এটা এখন রীতিমতো নিয়মে পরিণত হয়েছে। পরীক্ষা হবে অথচ প্রশ্ন ফাঁস হবে না- এটা কি করে সম্ভব? নাহ্‌! কল্পনাও করা যায় না। প্রশ্ন পাওয়াটাও খুব সহজ। পরীক্ষার কয়েক ঘণ্টা আগেই ফেসবুকে পাওয়া যাবে প্রশ্ন। অথবা আপনার ভাইবারে ম্যাসেঞ্জারে কেউ তা পাঠিয়ে দিতে পারে। কখনো এ প্রশ্ন মিলবে, কখনো তা মিলবে না। ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্ন পরীক্ষায় পুরোপুরি মিলে গেলে কোথাও কোনো বিকার দেখবেন না। কর্তাব্যক্তিরা এ ধ্বংসের প্রবণতা বন্ধে কোনো আগ্রহই দেখাবেন না। তারা ইনিয়ে-বিনিয়ে বলবেন কোনো প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। তাদের আত্মবিশ্বাস প্রবল। তাদের ধারণা একমাত্র তারাই শিক্ষার্থীদের ভালো চান। কেবল তারাই বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে বিশ্বমানে পৌঁছে দিচ্ছেন। নিজেদের কোনো ত্রুটি তারা দেখতে পান না। প্রশ্ন ফাঁসের খবরকে মনে করেন গুজব। তাদের আগ্রহ থাকে কথিত গুজব কারা ছড়ায় তাদের নিয়ে। এবারকার এসএসসি পরীক্ষার কথাই ধরুন না কেন। অন্তত তিনটি বিষয়ের প্রশ্ন পরীক্ষার আগেই পাওয়া গিয়েছিল। গণিতের প্রশ্ন ফাঁসের পর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, ‘তদন্ত হবে।’ এ তদন্তের ফল আমরা আদৌ কোনো দিন জানতে পারবো কিনা তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।
কোনো কোনো পর্যবেক্ষক অবশ্য বলছেন, সবকিছুর পেছনেই কর্তাব্যক্তিরা যুক্তি দেখাতে পারঙ্গম। পরীক্ষার প্রশ্ন যে ফাঁস হয় এর পেছনেও হয়তো কোনো যুক্তি আছে। হয়তো কোনো মঙ্গল তারা দেখতে পান। যে কারণে দিনের পর দিন চলে আসা এই বিকার বন্ধে তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। প্রশ্ন  ফাঁসের ‘শত উপকার’ নামে কোনো বইও হয়তো তারা একদিন লিখতে পারেন। যদিও মানুষের ভাবের সঙ্গে মূর্তি অনেক সময় মিলে না। দিনের পর দিন যে ভাবমূর্তি গড়ে তোলা হয়, যেকোনো সময় তা খসে পড়তে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রশ্ন ফাঁসের মহামারি পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকেই বিপর্যস্ত করে তুলেছে। তৈরি করছে অবিশ্বাসী, দুর্নীতিপ্রবণ এক শ্রেণির মানুষ। এর জন্য অভিভাবকদের দায়ও অবশ্য কম নয়। পরীক্ষার আগের রাতে সন্তানের প্রস্তুতিতে সহায়তা না করে অনেক অভিভাবকই ছুটতে থাকেন প্রশ্নের পেছনে। এর মাধ্যমে তিনি নিজ সন্তানকে উৎসাহিত করেন দুর্নীতিতে। এমনিতেই বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নানা সমালোচনা রয়েছে। পরীক্ষায় পাসের হারের রেকর্ডের নেপথ্যে তেলেসমাতি রয়েছে বলে অনেকেই বলে থাকেন। শিক্ষার্থীদের বেশি নাম্বার দেয়ার জন্য বহুক্ষেত্রেই পরীক্ষকদের ওপর চাপ প্রয়োগের কথা শোনা যায়।
সময়ের সবচেয়ে বড় গোনাহ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কথা প্রশ্ন ফাঁস। অথচ উল্টো মনে হচ্ছে, প্রশ্ন ফাঁস কোনো গোনাহ নয়। গোনাহ হচ্ছে এই প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে কথা বলা। প্রশ্ন ফাঁসের অভিশপ্ত পাপ থেকে এ জাতিকে রক্ষায় উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন এখনই। প্রয়োজন সেসব কালপ্রিটদের আইনের আওতায় আনা, যারা প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত। কিন্তু এই পাপ প্রতিরোধে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।
কোমলমতি শিশুদের পরীক্ষা থেকে শুরু করে চাকরি পরীক্ষা- কোথায় ফাঁস হচ্ছে না প্রশ্ন। এই মহামারি এখনই ঠেকানো না গেলে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে সব অর্জন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031