আমরা এবারও তিস্তার পানি পাইনি । আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভারতে গেছেন, অভাবনীয় সমাদর পেয়েছেন। নিয়ম ভেঙে ওদের প্রধানমন্ত্রী নিজে বিমানবন্দরে এসে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে একেবারে আত্মীয়ের মতো আচরণ পেয়েছেন। এই এতকিছু পাওয়ার মধ্যে অনেক কিছু আমরা আসলে চাইওনি, বলা যায়, না চাইতেই পেয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যা চেয়েছেন, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ যা চেয়েছে, সেই তিস্তার পানিই পাইনি। পাইনি মানে, পানি নিয়ে যে চুক্তিটি হওয়ার কথা, সেটা স্বাক্ষরিত হয়নি। ভারত সরকার চেয়েছে, কিন্তু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তির কারণে হয়নি।
তিস্তার পানি চুক্তি নিয়ে কথা বলার আগে বরং তিস্তা নদীটি নিয়ে কিছু বলে নিই। এ নদীটি আমার বেশ পরিচিত। তিস্তার বাংলাদেশের অংশ নয়, বরং পশ্চিমবঙ্গের অংশই আমি বহুবার দেখেছি। বর্ষায় এর প্রমত্তা রূপ যেমন দেখেছি, তেমনি খরার সময় এর মুমূর্ষু রূপও দেখেছি। আমার একমাত্র মেয়ে দার্জিলিং পড়ত। মেয়ের জন্যই আমাকে সেখানে নিয়মিত যেতে হতো। বুড়িমারি-চ্যাংরাবান্ধা হয়ে যেতাম। চ্যাংরাবান্ধা থেকে জলপাইগুড়ি হয়ে শিলিগুড়ি যেতে তিস্তার ওপর দিয়ে যেতে হতো। প্রশস্ত নদী, তাই বেশ লম্বা একটা সেতু। কিন্তু প্রায় সময়ই দেখতাম নদীতে তেমন পানি নেই। শুকনো মৌসুমে যেন হেঁটেই পার হওয়া যাবে। আবার সেই শুকনো মৌসুমেই দার্জিলিং জেলার কালিম্পং এলাকায় দেখেছি খরস্রোতা তিস্তাকে। বর্ষায় যতটা প্রলয়ঙ্কর থাকে, ততটা হয়ত নয়, তারপরও বেশ খরস্রোতা। কালিম্পং থেকে মাত্র ৪০-৪৫ কিলোমিটার দূরত্বে আসতে না আসতেই নদী শুকিয়ে গেল কি করে? এ প্রশ্নের জবাব পেতে দেরি হয়নি। জানলাম, শিলিগুড়ির লাগোয়া জলপাইগুড়ি জেলার গজলডোবা এলাকায় একটি ব্যারেজ তৈরি করা হয়েছে। তিস্তা থেকে খাল কেটে প্রয়োজনীয় পানি সেই ব্যারেজে নিয়ে নেওয়া হয়। এই ব্যারেজ দিয়ে তিস্তার পানি মহানন্দায় ফেলা হয়, তারপর সেখান থেকে নেওয়া হয় গঙ্গায়। ব্যারেজ থেকে জল বিদ্যুৎও উৎপাদন করা হয়। ফলে শুকনো মৌসুমে ব্যারেজের দক্ষিণে নদীর প্রবাহ বলতে আর কিছু থাকে না। ব্যারেজের দক্ষিণেও পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু এলাকা আছে, সেই এলাকারই একটি সেতু দিয়ে আমাকে নিয়মিত যেতে হতো শিলিগুড়িতে। আর তারও পরে আছে বাংলাদেশ। তাই শুকনোর সময় ব্যারেজের দক্ষিণ থেকে শুরু করে পুরো বাংলাদেশের তিস্তার প্রবাহে পানি বলতে কিছু আর অবশিষ্ট থাকে না। ভারতের সিকিম থেকে উৎপন্ন এই তিস্তা নদী ৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর ১২৯ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে, বাকিটা ভারতে। এখানে আরও একটা হিসাব বিবেচনায় নেওয়া জরুরি। সেটা হচ্ছে- তিস্তার পারে বাস করছে কোন দেশের কত লোক। এ হিসাবে দেখা গেছে তিস্তার পারে বাংলাদেশের ২ কোটি ১০ লাখ মানুষ বাস করে, যারা সরাসরি এই নদীর পানির ওপর নির্ভর করেই জীবন নির্বাহ করে। আর বিপরীত দিকে এই নদীর ওপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা পশ্চিমবঙ্গে ৮০ লাখ এবং সিকিমে মাত্র ৫ লাখ।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি বাংলাদেশকে তিস্তার পানি দিতে রাজি নন। কথাগুলো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমনভাবে বলছেন যেন আমরা তার কাছে কোনো অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। কিন্তু বিষয়টা তো আসলে সেরকম কিছু নয়। এটা কোনো দান খয়রাত বা দয়া প্রদর্শনের বিষয় নয়। ভারত উজানে বাঁধ তৈরি করেছে, তিস্তার পানিকে ঘুরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অন্য জায়গায়। এই যে বাঁধ বানিয়ে নদীর গতিপথকে ঘুরিয়ে দেওয়া, এটা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কাজেই ভাটির দেশ হিসেবে এই পানি চাওয়াটা আসলে আমাদের অধিকার ফেরত চাওয়া মাত্র।
তিস্তার পানির ওপর আমাদের দাবি যৌক্তিক কি না, কতটুকু পানি শুকনো মৌসুমে আমাদের পাওয়া উচিত, আমাদের সেই দাবিকে ভারত মানবে কি মানবে না, সেসব ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের দেখার বিষয়। এ নিয়ে কোনো চুক্তি হলেও কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গেই হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের কেউ নন, উনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মাত্র। কিন্তু বাস্তবে তার আপত্তির কারণেই আটকে আছে তিস্তার পানি চুক্তি। ভারত সরকার আমাদের সঙ্গে এই চুক্তিটি করতে চায়। একাধিকবার তারা উদ্যোগ পর্যন্ত নিয়েছে। কিন্তু মমতার বাধার কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। তিনি বলছেন, তার রাজ্যের কৃষককে বঞ্চিত করে তার পক্ষে তিস্তার পানি দেওয়া সম্ভব নয়।
রাজ্যের কৃষকের স্বার্থের কথা বললেও ব্যারেজের কারণে খোদ পশ্চিমবঙ্গেরই অনেক কৃষক কিন্তু তিস্তার পানি থেকে বঞ্চিতই হচ্ছে। ওই যে বললাম, ব্যারেজে দক্ষিণ দিকের নদীর দুরবস্থার কথা, সেখানকার মানুষের অবস্থাও কিন্তু অনেকটা বাংলাদেশের মানুষের মতোই। তাদের কথা কেন মমতার চিন্তায় আসছে না? আসলে কৃষকের স্বার্থের চিন্তা-টিন্তা কিছু নয়, মমতার এই একগুঁয়েমির পিছনে রয়েছে রাজনীতি। সে প্রসঙ্গে একটু পরে আসছি।
আচ্ছা, মমতার কথা যদি সত্যই ধরে নেই, এই যে পশ্চিমবঙ্গের কৃষককে তিস্তার পানি থেকে বঞ্চিত করার কথা বারবার তিনি বলছেন, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কি তা জানে না? তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত রাখলে পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের ব্যাপক উপকার হবেÑ সেটা কেবল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বোঝেন, আর কেন্দ্রীয় সরকার পুরো বিষয়টাকে উপেক্ষা করে, তা তো হতে পারে না। কৃষকের প্রতি কি কোনোই দয়ামায়া নেই কেন্দ্রীয় সরকারের? তাহলে কেন কেন্দ্রীয় সরকার উৎসাহী এই চুক্তি করতে? আসলে ঠিক বিরোধটা এখানে জাতীয় স্বার্থ এবং আঞ্চলিক রাজনীতির।
এ কথা মনে করার কোনোই কারণ নেই যে, নিছক দয়াপরবশ হয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি করতে চাইছে। কেন্দ্রে যখন কংগ্রেস ছিল, তখনও চেয়েছে; আবার এখন যে বিজেপি আছে, তারাও চাইছে। কেন্দ্রের এই চাওয়ার মধ্যে দয়া-দাক্ষিণ্যের কিছু নেই। রাজনীতিতে এসব চলে না। যা হয় তার পুরোটাই হিসাব-নিকাশ। তবে ব্যক্তি ভেদে সেই হিসাব-নিকাশটা হয়ত ভিন্ন ভিন্ন হয়, কেউ ভুল হিসাব করে, কেউবা সঠিক হিসাব। স্বস্তির বিষয় হচ্ছে তিস্তা নিয়ে কংগ্রেস কিংবা বিজেপিÑ উভয়ের হিসাব একই রকম।
হিসাবটা কি? হিসাব একটাই, আর তা হলো আয়তনে ছোট হলেও ভারতের জন্য আমরা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র। আমরা যদি ভারতে মিত্র হই তাহলে তাদের জন্য যতটা স্বস্তির, আর যদি মিত্র না হই তাহলে সেটা তার চেয়েও বেশি অস্বস্তির। সে রকমটি হলে কি হয়, তা বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে তারা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। এই ভূখণ্ডে দশ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়েছে। তখন প্রায়ই বলা হতো যে, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রশিক্ষণ হয়। তাহলে সেই অস্ত্র কি ওই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্যই এসেছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়নি কখনোই। এমনকি সেই দশ ট্রাক অস্ত্র কোথা থেকে এলো, কি জন্য এলো, কোথায় যাবেÑ সেসব নিয়ে একটি কথাও উচ্চারণ করেনি সেই সময়ের সরকার। ভারত সব সময়ই চেয়েছে বাংলাদেশে এমন একটি সরকার থাক যারা কি না তাদের জন্য সার্বক্ষণিক অস্বস্তির কারণ হবে না। আওয়ামী লীগ সরকার তেমনই একটা সরকার।
কিন্তু প্রেম তো আর একতরফা হয় না। আর হলেও সেটা বেশিদিন টিকে থাকে না। আমি আপনার কাছে দিনের পর দিন একটা কিছু চাইতে থাকব, আর আপনি নানা অজুহাতে তা থেকে আমাকে বঞ্চিত করতে থাকবেন, আর তারপরও ভাববেনÑ আপনাকে ভালো না বেসে আমি যাব কোথায়, এরকম আসলে সব সময় হয় না। পৃথিবীতে কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়, কেউ কারও জন্য অপরিহার্যও নয়। বন্ধুও পরিবর্তনশীল। একতরফা প্রেমের দ্রুতই ভাটা আসে। সেরকম কিছুরই আশঙ্কা কি দেখছে না এখন ভারত?
আমি বলবো গত ৯ বছরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় চরিত্রের অনেকটাই পরিবর্তন ঘটেছে। নিজের মেরুদণ্ডটির ওপর আস্থা বেড়েছে। এই পরিবর্তনটা প্রথম দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পকে কেন্দ্র করে। বিশ্বব্যাংক, আমেরিকার মতো বড় শক্তিকে পর্যন্ত ভয় না পাওয়ার মতো মনোবল দেখা গেছে। এই যে আত্মবিশ্বাস, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সাহস, এগুলো ইদানীং যেন অনেকটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের। নিজের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে বন্ধুকে খুশি করার দিন বোধকরি এখন আর নেই। আর সে কারণেই সম্ভবত ভারত সফরের আগে আর এক বৃহৎ শক্তি চীনের সঙ্গে সম্পর্কটা একটু ঝালিয়ে নিয়ে গেছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। চীনের প্রেসিডেন্ট এখানে সফরে এসেছেন, তাদের ব্যবসায়ীরা এসেছে, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে, প্রচুর চুক্তি হয়েছে। আর সবশেষ চীন থেকে বাংলাদেশ কিনেছে একটা সাবমেরিন। এ সবকিছুই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকে ভিন্ন একটা মাত্রা দিয়েছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হলে ভারতকে তিস্তা চুক্তি করতে হবে। আজ, কাল বা পরশু, তিস্তা চুক্তি হতেই হবে। প্রথমত, এটা আমাদের অধিকার। ব্যারেজ করে ওরা প্রকারান্তরে তিস্তাকে মেরেই ফেলছে। এভাবে প্রাকৃতিক একটা নদীকে মেরে ফেলার অধিকার কারও নেই। দ্বিতীয়ত, এই চুক্তিটি না হলে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ঢিলা হতে থাকবে, অনিবার্যভাবেই তখন অন্য কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ক্রমশ নিবিড় হতে থাকবে। সেরকম কিছু হলে সেটা ভারতের জন্য সুখকর নাও হতে পারে।
তিস্তা পানি চুক্তি নিয়ে মমতা ও বিজেপির রাজনীতির বিষয়ে এখন আসি। প্রথমে মমতার কথা বলি। আমার বিবেচনায়, তিস্তা চুক্তিতে নিজের সম্মতি দেওয়া না দেওয়া নিয়ে মমতা আসলে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে একধরনের দরকষাকষি করছেন। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে তিনি প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন যে, তিস্তার পানি বাংলাদেশকে দেওয়ার মাধ্যমে বিজেপি সরকার পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করছে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এই তত্ত্বটি একবার মেনে নিলে আসন্ন নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের সুবিধাই হবে।
তবে এই মতের বিরোধীপক্ষও আছে। পশ্চিমবঙ্গের কোনো কোনো বুদ্ধিজীবী মনে করেন, বিজেপি সরকারই মমতাকে উস্কে দিচ্ছে চুক্তিতে বাগড়া দিতে। কারণ মুখে মুখে যা কিছুই বলুক না কেন, আসলে বিজেপি সরকারই চাচ্ছে না চুক্তিটা হোক। এরকমই একজন দেবেশ রায়, কিছুদিন আগে আনন্দবাজার পত্রিকায় লিখেন, ‘বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী যদি এই চুক্তি হয় তা হলে বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে শেখ হাসিনার সমর্থন অনেক নিশ্চিত হবে বলে অনেকে মনে করেন। যদি তা না হয়, তা হলে হাসিনাবিরোধী সাম্প্রদায়িক রাজনীতি সুবিধা পাবে। বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তরিক বন্ধুত্বের সম্পর্ক ভারতের (পশ্চিমবঙ্গের) পক্ষে খুব, খুব, খুবই দরকার। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের ওপর আক্রমণ কেন্দ্রীভূত করেছে। তাদের রাজনৈতিক কৌশল অনুযায়ী, বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গের সীমাও যত বেশি দুর্বৃত্ত নিয়ন্ত্রিত হবে, পশ্চিমবঙ্গে তাদের সাম্প্রদায়িক ভাগাভাগি করা তত সুবিধাজনক হবে। তিস্তা চুক্তি না হলে নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপির সবচেয়ে সুবিধা। চুক্তি হলে শেখ হাসিনার পক্ষে সীমান্তকে দুর্বৃত্তমুক্ত করা সহজতর হবে।’
আলোচ্য দুটি হিসাবই বেশ জটিল। তবে ভারতের রাজনীতি, বিজেপি কিংবা তৃণমূল কংগ্রেসের, তা যা-ই হোক না কেন, সেসব নিয়ে বাংলাদেশ খুব একটা পরোয়া করে না। শেখ হাসিনা তার বক্তব্য ইতিমধ্যে বেশ শক্তভাবেই প্রকাশ করেছেন। ভারত সফরে যাওয়ার দিন কলকাতার প্রভাবশালী দৈনিক আনন্দবাজারে শেখ হাসিনার একটা লেখা প্রকাশিত হয়েছে। শেখ হাসিনা সেখানে স্পষ্টভাবেই বলেছেন, ‘আমি আশাবাদী মানুষ। ভারতের জনগণ ও নেতৃত্বের উপর আস্থা রাখতে চাই। সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে, তবু এই সীমিত সম্পদই আমরা দু দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য ব্যবহার করতে পারি। আমরা একই সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের উত্তরসূরি। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আমাদের অনেক কিছুই মেলে। লালন, রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, জীবনানন্দ আমাদের উভয়েরই। বাংলা ভাষা আমাদের উভয়েরই। পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা নদীর জল পায় দু দেশই। সুন্দরবন উভয়েরই গর্ব। এ নিয়ে আমাদের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তবে একটি নদীর জলবণ্টন নিয়ে একমত হতে বাধা কোথায়?’
এত কিছুর পরও মমতা ছাড়েননি তার একগুঁয়েমি। আর বিপরীত দিকে শেখ হাসিনাও ছাড়েননি মমতাকে খোঁচা দিতে। কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার দিকে আরও একবার তাকানো যেতে পারে। গত ১১ এপ্রিল আনন্দবাজার পত্রিকায় ‘তিস্তা চুক্তিতে মমতাকে কটাক্ষ হাসিনার’ শীর্ষক সংবাদে লেখা হয়Ñ “আজ ‘ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে ঢাকার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন হাসিনা। মমতার প্রস্তাব কার্যত উড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কিছুটা ব্যঙ্গাত্মক স্বরে হিন্দিতে বলেছেন, ‘পতা নেহি দিদিমণি ক্যায়া করেগা! পানি মাঙ্গা, লেকিন ইলেকট্রিসিটি মিলা। কোই বাত নেহি! কুছ তো মিলা।’ প্রধানমন্ত্রীর মধ্যাহ্নভোজের আসরে মমতা পশ্চিমবঙ্গের উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ বাংলাদেশকে দেওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন। মোদি তাতে সম্মতি জানিয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গই টেনে আনেন হাসিনা।”
নিজের অধিকার আদায়ে শেখ হাসিনার এই যে দৃঢ় অবস্থান, তার সুফল শিগগিরই এদেশের মানুষ পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
মাসুদ কামাল : লেখক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
