নৌকা এবং ঘুমধুম সীমান্তের শূন্য রেখায় মোট ৩৩ জন মিয়ানমার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিহত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিবি। রবিবার ভোরে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা এলাকায় ষ্টেশনের উত্তরাংশের খোলা মাঠে আশ্রয় নিয়েছিলো প্রায় ৫ শতাধিক অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা। সকাল থেকে এ সব রোহিঙ্গারা পলিথিন মুড়িয়ে থাকার ব্যবস্থা করে। এ খবর পেয়ে বিজিবি সেখানে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩৪৫ জনকে আটক করেছে। আটক এসব রোহিঙ্গাদেরকে রবিবার রাত হতে সোমবার ভোরে নাফনদের ৩টি পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয় বলে নিশ্চিত করেছে বিজিবি ২ ব্যাটলিয়ান উপ-অধিনায়ক মেজর আবু রাসেল সিদ্দিকী ।

এদিকে টেকনাফের হ্নীলায় অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা খোলা মাঠে বসতি গড়ার চেষ্টা করলে উপজেলা প্রশাসন, বিজিবি ও হ্নীলা ইউপি যৌথ অভিযান চালিয়ে অনুপ্রবেশকারী প্রায় ৩৫৬ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে। এসময় এক নারী সন্তান প্রসব করার ঘটনায় জনমনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। ২৫ ডিসেম্বর ভোররাত হতে রঙ্গিখালী, নাটমোরাপাড়া, জালিয়াপাড়া, হ্নীলা পূর্ব ফুলের ডেইল, হোয়াব্রাং সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা উপজেলার হ্নীলা বাসষ্টেশনের উত্তর পার্শ্বের খোলা মাঠে ৬/৭শ রোহিঙ্গা বসতি গড়ার চেষ্টা করে। সংবাদ পেয়ে হ্নীলা বিওপি ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার নজরুল ইসলাম বিশেষ টহল দল, হ্নীলা ইউপি সচিব হাকিম উদ্দিন পাহাড়ী গ্রাম পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিস্থিতি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলে টেকনাফ ২বিজিবি ব্যাটালিয়নের উপাধিনায়ক মেজর আবু রাসেল ছিদ্দিকী ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ শফিউল আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় প্রশাসনের তৎপরতা দেখে কৌশলে রোহিঙ্গা পুরুষেরা পালিয়ে গেলেও নারী-শিশুরা রয়ে যায়। বিজিবি জওয়ানেরা ৩শ ৫৬জন নারী-শিশুকে জড়ো করে স্বদেশ ফেরতের সিদ্বান্ত নেয়। এমতাবস্থায় জড়ো করা রোহিঙ্গাদের মধ্যে মিয়ানমারের বুড়া সিকদারপাড়ার আবুল আলমের স্ত্রী খুরশিদা সন্তান প্রসব করে। বিজিবি জওয়ানেরা প্রসূতিকে উন্নত চিকিৎসা সহায়তার জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করে।

রাত ৭টারদিকে বিজিবি এসব অবৈধ বসতি উচ্ছেদ করে এবং জড়ো করা রোহিঙ্গা নারী-শিশুদের স্বদেশ প্রেরণ করে। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অনুপ্রবেশকারী পয়েন্ট সমুহে দালাল চক্রের সদস্যরা অনুপ্রবেশকারী এসব রোহিঙ্গাদের ঘরে বন্দি করে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের পর ছেড়ে দেয়। এরপর মাঝপথে এলাকার অপর চক্রের সদস্যরা এসব রোহিঙ্গাদের মালামাল হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি যুবতী মেয়েদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায় বলে ভূক্তভোগীরা জানায়। এসব দালাল ও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা রহস্যজনক কারণে আইনের আওতায় না আসায় জনমনে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

অপরদিকে স্থানীয় কতিপয় সুবিধাভোগী চক্র রোহিঙ্গাদের প্রকাশ্যে আর্থিক অনুদান বা সহায়তা দেওয়ার কারণে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছেনা। এই চক্রটির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না থাকায় সহায়তার প্রলোভনে পড়ে সড়ক ও বাজারের পার্শ্বে স্থাপনা তৈরীতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। যেহেতু বাংলাদেশ তাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে সে কারণেই তাদের নির্দিষ্ট স্থানে রাত যাপনের ব্যবস্থা করার দাবী উঠছে। তারা নির্দিষ্ট গন্ডির বাইরে গেলে সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধির পাশাপাশি আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতির আশংকা দেখা দিয়েছে। সুতরাং সীমান্ত এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের সংঘবদ্ধ করে সীমিত গন্ডির ভেতরে রাখা স্থানীয় জনসাধারণের মুখ্য দাবীতে পরিণত হয়েছে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031