১ লাখ ইয়াবাসহ কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের হাতে ঢাকায় আটক হওয়া জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি নেজাম উদ্দিনকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। সেখানে বেরিয়ে আসছে অজানা অনেক তথ্য।

শনিবার সন্ধ্যা থেকে তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিটিটিসির এসআই শাহীনুল ইসলাম। এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গেন্ডারিয়ার স্বামীবাগ এলাকা থেকে নেজাম ও তার সহযোগী শ্রী শীপক মল্লিক ওরফে বুরংকে (৪৫) আটক হন।

শুক্রবার গভীর রাতে এই দু’জনসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে সিটিটিসি। অন্য আসামিরা হল : ইউসুফ (৩৭) এবং রানা (৩২)। এসআই শাহীনুল ইসলাম জানান, শনিবার নেজাম এবং বুরংকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রিমান্ডের প্রথম দিনে নেজাম উদ্দীন জানান, আগে তিনি ফেনসিডিল ব্যবসা করতেন। ২০০২-০৩ সালে জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক স¤পাদক হওয়ার পর তিনি ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। তার নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেটের সদস্যরা টেকনাফ-মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা এনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে। উদ্ধারকৃত প্রাইভেট কারটিও তারা ইয়াবা বিক্রির টাকায় কেনা।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহীনুল ইসলাম জানান, নেজাম একজন পেশাদার ইয়াবা ব্যবসায়ী। ইয়াবা ব্যবসাকে নির্বঘœ করতেই নেজাম ছদ্মবেশে ভালো মানুষ সেজেছেন। তিনি কক্সবাজার পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর মনজুমন নাহার মনজুর ছেলে। পর্দার আড়ালে নির্বিঘেœ ইয়াবা ব্যবসা চালাতে তিনি ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন। কেউ যাতে সন্দেহ করতে না পারে সে জন্য সবার সঙ্গে ভালো আচরণের পাশাপাশি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও আদায় করতেন। কৌশলে বাগিয়ে নিয়েছিলেন কক্সবাজার যুবদল সহসভাপতির পদটিও। গত উপজেলা নির্বাচনে তিনি চশমা প্রতীকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতাও করেছেন। প্রথমে ফেনসিডিল পরে ইয়াবা ব্যবসা করে বহু টাকার মালিক বনে গেছেন। ইয়াবা ব্যবসা করে গাড়ি কেনার কথা তিনি নিজেই পুলিশকে জানিয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গেÐারিয়া থেকে গ্রেফতার নেজাম উদ্দীনের (৩৮) কথাই বলছিলাম। তিনি এখন সাত দিনের পুলিশ রিমান্ডে। প্রথমদিন রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে এসব কথা বলেছেন।

এদিকে ইয়াবাসহ নেজাম উদ্দীনের আটকের খবরটি ছড়িয়ে পড়লে ‘টক অব দ্য কক্সবাজার’-এ পরিণত হয়েছে। সবারই প্রশ্ন- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি, অমায়িক, বন্ধু ও কর্মীবান্ধব লোকটি এমন কাজ করতে পারেন? এটি নিয়ে সর্বত্রই আলোচনা। গত উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে অংশ নেন তিনি। বছর দুয়েক আগে তিনি নিরিবিলি গ্রæপের মালিকানাধীন হোটেল নিরিবিলির নিচ তলায় ‘ক্যান টুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস’ নামে একটি এজেন্সি চালু করেন। এ অফিসে কক্সবাজার সদরের ঝিলংজার ইউপির সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান যুবদল নেতা গিয়াস উদ্দিন জিকু এবং টেকনাফের ইউনূছসহ আরও বেশ কয়েকজন নিয়মিত বসতেন।

স্থানীয় যুবদলের একাধিক নেতা জানান, ছাত্রদলে থাকাকালীন সময় থেকেই মাদক বিকিকিনিতে জড়িত ছিলেন নেজাম। জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক স¤পাদক হওয়ার পর মাদক বিকিকিনির সাম্রাজ্যে বাড়ান তিনি। অত্যন্ত সতর্কতার মাধ্যমে তিনি মাদক সরবরাহ এবং টাকার লেনদেন করতেন। নেজাম গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর তার সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যরা গা ঢাকা দিয়েছে।

এদিকে নেজামের আটকের বিষয়টি যড়যন্ত্র হতে পারে উল্লেখ করে মা মনজুমন নাহার মনজু বলেন, আমার ছেলে এসবের সঙ্গে কখনও জড়িত ছিল না। তার আচার-ব্যবহার আপনারা (সাংবাদিকরা) দেখেছেন। এটি কারও ষড়যন্ত্র হতে পারে। জেলা যুবদলের সভাপতি ছৈয়দ আহমদ উজ্জ্বল বলেন, এটি কল্পনারও অতীত। আমরা খুবই বিব্রত। এরপরও খোঁজ খবর নিচ্ছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031