নিউমার্কেট নগরীর ব্যস্ততম মোড় । এ মোড়ে যানজট কমাতে ছোট বাসের (রেইনজার ও তরী) জন্য আলাদা লেন করে দেয় নগর পুলিশ। কিন্তু এই লেনই এখন ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আলাদা লেনে গাড়ি থামা নিষেধ থাকলেও দিব্যি সেখানেই যাত্রী তুলতে দাঁড়িয়ে থাকছে গাড়িগুলো। আর সন্ধ্যার পর লেন চলে যায় ভ্রাম্যমাণ হকারদের দখলে।

পুলিশের নানা চেস্টার পরও গাড়ি চালক ও হকারদের অভ্যাস না বদলায় যানজট পরিস্থিতির কোনো উন্নতিই হচ্ছে না। দুর্ভোগ লেগেই আছে পথচারীর।

নগরীর নিউমার্কেট ছাড়াও জিইসি ও বহদ্দারহাট মোড়ের চিত্রও একই। এই দুই মোড়ে হকারসহ রিকশা চালকদের পর্যন্ত দাড়াতে দিচ্ছে না পুলিশ। কিন্তু রেঞ্জার থেকে বাস-মিনিবাস চালক ও হকারদের অভ্যাস যেন বদলাচ্ছেই না।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে দেখা যায়, নিউমার্কেট মোড়ে বিপণিবিতানের সামনে সড়কের আলাদা লেনে পরপর দাঁড়িয়ে আছে তিনটি ছোট বাস। এসব বাসের সহকারীরা যাত্রীদের ডাকাডাকিতে ব্যস্ত। অথচ পাশের সাইনবোর্ডে লেখা, পার্কিং নিষেধ। যানবাহন দাঁড় করাবেন না।

দায়িত্বরত বিপণিবিতানের নিরাপত্তাকর্মীরা বাঁশি বাজিয়ে গাড়িগুলো সরে যাওয়ার জন্য তাগাদা দিলেও এসব কানেই তুলছেন না বাসের চালকেরা। এভাবে প্রায় ২০-৩০ মিনিট পর একেকটি বাস লেন ছেড়ে যায়। এর মধ্যে চলে আসে অন্য বাস। এতে মোড়ে লেগে থাকছে ভজঘট।

সড়কে রিকশা কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশা থাকছে লেনের বাইরে। তবুও সড়কের অর্ধেকের বেশি অংশ জুড়ে দাড়িয়ে থাকে যানবাহন। ফলে যানজট লেগেই থাকছে। এই যানজট ছড়িয়ে পড়েছে আমতল, দোস্ত বিল্ডিং ও স্টেশন সড়ক এলাকা পর্যন্ত।

কথা হয় বিপণিবিতান থেকে কেনাকাটা করে বের হওয়া নগরের কাপাসগোলা এলাকার বাসিন্দা হাফিজুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, মার্কেট থেকে বের হয়ে ১০ মিনিট ধরে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আছি। কোনো গাড়িতেই উঠতে পারছি না। গাড়ির জটের কারণে কোনোভাবেই সড়কে পা ফেলা যাচ্ছে না।

নিউমার্কেট মোড়ের নতুন টাকা বিক্রেতা মফিজ বলেন, সকাল থেকে মোড়ে গাড়ির লাইন। বিকেল থেকে বসে হকাররা। মার্কেটেও কোনো লোক আসতে পারে না। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা দুর্ভোগে পড়ে।

বিপণিবিতানের নিরাপত্তাকর্মী সামশুল আলম বলেন, পুলিশকে টাকা দিয়ে হকাররা লেনের ভেতরে বসেন। তখন গাড়ি চলাচল করতে পারে না। গাড়িগুলো সরতে বলা হলেও চালকেরা শোনে না। তা ছাড়া মোড়ে ট্রাফিক পুলিশও থাকে না সব সময়।

বিপণিবিতানে ঢুকতেই দক্ষিণ পাশের প্রবেশমুখ সংলগ্ন বনলতা ফাস্টফুডের দোকানদার এম এ হাসান জানান, লেন করার ফলে মার্কেটের প্রবেশমুখে গাড়িজট লেগে থাকে, যা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে।

বিপণিবিতান মার্চেন্টস ওয়েলফেয়ার কমিটির সাধারণ স¤পাদক সৈয়দ খুরশিদ আলম বলেন, মার্কেটটি জিরো পয়েন্টে অবস্থিত হওয়ায় বিভিন্ন রুটের বাস, সিএনজিচালিত আটোরিকশা, রেইনজার, তরী, টে¤েপাসহ প্রায়ই গাড়ি এখানে এসে থামে।

তিনি বলেন, যানজট কমাতে মার্কেটের সামনে গাড়ি চলাচলের রাস্তার ওপর নতুন করে লেন স্থাপন করা হয়েছে ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে। কিন্তু লেনের ভেতর সারিবদ্ধভাবে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। এতে যানজট আরও বেড়েছে। আর লেনের ভেতর বিকেল থেকে বসেন হকাররা। এতে মার্কেটে আসা ক্রেতারা ভোগান্তিতে পড়েন। লেন তুলে দিতে নগর পুলিশ কমিশনারকে লিখিতভাবে জানালেও কিছুই হচ্ছে না।

জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) বর্তমানে ট্রাফিকেরও দায়িত্বপ্রাপ্ত মাসুদ উল হাসান বলেন, যানজট নিরসনের জন্য আলাদা লেনটি করা হয়েছে। তবে লেনে যাতে গাড়ি দাঁড়িয়ে না থাকে, সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আর কোনো অবস্থাতেই লেনের ভেতর হকারদের বসতে দেওয়া হবে না।

একইভাবে নগরীর বহদ্দারহাট ও জিইসির মোড়েও গাড়ি থেমে না থাকা এবং হকার যাতে বসতে না পারে সে ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031