জারে ভরা সেই পুকুর বা নদীর দুষিত পানি মিনারেল ওয়াটার হিসেবে নির্দ্বিধায় পান করা হচ্ছে। আর পুকুর বা নদীর পানি কেউ পান করেন না দুষিত বলে।

জারে ভরে পুকুর ও নদীর দুষিত পানি মিনারেল ওয়াটার হিসেবে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন দোকানে বিক্রী করা হচ্ছে এমন এক প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালানো হয়েছে সম্প্রতি।

চট্টলা ড্রিংকিং ওয়াটার নামে ওই প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রামের শহরতলী সীতাকুন্ড উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের দোয়াজিপাড়া এলাকায় অবস্থিত।

মিনারেল ওয়াটারের নামে পুকুরের দুষিত পানি জারে ভরে বিক্রীর খবর পেয়ে ভ্রাম্যমান আদালত গঠন করে অভিযান চালান সীতাকুন্ডের সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) মো. রুহুল আমিন।

অভিযানে প্রমাণ পাওয়ায় ভোক্তা সংরক্ষণ আইনে ওই ড্রিংকিং ওয়াটার প্রতিষ্ঠানের মালিক ইয়াহিয়া নিজামীকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও কারাখানাটি সিলগালা করে দেন তিনি।

ভ্রাম্যমান আদালত সূত্র জানায়, শুধু সীতাকুন্ডের এই প্রতিষ্ঠানে নয়, চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে মিনারেল ওয়াটারের নাম জারে ভরে পুকুর ও নদী-নালার দুষিত পানি বিক্রী করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।

আর এ পানি পান করে মানবদেহে যক্ষা, জন্ডিস, আমাশয়, ডায়রিয়াসহ নানারকম পানিবাহিত মারাতœক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সংকটাপন্ন হয়ে মৃত্যুমুখে পাতিত হচ্ছে মানুষ। বিশেষ করে শিশু-কিশোররা পড়ছে মারাতœক ঝুঁকিতে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু চিকিৎসক হাবিবুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, শিশুরা পানি চাইলে মা-বাবারা বিশুদ্ধ মনে করে আগে প্রিয় শিশুটির মুখে তুলে দেন মিনারেল বা বোতলজাত পানি। কিন্তু সেটা কি আসলে বিশুদ্ধ? তা জানে না মা-বাবাদের অধিকাংশই।

সরল বিশ্বাসে মিনারেল বা বোতলজাত পানি দেন শিশুকে। নিজেরাও পান করেন। আর তা যদি বিশুদ্ধ না হয়। পুকুর বা নদীর দুষিত পানি হয় তাতে প্রথমেই ক্ষতি হবে কিডনির। এরপর আক্রান্ত হবে শরীরের সব মুল্যবান অংশ। যক্ষা, জন্ডিস, আমাশয়, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে শরীর হবে নিস্তেজ ও নিস্ক্রীয় হয়ে পড়বে। অতএব, যা খান জেনে-শুনে-বুঝে খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

জানতে চাইলে তিনি বলেন, পানিতে এমনিতেই থাকে কলিফর্ম জীবাণু। থাকে আর্সেনিকের মতো বিষ। যার সহনীয় মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিশুদ্ধ করতে হয়। যা করতে ক্যামিষ্টের প্রয়োজন। অথচ নগরীর অলিগলিতে গড়ে উঠা এমন শত শত মিনারেল ওয়াটার কারখানার কোনটিতে একজন ক্যামিষ্ট নেই। নেই বিশুদ্ধ করণ ব্যবস্থাও।

তিনি আরও বলেন, পুকুরের পানিতে সাধারণত কাপড়-চোপড়-থালা-বাসন এমনকি আরও অনেক কিছুই ধোয়া হয়। যা থেকে মারাত্মক জীবাণু ছড়ায়। নদীর পানি তো আরও মারাতœক। যা বিশুদ্ধ না করেই বিক্রী করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টলা ড্রিংকিং ওয়াটার নামে এ কারখানায় বিএসটিআই এর কোন অনুমোদন ছাড়াই জারের গায়ে স্টিকার লাগিয়ে মিনারেল ওয়াটার নামে বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে। কোন কেমিস্ট ও পিউরিফাই ছাড়াই পাশের পুকুরের পানি জারে ভরিয়ে গত তিন বছর থেকে তারা ব্যবসা করছিল। যা স¤পূর্ণ অস্বাস্থ্যকর ও বেআইনি।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাব্বির রহমান সানি বলেন, ভেজাল দ্রব্যের মধ্যে পােিনর ভেজাল সবচেয়ে মারাত্মক । পানি ব্যবসায় জড়িত নগরীর সবকটি কারখানার তালিকা তৈরী করা হবে। একে একে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করে এসব কারখানা বন্ধ করা হবে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031