প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশকে ‘বড় সমস্যা’ উল্লেখ করে এর সমাধানে ভূমিকা রাখতে ইন্দোনেশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন । জাকার্তা সফররত বাংলাদেশের সরকার প্রধান আজ ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ আহ্বান জানান। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর জোট ইন্ডিয়ান ওশান রিম এসোসিয়েশন (আইওআরএ)’র ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জাকার্তায় অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনের সাইড লাইনে ওই বৈঠক হয়। কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে প্রায় ৩২ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। এছাড়া আরও ৩ লাখ অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিক বাংলাদেশে অস্থায়ী আশ্রয়ে রয়েছে। সম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত মিয়ানমারের রাখাইনে রাজ্যে বর্মী বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে প্রায় ১লাখ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। অভিযোগ আছে, ওই অভিযানে কয়েক ’শ রোহিঙ্গাকে হত্যা করাসহ গ্রামের পর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। বহু নারীকে গণধর্ষণ করা এবং ছোট ছোট শিশুকে জীবন্ত অবস্থায় আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছে। জাতিসংঘসহ মানবাধিকার সংবেদনশীল রাষ্ট্র ও সংস্থাগুলো গুরুতর ওই অভিযোগগুলোর বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানিয়ে রোহিঙ্গাদের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি প্রতিনিয়ত আহ্বান জানিয়ে আসছে। রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে ইন্দোনেশিয়াসহ মুসলিম বিশ্বের গভীর উদ্বেগ রয়েছে। রাখাইনে বর্মী বাহিসীর অভিযান চলাকালে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী অং সান সুচির ডাকে ইয়াংগুনে আসিয়ান জোটের এক বিশেষ বৈঠকে অংশ নেন ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী রেতনো এলপি মারসুদি। ওই বৈঠক শেষে তিনি বাংলাদেশ সফর করে জাকার্তায় ফিরেন। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বাংলাদেশের সরকার প্রধানের বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সেই সফরের বিষয়টি দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকে আলোচনায় এসেছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা একটা বড় সমস্যা। এটা সমাধান করা প্রয়োজন। মিয়ানমারের জনগণ- রোহিঙ্গারা, যারা বাংলাদেশে আছেন, তাদের নিজ দেশে ফেরৎ পাঠানোর প্রক্রিয়ায় ইন্দোনেশিয়া যেন একটা রোল প্লে করে (ভূমিকা রাখে) এ জন্য দেশটির নেতৃত্বের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে ইন্দোনেশিয়া থেকে বাংলাদেশের এলএনজি আমদানি করার বিষয়ও আলোচনা হয়েছে জানিয়ে  পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ইন্দোনেশিয়া এলএনজি উৎপাদন ও রপ্তানি করে। এ ব্যাপারে দু’দেশের মধ্যে কোনো সহযোগিতা হতে পারে কি-না তা নিয়ে তাদের (প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট) মধ্যে আলোচনা হয়েছে। শহীদুল হক জানান, এলএনজি রপ্তানির বিষয়ে ইন্দোনেশিয়া ইতোমধ্যেই সমঝোতা সইয়ের প্রস্তাব দিয়েছে যেটা এখন আলোচনার পর্যায়ে আছে। এর আগে বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে ২৫০টি বগি কেনা হয়েছে। সচিব বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেছেন, রেলওয়েতে ইন্দোনেশিয়ার অগ্রগতি অনেক। বাংলাদেশের রেলওয়ের উন্নয়নে তারা অবদান রাখতে চায়। সচিব বলেন, আলোচনার এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের অগ্রগতির বিষয়টি তুলে ধরেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ৭০টি দেশে বাংলাদেশ ওষুধ রপ্তানি করে। এ ব্যাপারে ইন্দোনেশিয়া উৎসাহ প্রকাশ করেছে। তারা দেখতে চান দুই দেশের ওষুধ শিল্পের মধ্যে কোনো সহযোগিতা করা যায় কি না? বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিপ্রন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রেসিডেন্ট আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন এবং জানিয়েছে তার সফর নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী দুই মাসের মধ্যে মন্ত্রী পর্যায়ের একটি টিম ঢাকায় পাঠাবেন। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে শেখ হাসিনার ভূমিকার ‘ভূয়সী প্রশংসা’ করেন জানিয়ে সচিব বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে দুই দেশের সম্পর্কে একটা নতুন ডাইমেনশন হতে পারে বলে মনে করেন তারা। উল্লেখ্য, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট ছাড়াও শীর্ষ সম্মেলনের সাইড লাইনে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার সঙ্গে বাংলাদেশের সরকার প্রধানের বৈঠক হয়েছে। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত, জাপান ও ভারতের তিন প্রতিমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করেছেন। সেই সব সাক্ষাৎ-বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম এফেয়ার্স ইউনিটের প্রধান (সচিব পদমর্যাদা) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব:) মো. খোরশেদ আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031