জঙ্গিবিরোধী অভিযানে প্রাণ হারলেন ছয়জন পুলিশ সদস্য প্রথমে রাজধানীর হলি আর্টিজান বেকারি, এরপর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া, এরপর সিলেটের দক্ষিণ সুরমা। । তাদের মধ্যে আছেন যেমন বাহিনীর সবচেয়ে নিচের পদ কনস্টেবল, তেমনি আছেন সরকারি কর্মকমিশন বা বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে যোগ দেয়া বড় কর্মকর্তাও।

নানা সময় পুলিশ সমালোচিত হয়েছে বাহিনীটির কিছু সদস্যের অন্যায় আচরণে। নানা কারণে বাহিনীটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে, বলছেন শীর্ষ কর্মকর্তারা। তবে আবার কেউ কেউ বীর হয়েছেন অন্যের জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন দিয়ে।

পুলিশ সদস্যরা প্রায়ই আক্ষেপ করেন, গণমাধ্যমে তাদের সদস্যদের অপকর্মের খবর যেভাবে ফলাও করে আসে, তাদের আত্মত্যাগের খবর সেভাবে আসে না।

পুলিশের উপমহাপরিদর্শক বা ডিআইজি (ক্রাইম) হুমায়ুন কবির ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেয়ার শপথ নিয়েই আমরা চাকরিতে এসেছি। এই দায়িত্ব আমাদের বাহিনীর সবার। আমরা অতীতেও যেমন এই কাজ করেছি, বর্তমানে করছি, ভবিষ্যতেও করব। জীবন দিয়ে হলেও মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব আমরা।’

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে খেতে যাওয়া মানুষদের জিম্মি করার খবর পেয়ে প্রস্তুতি ছাড়াই ছুটে গিয়েছিলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল করিম এবং বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাউদ্দিন খান। কিন্তু জঙ্গিদের গুলি আর গ্রেনেড ঝাঁঝরা করে দেয় তাদের বুক। লুটিয়ে পড়েন তারা মাটিতে। অন্য সহকর্মীরা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়েও বাঁচাতে পারেননি তাদের।

এই বিয়োগব্যথার রেশ কাটতে না কাটতেই ৭ জুলাই আবার প্রাণ দেন দুই পুলিশ সদস্য। কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে নাশকতা করতে ঢুকার চেষ্টা করছিল দুই জঙ্গি। কিন্তু তল্লাশি চৌকিতে আটকে দেয়া হয় তাদের। সেখানেই অতর্কিত হামলা হয় পুলিশের ওপর। কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় কনস্টেবল জহুরুল হক ও আনসারুল ইসলামকে। আহত হন আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য।

পুলিশের এই সদস্যরা নিজেদের জীবন দিয়ে বাঁচিয়ে দেন অগুনতি প্রাণ। জঙ্গিরা শোলাকিয়া ময়দানে লাখো মানুষের জমায়েতে কোনো বিস্ফোরণ ঘটালে কী হতো, তা কল্পনারও অতীত।

এরপর রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে আর্টিজান হামলাকারীদের সন্দেহভাজন প্রশিক্ষক সাবেক সেনা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামকে ধরতে গিয়েও রক্তাক্ত হন রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ শহীদ আলম ও পরিদর্শক (তদন্ত) শাহীন ফকির।

এসব অভিজ্ঞতার পর পুলিশ আগের চেয়ে সতর্ক হয়েছে, অভিযানের আগে প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে ভালো। এ কারণে মিরপুরের কল্যাণপুর, নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়া, রাজধানীর আজিমপুর, আশকোনা, গাজীপুরের লেবুবাগান, পাতারটেক, টাঙ্গাইলের বসুন্ধরারটেক, আশকোনার বসুন্ধরারটেক, চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড আস্তানায় অভিযানে পুলিশের কেউ আহত হননি।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সহেলী ফেরদৌস ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘হলি আর্টিজানে হামলাটা হয়েছে অতর্কিত। এটা আমাদের কল্পনায়ও ছিল না। প্রস্তুতিও ছিল না। তবে শোলাকিয়া ও সিলেটে যেটা ঘটেছে সেটা নিছক দুর্ঘটনা। এর বেশি কিছু নয়।’

তবে আবার পুলিশ রক্তাক্ত হয়েছে সিলেটে। পুলিশ দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ীর ‘আতিয়া মহল’ নামের বহুতল বাড়িতে জঙ্গি আছে জানতে পেরে সেটি ঘেরাও করে শুক্রবার রাতে। তবে আস্তানায় সন্দেহভাজন জঙ্গিদের যে শক্তিমত্তার পরিচয় তারা পেয়েছে, তাতে নিজেরা অভিযানে যেতে চায়নি। এরপর পাঠানো হয় সেনা কমান্ডোদের।

ওই বাড়িতে অভিযান চলাকালে সেখান থেকে অদূরে জনবহুল একটি এলাকায় অতর্কিত জঙ্গি হামলা হয়। হঠাৎ বোমার বিস্ফোরণ কেড়ে নেয় ছয়জনের প্রাণ, তাদের দুই জন পুলিশ কর্মকর্তা। তারা হলেন জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম। এবং কোর্ট ইনস্পেক্টর চৌধুরী আবু কায়সার।

পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (অপরাধ) হুমায়ুন কবির ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘জঙ্গিরা যত বড় শক্তিশালী হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলবে। তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।’

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031