আজ ১ থেকে ৫ এপ্রিল পাঁচদিন বাংলাদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত হবে আইপিইউ সম্মেলন।‘সমাজের বৈষম্য নিরসনের মাধ্যমে সবার মর্যাদা ও মঙ্গল সাধন’ স্লোগানকে প্রতিপাদ্য ধরে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ১৩৬তম সম্মেলন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন এক ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
আইপিইউভুক্ত ১৭১টি দেশের মধ্যে ১৩৫টি দেশের মন্ত্রী–এমপিসহ দুই হাজারেরও বেশি অতিথি অংশগ্রহণ করবেন সম্মেলনে। এছাড়াও সম্মেলনের সংবাদ সংগ্রহ করতে বিভিন্ন দেশের প্রায় দুই শতাধিক সাংবাদিক উপস্থিত থাকবেন। সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মিডিয়া সেন্টারে আইপিইউ সম্মেলন বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার ও সিপিএ চেয়ারপারসন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আইপিইউ প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী, আইপিইউ মহাসচিব মার্টিন চুংগুং। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করে আইপিইউ এর মিডিয়া রিলেশন জিন মিলিগান। সংবাদ সম্মেলনে আইপিইউ মহাসচিব বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ উত্থানের পেছনে অসমতা ও বিচারহীনতা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন। শুধু সামরিক শক্তি দিয়ে এটিকে মোকাবেলা করা ঠিক হবে না বলেও মনে করেন সংগঠনের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা।
আইপিইউ এর সেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন চুংগুং বলেন, সমাজে অসাম্য ও বিচারহীনতার কারণে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের সৃষ্টি হচ্ছে। এই অসাম্য তৈরি হয় রাজনীতি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে। আমাদের এ সম্মেলনের উদ্দেশ্য হল তা দূর করা। আইপিইউ সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, শুধু সামরিকভাবে জঙ্গিবাদকে মোকাবিলা করা ঠিক হবে না। জঙ্গিবাদের মূল কারণগুলো কি? অর্থাৎ শুধু আমরা জঙ্গিবাদের দিকে তাকাবো না, এটা কেন হচ্ছে সেই জায়গায় আমরা দৃষ্টি দিতে চাই। সেখানে সরকারের পাশাপাশি সংসদের কী ভূমিকা থাকবে, সংসদ সদস্যদের ভূমিকা কী হবে সেটা নিয়ে আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে আমরা আলোচনা করব। সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, এ ধরনের একটি আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ গ্লোবাল পার্লামেন্টারি কমিটির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছে।
এই এসেম্বলির মাধ্যমে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ড করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে আমাদের কূটনৈতিক বিষয়টি আরও জোরালো হবে। এসেম্বলিতে অংশ নিতে বিভিন্ন দেশের ৪৫ জন স্পিকার ও ৩৭ জন ডেপুটি স্পিকার, ১৩৬টি দেশের সংসদীয় ডেলিগেশন, ৪২টি সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি, বিভিন্ন দেশের ৬৮৭ জন সংসদ সদস্য এবং ২০৯ জন নারী সদস্যসহ মোট ১ হাজার ৩৪৮ জন এ পর্যন্ত অংশগ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন।
সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে নিয়ে গঠিত সবচেয়ে বড় সংস্থা আইপিইউ–ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন। এ সংস্থাটি সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশগুলোর গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে। বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে এ সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে। আজ জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এ সম্মেলন উদ্বোধন করবেন। জাতীয় সংসদ সচিবালয় ও আইপিইউ যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করছে। উদ্বোধনীর পর প্রতিদিন কয়েকটি সেশনে ভাগ হয়ে অধিবেশন চলবে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই সম্মেলনের বিভিন্ন সেশন অনুষ্ঠিত হবে। বিভিন্ন দেশের সংসদীয় বিধিবিধান, এমপি–মন্ত্রীদের আচার–আচরণ, সংসদীয় কার্যবিধি, এমপিদের ক্ষমতা, নারীর ক্ষমতায়ন. মানবাধিকার, রাষ্ট্রহীন মানুষের অবস্থা, দুর্দশা ও বিশ্ব মানুষের সংহতি ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা এবং করণীয় বিষয়ে আলোকপাত করা হবে।
আইপিইউ সংশ্লিষ্টরা বলেন, আইপিইউ সম্মেলন বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। সম্মেলন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পারলে বিশ্ব সভায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে। বিশ্ববাসী নতুন করে বাংলাদেশকে চিনবে। সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের সংসদের ভালো প্র্যাকটিসগুলো নিয়ে বিভিন্ন সেশন অনুষ্ঠিত হবে।
এ বছরে সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, ‘রিএ্যাড্রেসিং ইনইকুয়ালিটি: ডেলিভারিং অন ডিগনিটি এন্ড ওয়েল বিং ফর অল’। সম্মেলনে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এবং শিশু অধিকার কর্মী কৈলাস সারথি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বিদেশী এমপিদের নিরাপত্তা ও বিভিন্ন সেশন নিয়ে জাতীয় সংসদ সচিবালয় থেকে ২৫টি উপ–কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ সম্মেলনের পুরো নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে ডিএমপি। পোশাকধারী ৮ হাজার পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা হবে। সম্মেলনকে সামনে রেখে রাজধানীর তারকা মানের আবাসিক হোটেল বুকিং দিয়েছে জাতীয় সংসদ সচিবালয় ও আইপিইউ যৌথ আয়োজক কর্তৃপক্ষ। সম্মেলনে যোগ দিতে গত ২২ মার্চ থেকে অতিথিরা আসতে শুরু করেছেন। সম্মেলনের সার্বিক তথ্যাবলী সংবলিত মিডিয়া সেন্টার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছে। এতে ২০০ সাংবাদিকের বসার ব্যবস্থা ও প্রেস কনফারেন্স করার সুবিধা থাকছে।
গতকাল সরেজমিনে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে গিয়ে দেখা যায়, আইপিইউ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে জাতীয় সংসদ ভবন, সংসদ এলাকা, বিআইসিসি এলাকায় দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা করা হয়েছে। সংসদ এলাকা সেজেছে অপরূপ সাজে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও ইতিহাসের ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ থেকে শুরু করে স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত বাংলাদেশের ঐতিহাসিক অর্জন, সাফল্য ও সম্ভাবনাগুলোকে বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করা হবে। এই উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো ফুটিয়ে তোলা হবে লেজার শো’র মাধ্যমে। এছাড়াও সংসদের ভেতরের রাস্তায় স্থাপন করা হয়েছে নানা রঙের মরিচবাতি শোভিত বৃক্ষ। সংসদ ভবনের নতুন সাজ দেখে থমকে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন পথচারীরা।